তাড়াশে করতোয়ার বুকে অতিথি পাখিদের ডানা ঝাপটা
১৫ ডিসেম্বর ২০২০ ০৮:৫৪
সিরাজগঞ্জ: শীতের হিমেল হাওয়া শুরুর সঙ্গে সঙ্গে দূর দেশ থেকে উড়ে এসেছে হাজারো অতিথি পাখি। নানান রঙের, নানান বর্ণের পাখিদের কলকাকলিতে মুখর সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ গ্রাম। অতিথিদের পাখিদের সাথে সাথে বেড়েছে পাখিপ্রেমী দর্শনার্থীদেরও। বিকালের নীল আকাশ কিংবা সন্ধ্যার লাল আলোয় এসব পাখিদের ডানা মেলে ছুটে চলা অপরূপ সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে করতোয়া নদীর বুকে। পাখিদের ডানা ঝাপটায় সৃষ্টি হয় সুরের মুর্ছনা।
স্থানীয়দের ধারণা, এখানে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা প্রায় ১০-১২ হাজার। এসব অতিথিদের রক্ষায় এবার বেশ তৎপর গ্রামবাসী। কোনো শিকারি যেন পাখিদের আঘাত করতে না পারে তাই নিজ দায়িত্বে পাহারা দিচ্ছেন তারা। পাখিদের আশ্রয়স্থল নিরাপদ করতে সহযোগিতা কামনা করেছেন স্থানীয় প্রশাসনের।
শাহজাদপুর থেকে অতিথি পাখি দেখতে আসা মাতুয়ারা ইসলাম স্বপ্না বলেন, এ বছর করতোয়া নদীতে অনেক পাখি পাখি এসেছে। পাখিগুলো দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে। প্রতি বছরই এই অতিথি পাখি দেখতে আসি।
স্থানীয় শরিফুল ইসলাম শরিফ বলেন, এখানে গাছপালা বেশি। এছাড়া বিস্তীর্ণ জলাশয় থাকায় পাখিরা নিরাপদ আশ্রয় মনে করছে। পাখিদের এই আগমন পুরা গ্রামের চেহারাই বদলে দিয়েছে।
তাড়াশ কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মর্জিনা ইসলাম বলেন, অতিথি পাখি শীতকালের সৌন্দর্য। যার উপস্থিতিতে প্রকৃতিতে আসে নতুন রূপ। নির্দিষ্ট সময়ের পর এই পাখিগুলো চলে যায়। অতিথি পাখি আমাদের ক্ষতি করে না। অথচ দেশের বিভিন্ন স্থানে এ পাখি শিকার করা হয়। জীবন বাঁচাতে এসে জীবন দিতে হয় ভিনদেশি পাখিদের।
জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করা সিরাজগঞ্জের দ্যা বার্ড সেফটি হাউজের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মামুন বিশ্বাস বলেন, এই মুহূর্তে জরুরি কাজ হচ্ছে অতিথি পাখিদের কোনোভাবে বিরক্ত না করা। এছাড়াও এই এলাকায় জনসচেতনতা বাড়াতে বিলবোর্ড, লিফলেট বিতরণ করা দরকার। আমরা এরই মধ্যে এ বিষয়ে উদ্যোগ
নিয়েছি।
এ প্রসঙ্গে রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আহম্মদ নিয়ামুর রহমান বলেন, প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বার্থে স্থানীয়দের পাশাপাশি প্রশাসনিক ভাবেও চলনবিল এলাকার পাখি রক্ষায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মেজবাউল করিম বলেন, পাখি প্রকৃতির অলংকার। এ অলংকার ধ্বংস করা মানে পরিবেশ ধ্বংস করা। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্য পাখির বিচরণক্ষেত্র মুক্তভাবে রক্ষা করতে হবে। আমি নিজে পাখির অভয়াশ্রম দেখতে যাবো। সেখানে জনগণকে সচেতন করা হবে। যেন কেউ পাখিদেরকে বিরক্ত ও শিকার না করে।