১৬ই ডিসেম্বর দেশ মুক্ত হলেও যুদ্ধ চলে কিশোরগঞ্জে
১৬ ডিসেম্বর ২০২০ ১২:০৫
ঢাকা: একাত্তরের ১৬ই ডিসেম্বর পাকবাহিনীর নির্যাতন থেকে দেশ মুক্ত হলেও কিশোরগঞ্জে মুক্তি মেলে ১৭ ডিসেম্বর। একাত্তরের ১৬ই ডিসেম্বরেও কিশোরগঞ্জের মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পাকবাহিনীর দোসর ও দালালদের মধ্যে তুমুল লড়াই হয়। তবে মুক্তিবাহিনীর দাপটের কারণে একাত্তরের ডিসেম্বরের শুরু থেকেই কিশোরগঞ্জের একাধিক অঞ্চল থেকে পাকবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়।
কিশোরগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার আলম খান (বয়স ৬৬ বছর) সারাবাংলা’র সঙ্গে আলাপকালে এই তথ্য জানান। কিশোরগঞ্জ সদরের অভিজাত পরিবারে জন্ম নেন মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার আলম খান। তার বাবার নাম বদরুদ্দিন খান। মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার আলম খান একাত্তরে কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী ছিলেন। কমান্ডার হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে কিশোরগঞ্জের যুদ্ধে অংশ নেন তিনি।
মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার আলম খান বলেন, ‘আমি কখনই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। কিন্তু আগে থেকেই রাজনৈতিক বক্তব্য শোনার অভ্যাস ছিল। আমাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষক মতিউর রহমানের মাধ্যমে আমি সরাসরি যুদ্ধে যুক্ত হই। তিনি আমাদের হাইস্কুল মাঠে সাবেক ইপিআর সদস্যদের মাধ্যমে ১৫০ জন শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। প্রশিক্ষণের পর প্রধান শিক্ষক মতিউর রহমান বলেছিলেন যে, এবার যাও, দেশের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়। দেশমুক্ত করেই আমার সঙ্গে দেখা করবা, তার আগে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলাসহ ভৈরব যুদ্ধে অংশ নিই। যুদ্ধের সময় আমি পাঁচবার ভাগ্যক্রমে পাকবাহিনীর হাত থেকে কোনো মতে বেঁচে গেছি। একবার আমাদের কমান্ডার কিশোরগঞ্জ সদর রেকি করার দায়িত্ব দিল। রেলস্টেশনের পাশেই এক একর জমিতে আমাদের বাড়ি। তার উত্তরে ডাক বাংলো আর মাঝে বিশাল মাঠ। এই জায়গার ৯০ শতাংশ অধিবাসিই ছিল বিহারী।’
মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার আলম খান বলেন, ‘রেকি করতে গিয়ে দেখি আমাদের বাসাটা যেন একটা কঙ্কাল। পুরো বাসাটা এমনভাবে ধ্বংষ করা হয়েছে যে দরজা-জানালাগুলোও খুলে নিয়ে গেছে। এমন সময় পাকবাহিনীর এক ক্যাপ্টেন সৈন্যসহ চলে এলে ধরা পরে যাই। সৈন্যরা প্রথমে তাদের গোসলের জন্য আমাকে দিয়ে চাপকলের পানি উঠাতে বলে। তারপর নারকেল গাছে উঠিয়ে ডাব পারায় এবং ডাবগুলো কেটে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু এসব কাজে আমার আগে থেকে কোনো দক্ষতা না থাকায় কয়েক দফা তাদের হাতে নির্য়াতনের শিকার হতে হয়। আমার শরীর থেকে তখন রক্ত ঝরছিল। পরে দৈবক্রমে স্থানীয় এক চাচার মাধ্যমে প্রাণ নিয়ে পালাই।’