‘কোরিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি এখন সময়ের দাবি’
১৫ ডিসেম্বর ২০২০ ১৭:৪৬
ঢাকা: গত পাঁচ দশকে রিপাবলিক কোরিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক খুব শক্তিশালী অবস্থানে উন্নীত হয়েছে। শিক্ষা, বাণিজ্য, সংস্কৃতিসহ একাধিক খাতে দুদেশ ভালো সম্পর্ক গড়েছে। এই সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে এবং দুই দেশের উন্নয়নের স্বার্থে এখন মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) অথবা অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) করা সময়ের দাবি।
বাংলাদেশ-রিপাবলিক কোরিয়া দুই দেশর মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪৭ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত ভার্চুয়াল সেমিনারে বক্তারা মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) এমন মন্তব্য করেন।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকার কোরিয়া দূতাবাসের আয়োজনে এই সেমিনারে দুই দেশের রাষ্ট্রদূতসহ বিভিন্ন স্তরের সরকারি এবং বেসরকারি কর্মকর্তারা অংশ নেন।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সেমিনারে বলেন, ‘বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, কারিগরি শিক্ষাসহ দুই দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক বাড়াতে দুই দেশই একে অপরকে সহযোগিতা করছে। কোরিয়া হচ্ছে বাংলাদেশের উন্নয়ন খাতে প্রথম বন্ধু রাষ্ট্র, যারা বাংলাদেশে সবার আগে এক্সক্লুসিভ অর্থনৈতিক জোনে বিনিয়োগ করেছে। বাংলাদেশে বৃহৎ আকারের অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগের জন্য কোরিয়াকে স্বাগত জানাই। দুই দেশের মধ্যে বেসরকারি খাতের যে বিনিয়োগ, তা আসলেই প্রসংশনীয়।’
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘বাংলাদেশের বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ খাত, কোরিয়ার ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের জন্য আকর্ষর্ণীয় স্থান হতে পারে। কেন না বাংলাদেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বিরাজ করছে এবং সরকার বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে। সমুদ্র খাত, গাড়ি সংযোজনকরণ, টেকনোলজি, কারিগড়ি শিক্ষা খাতে কোরিয়া আরও বিনিয়োগ করতে পারে।’
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ’দুই দেশের উন্নয়নে এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ আরও বাড়াতে এফটিএ বা পিটিএ নিয়ে আমরা সামনের ফরেন অফিস কনসালটেশন বৈঠকে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।’
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ফেলো শহীদুল হক বলেন, ’গত ৪৭ বছরে দুই দেশের সম্পর্ক একটা বিশাল ইতিবাচক ফাইলফলক পাড় করেছে এবং নিজেদের মধ্যে আস্থা ও সহযোগিতার সম্পর্ক গড়েছে। এই সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে হলে এখন এফটিএ বা পিটিএ চুক্তি জরুরি হয়ে পড়েছে।’
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অধ্যাপক আব্দুল হান্নান চৌধুরী বলেন, ’ঢাকার বণিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, কোরিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ বছরে দেড় বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ মুদ্রা। এখানে কমবেশি ২০০ কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করছে। যার ৫০ ভাগই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করেছে। বাংলাদেশ আগামী ২০২৪ সালে স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উত্তীর্ণ হবে। এমন সময়ে কোরিয়ার টেকনোলজি জ্ঞান এবং কারিগরি শিক্ষা বাংলাদেশের জন্য খুব প্রয়োজন।’
কোরিয়ার ইয়াংউন গ্রুপের চেয়ারম্যান সুন কি হাক বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক শক্তিশালী গড়তে যে বাধা ছিল, সেগুলো আমরা উভয় দেশই অনেক আগেই মোকাবিলা করে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়তে সক্ষম হয়েছি। এই দেশের মানুষ খুব ভালো মনের এবং ধৈর্যশীল। এখন এই সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ এবং শক্তিশালী করতে পিটিএ বা এফটিএ চুক্তি জরুরি।’
কোরিয়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক সিন ডঙ উ বলেন, ‘এই অঞ্চলে বাংলাদেশ কোরিয়ার মূল পার্টনার। কোরিয়া বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ করতে চায়।’