‘বাংলাদেশ-ভারতের পারস্পরিক নির্ভরতা আনন্দের সঙ্গে স্বীকৃতি দিই’
১৭ ডিসেম্বর ২০২০ ১৩:৪৬
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের অর্থনৈতিক ক্রমবর্ধমান পারস্পরিক নির্ভরতা আমরা আনন্দের সঙ্গে স্বীকৃতি দেই। আমি বিশ্বাস করি উভয় দেশ বিদ্যমান সহযোগিতামূলক ঐক্যমতের সুযোগ নিয়ে অর্থনীতিকে আরও সংহত করে বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক ভ্যালু চেইন আরও সমৃদ্ধ করতে পারে। আমাদের চলমান যোগাযোগগুলি এক্ষেত্রে অনুঘটক হিসাবে কাজ করতে পারে।
বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার গণভবন থেকে এবং নরেন্দ্র মোদী দিল্লিতে তার দপ্তর থেকে ভার্চুয়ালি এ বৈঠকে অংশ নেন।
এ অনুষ্ঠানে ৫৫ বছর পর নীলফামারীর চিলাহাটি সীমান্ত দিয়ে ভারতের সঙ্গে রেল যোগাযোগেরও উদ্বোধন হয়। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় ওই রেলপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আজ দীর্ঘ ৫৫ বছর পর আবারও চালু হলো নীলফামারীর চিলাহাটির সঙ্গে ভারতের হলদিবাড়ীর রেল রুট।
ভিডিও কনফারেন্সে এই রেল যোগাযোগের উদ্বোধন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে শেখ হাসিনা এবং নয়াদিল্লি থেকে নরেন্দ্র মোদী ভিডিও কনফারেন্সে এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন। চিলাহাটিতে উপস্থিত ছিলেন রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের আন্তরিক সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য ভারতীয় সরকার এবং ভারতের জনগণের প্রতি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, ‘আজকের দিনটি আমার জন্য একটি বিশেষ দিন। ১৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অধিনে তখনো আমার মা আমার ছোট বোন রেহানা, রাসেল, আমি এবং ছোট চার মাসের জয়; আমরা বন্দি ছিলাম। ভারতের কর্নেল অশোক তারা এসে ১৭ ডিসেম্বর আমাদেরকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কাছ থেকে মুক্ত করেন। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ মুক্ত হয় কিন্তু আমরা মুক্ত হয়েছিলাম ১৭ ডিসেম্বর। এজন্য সেই দিনটি স্মরণে কর্নেল অশোক তারার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। পাশাপাশি ভারতবাসী, ভারতে সেনাবাহিনীসহ মুক্তিবাহিনী সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, সেইদিন আমরা যারা মুক্ত হয়েছিলাম। শুধু রেহানা জয় এবং আমি; তিনজনেই বেঁচে আছি আর কেউ আজ বেঁচে নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু। ২০১৯ সালের অক্টোবরে দিল্লীর গ্র্যান্ড হাউজে আপনার সাথে আমার শেষ বৈঠক হয় এবং আপনার অপূর্ব আতিথেয়তা আমরা কৃতজ্ঞতা ভরে স্মরণ করছি। এরপর মাঝে মাঝে ভিডিও কনফারেন্সিং’এ কথা হয়েছে। তবে এখন কিছুই বর্তমান বিশ্বে পরিবর্তন হয়েছে। কারণ বর্তমান বিশ্বে এক মহাবিপর্যয়ের সম্মুখীন। মানবজাতির কিভাবে এই অজানা শত্রুর মোকাবেলা করে তার পরীক্ষার মুখামুখি। লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যাচ্ছে। জীবন জীবিকা বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়ছে। বিঘ্নিত হচ্ছে সমাজব্যবস্থা। কোভিড-১৯ মহামারির সবচেয়ে বড় বহিঃপ্রকাশ হল মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া।
এ বছরের গোড়ার দিকে ঢাকায় আপনাকে আমরা স্বাগত জানিয়েছিলাম। কিন্তু এই কোভিডের কারণে সেটা অপূর্ণ রয়ে গেছে। তবে এই ক্রান্তিকালিন সময়ে উভয় পক্ষ যেভাবে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা এগিয়ে নিয়েছে তা প্রশংসাযোগ্য।
ভারতে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় অনবদ্য ভূমিকার জন্য নরেন্দ্র মোুদ সরকারের প্রতিও অসংখ্য ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আপনার স্বাস্থ্য সেবা প্যাকেজগুলি ছাড়াও আত্মনির্ভর ভারত, এই উদ্যোগে প্রবর্তিত অর্থনৈতিক প্যাকেজগুলো প্রশংসনীয়। আমরা বিশ্বাস করি, আপনার গৃহীত নীতিমালার মাধ্যমে ভারত বৈশ্বিক অর্থনীতিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশেও আমরা এই মহামারিতে অর্থনীতি ও সামাজিক প্রভাব প্রশমন করতে ১৪ দশমিক এক লাখ বিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি।মার্চের গোড়ার দিকে করোনা ভাইরাস সনাক্তকরণের পর আমরা আড়াই কোটির বেশি মানুষকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছি। যাতে সামাজিক সুরক্ষা সম্প্রসারিত করেছি। মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলা করতে ইতোমধ্যে ব্যপক ব্যবস্থাও আমরা গ্রহণ করেছি। ফলে আন্তর্জাতিক সরবরাহ চেইনে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটা এবং ভোক্তাদের চাহিদা হ্রাস পাওয়া সত্ত্বেও আমাদের অর্থনীতি ঊর্ধ্বমুখী প্রবাহের ধারা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের অর্থনৈতিক ক্রমবর্ধমান পারস্পরিক নির্ভরতা আমরা আনন্দের সঙ্গে স্বীকৃতি দেই। বেশকিছু ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশের উৎপাদন ও সেবা খাতে নিযুক্ত রয়েছেন এবং তারা ভারতে নিজ দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে থাকেন। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক পর্যটক এবং চিকিৎসা সেবা গ্রহণকারী তারা ভারতে যাচ্ছে এই সহযোগিতা নিচ্ছে।
আমি বিশ্বাস করি উভয় দেশ বিদ্যমান সহযোগিতামূলক ঐক্যমতের সুযোগ নিয়ে অর্থনীতিকে আরও সংহত করে বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক ভ্যালু চেইন আরও সমৃদ্ধ করতে পারে। আমাদের চলমান যোগাযোগগুলি এক্ষেত্রে অনুঘটক হিসাবে কাজ করতে পারে।
এর অন্যতম উদাহরণ হল চিলাহাটি হলদিবাড়ি রেল লাইন চালু করা বলে জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, আমাদের সম্পর্ক একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত অতিক্রম করছে। একটি স্বাধীন জাতি হিসাবে বাংলাদেশ ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এবং ভারত কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠারও ৫০তম বছরে পা দিয়েছে। এছাড়া আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি। মাত্র কয়েক মাস আগে আপনাদের জাতির পিতা মাহাত্মা গান্ধীর সার্ধশততম জন্মবার্ষিকী আমরা উদযাপন শেষ করেছি। বাংলাদেশে আমরা বাপুজির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন হিসাবে একটি বিশেষ ডাকটিকিট অবমুক্ত করেছি। আমরা আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সম্মানে ভারতের ডাক বিভাগের একটি স্টাম্পের উদ্বোধনও করবো।
এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানগুলো যৌথভাবে উদযাপনের জন্য স্বস্তস্ফর্তভাবে একত্রিত হওয়ার জন্য ভারতীয় সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের অবিচ্ছেদ্য যোগসূত্র স্মরণে আমরা বিশ্বব্যাপী বাছাই করা শহরে যৌথ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ২০২১ সালের ২৬ শে মার্চ ঢাকায় আপনার উপস্থিতি আমাদের যৌথ উদযাপনের গৌরবময় স্মৃতি স্মরণীয় করে রাখবে বলে জানা প্রধানমন্ত্রী।