Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিজয়ের দিনে মৌলবাদ প্রতিহতের শপথ


১৬ ডিসেম্বর ২০২০ ১৪:৪১

চট্টগ্রাম ব্যুরো: দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পথ বেয়ে নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানের দুই যুগের শাসনের অবসানের দিনটিকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে চট্টগ্রামের আপামর জনতা। যুদ্ধ শেষে বিজয়ের ৪৯ তম বার্ষিকীতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতা প্রতিহতের কথা জোরালোভাবে উচ্চারণ করেছেন রাজনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ।

বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) ভোরের আলো ফোটার পর থেকেই চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় সর্বস্তরের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তাদের মুখে বারবার উচ্চারিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখার শপথ।

বিজ্ঞাপন

মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরের আগমনের বার্তা দিয়ে প্রথম সূর্যোদয়ের পর চট্টগ্রাম নগরীর কোর্ট হিলে ৩১ বার তোপধ্বনি দেওয়া হয়। সকাল ৮টায় নগর পুলিশের একটি চৌকস দলের ‘গার্ড অব অনারের’ মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। বিজয় দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রামের সকল সরকারি, বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এছাড়া বর্ণিল আলোকসজ্জাও করা হয়েছে বিভিন্ন সরকারি ভবনে।

পুলিশ র‍্যাবের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বেলা ১২টা পর্যন্ত চলে শ্রদ্ধা জানানো। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এবার শহীদ মিনারে ভিড় কিছুটা কম ছিল। এরপরও বেলা গড়াতেই ফুলে ফুলে ভরে ওঠে শহীদ মিনার।

সকালে শহীদ বেদীতে প্রথম শ্রদ্ধা জানান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। এসময় সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার এ বি এম আজাদ, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াসসহ বিভিন্ন ব্যক্তি শ্রদ্ধা জানান।

বিজ্ঞাপন

ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। এসময় নগর কমিটির সহ-সভাপতি চসিকের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনও তাদের সঙ্গে ছিলেন।

সভাপতি শাহাদাত হোসেন, সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান এবং সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। এরপর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা জানানো হয়।

কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. শাহআলমের নেতৃত্বে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, চট্টগ্রাম জেলা শাখার নেতাকর্মীরা শহীদ মিনারে ‍ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রমৈত্রী, বোধন, প্রমা, উদীচী, খেলাঘরসহ বিভিন্ন সংগঠন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।

শ্রদ্ধা জানানো শেষে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ, কিন্তু ধর্মান্ধ নই। আমরা জাতির পিতার আদর্শে আমরা বলিয়ান। সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ এবং ধর্মের নামে রাজনৈতিক ভেদাভেদ দূরে ঠেলে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।’

 

সিপিবির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. শাহআলম বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী ভাবাদর্শের প্রভাব সমাজে ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছে। মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তি ভাষ্কর্য নিয়ে উদ্দেশ্যমূলক আস্ফালন শুরু করেছে। সমাজ, রাজনীতিতে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী বিভাজনের রাজনীতিকে আরো দৃঢ়মূল করছে। সরকার এদেরক নিয়ে ক্ষমতার খেলায় মেতে উঠেছে, এই রাষ্ট্রদ্রোহী শক্তিকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার অব্যাহত আছে। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না। এই মেরুকরণ অব্যাহত রেখে সরকার ও সরকার বহির্ভূত শাসকশ্রেণি ক্ষমতার রাজনীতি করছে। মানুষের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক দাবি, ভোট-ভাত, কাপড়, জমি ও কাজের লড়াইকে সামনে আসতে দিচ্ছে না, অবরুদ্ধ করে রাখছে। এই হলো দেশের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক হালচাল। এই কলুষিত রাজনীতিকে পরাভূত করাই হোক বিজয় দিবসের অঙ্গীকার।’

কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মহসীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার উপস্থিতি কিছুটা কম হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে স্কুল-কলেজ বন্ধ আছে। এ কারণে কম হতে পারে। তবে যারা এসেছেন, কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সবাই শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।’

এছাড়া বিজয় দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন পৃথক অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে।

এত প্রাণ বিসর্জনের নজির পৃথিবীতে নেই : অনুপম সেন

বিজয় দিবস উপলক্ষে একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ ও উপাচার্য ড. অনুপম সেনের নেতৃত্বে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নগরীর জিইসি মোড়ে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গনে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।

এসময় উপাচার্য ড. অনুপম সেন বলেন, ‘বাঙালিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী পরাধীন ছিল। শোষণে নিষ্পেষিত ছিল। এই শোষণ থেকে মুক্তির জন্য ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা ঘোষণা করেন। তারই পথ ধরে সূচিত হয় মুক্তিযুদ্ধ, অর্জিত হয় বিজয়। এই স্বাধীনতার জন্য ৩০ লক্ষ লোক প্রাণ দিয়েছে। স্বাধীনতার জন্য এত লোকের প্রাণ বিসর্জনের নজির পৃথিবীতে আর নেই। স্বাধীনতার জন্য এদেশের মানুষের ত্যাগ-তিতিক্ষার ইতিবৃত্ত নতুন প্রজন্মের জানা প্রয়োজন। তাহলে তাদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত হবে, দেশের স্বার্থে কাজ করতে তারা অনুপ্রাণিত হবে।’

এসময় উপস্থিত ছিলেন প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির ট্রেজারার এ কে এম তফজল হক, ইংরেজি বিভাগের প্রফেসর মোহীত উল আলম, ব্যবসা-শিক্ষা অনুষদের প্রফেসর অমল ভূষণ নাগ, প্রকৌশল ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর তৌফিক সাঈদ, ব্যবসা-শিক্ষা অনুষদের সহকারী ডিন এম. মঈনুল হক, গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইফতেখার মনির, আইন বিভাগের চেয়ারম্যান তানজিনা আলম চৌধুরী, তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান টুটন চন্দ্র মল্লিক, ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান সাদাত জামান খান, অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান ফারজানা ইয়াসমিন চৌধুরী। আরও উপস্থিত ছিলেন চীফ ইঞ্জিনিয়ার ও উপাচার্যের উপদেষ্টা মো. আবু তাহের, রেজিস্ট্রার খুরশিদুর রহমান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শেখ মুহাম্মদ ইব্রাহিম এবং ডেপুটি লাইব্রেরিয়ান কাউসার আলম।

সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে: ছাত্র ইউনিয়ন

সভাপতি অ্যানি সেন ও সাধারণ সম্পাদক ইমরান চৌধুরীর নেতৃত্বে ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলার নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে। এরপর নগরীর দারুল ফজল মার্কেটে সংগঠনের কার্যালয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় বক্তারা বলেন, ‘স্বাধীনতার ৪৯ বছর পরে এখন দেশবাসী অনুভব করছে কাঙ্ক্ষিত বিজয় এখনো বহুদূর। রাষ্ট্র পরিচালনায় দলীয় শাসন, ব্যক্তি শাসন এবং গোষ্ঠী শাসনের পালাবদলের প্রক্রিয়ায় এখন আপামর জনগণের হাতে পায়ে শিকল, মুখ বাকরুদ্ধ। বিজয়ের এত বছর পরও আমরা রাজাকারের সঠিক তালিকা দেখতে পাই না। মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা বাড়ে আর কমে। স্বাধীনতার ৪৯ বছর পরেও দেশে সাম্প্রদায়িক শক্তি রাজনীতি করে যাচ্ছে। বিজয় দিবসে আমরা দাবি জানাই দেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হোক এবং বাহাত্তরের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হোক।’

চট্টগ্রাম জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সাধারণ সম্পাদক শুভ বড়ুয়ার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ইমরান চৌধুরীর সঞ্চালনায় এতে মূল আলোচক ছিলেন শ্রমিক নেতা নুরুচ্ছাফা ভুঁইয়া। আরও বক্তব্য রাখেন সাংগঠনিক সম্পাদক টিকলু কুমার দে, সাংস্কৃতিক সম্পাদক নাদিয়া নূর প্রাপ্তি, কোতোয়ালি থানার কোষাধ্যক্ষ অয়ন সেনগুপ্ত, কোতোয়ালী থানার শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মো. নাবিল।

বিজয় দিবস শ্রদ্ধা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর