Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্তির দিন আজ


১৬ ডিসেম্বর ২০২০ ০০:০১

ঢাকা: ‘স্বাধীনতা-হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে/ কে বাঁচিতে চায়/ দাসত্ব শৃঙ্খল বল কে পরিবে পায় হে/ কে পরিবে পায়’— হ্যাঁ, বাঙালি জাতির দাসত্বের শৃঙ্খলমুক্তির দিন আজ। ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস আজ। বাঙালি জাতির জীবনে সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল দিন।

দেশ ও দেশের বাইরে থাকা গর্বিত বাঙালি জাতি আজ বিপুল আনন্দ-উৎসব এবং একইসঙ্গে বেদনা নিয়ে দিনটি পালন করবে। দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য যেসব অকুতোভয় বীর সন্তান জীবন উৎসর্গ করেছেন, কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি পরম শ্রদ্ধায়-গভীর বেদনায় সেইসব মৃত্যুঞ্জয়ী বীর সন্তানদের স্মরণ করবে। বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) মরণথাবার মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুলেল শ্রদ্ধা জানাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী সকাল ৬টা ৩৪ মিনিটে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। সকাল ৯টায় আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাবে। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি সকাল সাড়ে ৮টায় জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের  নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল যাবে সাভার স্মৃতিসৌধে।

এ ছাড়া মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে— কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, জিয়ারত ও দোয়া-মাহফিল।

বিজ্ঞাপন

বিএনপিও একই ধরনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, জিয়ারত ও দোয়া-মাহফিলের কর্মসূচি রয়েছে তাদের।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণী দিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকারি ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, সংসদে বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বাঙালির স্বাধীনতা একদিনে অর্জিত হয়নি। স্বাধীনতার জন্য বাঙালিকে দীর্ঘ সংগ্রামদীপ্ত পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের পর দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে যে পাকিস্তান রাষ্ট্রের অভ্যুদয় হয়েছিল, সেখানেও বাঙালিদের ওপর নেমে এসেছিল পশ্চিম পাকিস্তানিদের শোষণ, নির্যাতন। প্রথম আঘাত এসেছিল মাতৃভাষার ওপর। ১৯৫২ সালে বুকের রক্তে রাজপথ রাঙিয়ে বাংলা মায়ের সন্তানেরা মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করে বিশ্বে এক অনন্য ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল।

ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে স্বাধিকার চেতনার স্ফুরণ ঘটেছিল, আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় কালক্রমে তা স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ নেয়। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার জন্য চূড়ান্ত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে তোলেন। তিনি ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রমনা রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) লাখো জনতার সামনে তার ঐতিহাসিক ভাষণে শত্রুদের মোকাবিলার জন্য যার কাছে যা আছে তা-ই নিয়ে সবাইকে প্রস্তুত থাকতে বলেন।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নিরস্ত্র, নিরপরাধ ঘুমন্ত বাঙালির ওপর। বর্বর হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছিল তারা। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর থেকে সেই রাতেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে তরা। তার আগেই তিনি বাঙালির ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার বার্তা দিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। সেই ঘোষণায় তিনি বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান।

দেশের বীর সন্তানেরা বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ সংগ্রামে আত্মনিবেদন করেন। দীর্ঘ ৯ মাস সংগ্রামের পর ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ, ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম ও সহায়-সম্পদের বিপুল ক্ষয়ক্ষতির ভেতর দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে বাঙালি।

আজ থেকে ৪৯ বছর আগে ১৯৭১ সালের এই দিনে রমনা রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ করেছিল হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী। পৃথিবীর মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের। লাল-সবুজ পতাকা ঊর্ধ্বে তুলে ধরে বিজয়ী বাঙালিরা। সেই পতাকা উঁচিয়ে চলছে প্রগতির পথে বাঙালির অভিযাত্রা।

একাত্তর জাতীয় দিবস বিজয় দিবস মুক্তিযুদ্ধ মুক্তির দিন শৃঙ্খলমুক্তির দিন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর