বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে বিদেশ সফরের প্রস্তাব বাতিল
১৫ ডিসেম্বর ২০২০ ০৮:২৬
ঢাকা: গোপালগঞ্জে বাঁধ নির্মাণের একটি প্রকল্পে বিদেশ সফরের প্রস্তাব বাতিল করেছে পরিকল্পনা কমিশন। বৈদেশিক প্রশিক্ষণের নামে দুই কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছিল পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। পরবর্তী সময়ে কমিশনের ভেটোর কারণে এই বরাদ্দ বাদ দিয়ে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) পুনর্গঠন করা হয়েছে। পশ্চিম গোপালগঞ্জ সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা (দ্বিতীয় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পে ঘটেছে এমন ঘটনা।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে আগামী জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। এরই মধ্যে প্রকল্পটির প্রক্রিয়াকরণ শেষ হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে প্রকল্পটি দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য জাকির হোসেন আকন্দ সারাবাংলাকে বলেন, বর্তমান করোনা মহামারি পরিস্থিতি বিবেচনায় বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বাতিল করতে হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে সবসময়ই চাহিদা দেওয়া হয়। আমরা বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখি এর প্রয়োজন আছে কি না। প্রয়োজন না থাকলে সেক্ষেত্রে প্রকল্পের কোনো অঙ্গ বাতিলের সুপারিশ করা হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে জাকির হোসেন বলেন, এটি একটি ছোট প্রকল্প। এর আওতায় বৈদেশিক প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা কম মনে হয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো প্রকল্প এলাকায় আগাম বন্যা প্রতিরোধ ও লবণাক্ত পানি প্রবেশরোধের মাধ্যমে ধান উৎপাদন বাড়ানো। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ, নিষ্কাশন ও সেচ সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন বাড়ানো এবং খাল পুনঃখননের মাটি দিয়ে ক্যানাল ডাইক মেরামতের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নও করা হবে এই প্রকল্পে। মাদারীপুর বিল রুট (এমবিআর) চ্যানেল ও মধুমতি নদীর ভাঙনপ্রবণ এলাকায় নদী তীর সংরক্ষণের মাধ্যমে বসতবাড়ি, কৃষি জমিসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা ও সম্পদও রক্ষা করা যাবে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পটি গোপালগঞ্জ জেলার সদর উপজেলা, কাশিয়ানি উপজেলা ও মুকসুদপুর উপজেলায় অবস্থিত। প্রকল্পের গ্রস এরিয়া ৬২ হাজার ২০৭ হেক্টর এবং নেট এরিয়া ৪৫ হাজার ৯৯৬ হেক্টর। প্রকল্প এলাকা মধুমতি নদী, মাদারীপুর বিল রুট চ্যানেল এবং কুমার নদের অববাহিকায় অবস্থিত। প্রকল্পের দক্ষিণ ও পশ্চিশে মধুমতি নদী, পূর্ব ও উত্তরে মাদারীপুর বিল রুট চ্যানেল এবং কুমার নদ। এই নদীগুলো অসংখ্য ছোট নদী ও খাল দ্বারা সংযুক্ত। গড়াই নদী বড়দিয়া নামক স্থানে দুটি স্রোতধারায় বিভক্ত হয়ে একটি নবগঙ্গা এবং অন্যটি মধুমতি নদী নামে পরিচিত। শুষ্ক মৌসুমে নদীতে উজানের প্রবাহ না থাকায় ভাটি থেকে জোয়ারের সময় লবণাক্ত পানি প্রকল্প এলাকায় প্রবেশ করে। কুমার নদ ফরিদপুরের কাছাকাছি পদ্মা নদীর শাখা নদী হিসাবে উৎপত্তি হয়ে ফরিদপুর সদর, নগরকান্দা, ভাঙ্গা ও মুকসুদপুর উপজেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সিন্দিয়াঘাট নামক স্থানে মাদারীপুর বিল রুট চ্যানেলের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। মাদারীপুর বিল রুট চ্যানেলটি নৌচলাচল সুবিধার জন্য ব্রিটিশ শাসনামলে খনন করা হয়, যা আড়িয়াল খাঁ নদ এবং মধুমতি নদীকে সংযুক্ত করেছে।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রকল্প এলাকাটির নিম্নাঞ্চল হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে পানিতে ডুবে থাকে। ফলে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয়। শুস্ক মৌসুমে পানির অভাবে সেচ কাজ ব্যাহত হয়। অন্যদিকে এমবিআর চ্যানেল দিয়ে লবণাক্ত পানি প্রবেশের ফলে উঠতি ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার নিষ্কাশন ব্যবস্থা কার্যকর না থাকার কারণে প্রকল্প এলাকায় সময়মত ইরি-বোরো ধান রোপণ বিলম্বিত হয়। ক্যানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট এজেন্সির (সিআইডিএ) অর্থায়নে ৯০ দশকের গোড়ার দিকে প্রকল্প এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ সুবিধা দেওয়ার জন্য সমীক্ষা করা হয়। এই সমীক্ষায় প্রকল্প এলাকাকে ছয়টি পোল্ডারে বিভক্ত করে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়। ছয়টি পোল্ডারের মধ্যে দু’টি পোল্ডারের আংশিক কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া ২০০৪ ও ২০০৭ সালে বন্যার ফলে বাঁধ ও অবকাঠামোগুলো আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রমের আওতায় ৩ দশমিক ১৭৫ কিলোমিটার নদী তীর সংরক্ষণ, ১০২ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার নদ খাল পুনঃখনন, দুই কিলোমিটার মুকসুদপুর বাওড় পুনঃখনন, একটি আবাসিক ভবন নির্মাণ এবং ১০ লাখ টাকার বনায়ন করা হবে।
গোপালগঞ্জে বাঁধ নির্মাণ পরিকল্পনা কমিশন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় বিদেশ সফরের প্রস্তাব