মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিশ্বব্যাপী কর্মসূচি পালন করবে বাংলাদেশ-ভারত
১৭ ডিসেম্বর ২০২০ ১৫:৪৩
ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ-ভারতের অবিচ্ছেদ্য যোগসূত্র। এই যোগসূত্র স্মরণে বিশ্বব্যাপী বাছাই করা শহরে যৌথ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশ দুটি। ২০২১ সালের ২৬শে মার্চ ঢাকায় নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে যৌথ উদযাপনের গৌরবময় স্মৃতি স্মরণীয় করে রাখা হবে।
বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) দুই নেতার ভার্চুয়াল সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতের পোস্টাল ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রকাশিত বঙ্গবন্ধুর ওপর একটি স্মারক ডাক টিকিট যৌথভাবে উদ্বোধন করেন। একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধু-বাপু (মহাত্মা গান্ধী) ডিজিটাল এক্সিবিশনও উদ্বোধন করেন তারা।
এর আগে সকাল সাড়ে ১১টায় দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ভার্চুয়ালি বৈঠক শুরু হয়। শেখ হাসিনা গণভবন থেকে এবং নরেন্দ্র মোদি দিল্লি থেকে এতে অংশ নেন। ভার্চুয়াল বৈঠকের আগেই দুই দেশের মধ্যে সাতটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। এদিন সকাল নয়টার দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এগুলো সই হয়। বাণিজ্য, কৃষি, জ্বালানি ও পরিবেশসহ অন্যান্য বিষয়ে এই সমঝোতা হয়।
দুই দেশের মধ্যে যেসব বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে সেগুলো হলো- বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সিইও ফোরাম, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সহযোগিতা, জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে হাইড্রোকার্বন বিষয়ে সহযোগিতা, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে হাতি সংরক্ষণ বিষয়ে সহযোগিতা, বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল জাদুঘর ও ভারতের জাতীয় জাদুঘর মধ্যে সহযোগিতা, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সঙ্গে কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট ও বরিশালের স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট সংক্রান্ত সহযোগিতা চুক্তি।
বাংলাদেশের পক্ষে সংশ্লিষ্ট সাত মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের সচিব বা শীর্ষ কর্মকর্তা আর ভারতের পক্ষে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী সই করেন। এমওইউ সই অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী খালিদ হোসেন ও পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন।
পরে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক প্রতিনিয়ত আরও শক্তিশালী হচ্ছে। প্রতিবেশি দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দুই দেশের মধ্যে অংশীদারিত্ব এবং দ্বিপাক্ষিক আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্যিক সম্পর্ক ক্রমেই জোরদার হচ্ছে।’
এছাড়া ভিডিও কনফারেন্সে দুদেশের মধ্যে রেল যোগাযোগ উদ্বোধন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে শেখ হাসিনা এবং নয়াদিল্লি থেকে নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সে এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন। চিলাহাটিতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভারত আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু। ২০১৯ সালের অক্টোবরে দিল্লির গ্র্যান্ড হাউজে আপনার সঙ্গে আমার শেষ বৈঠক হয়।আপনার অপূর্ব আতিথেয়তা আমরা কৃতজ্ঞতা ভরে স্মরণ করছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত অতিক্রম করছে। একটি স্বাধীন জাতি হিসাবে বাংলাদেশ ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এবং ভারত কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠারও ৫০তম বছরে পা দিয়েছে। এছাড়া আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি। মাত্র কয়েক মাস আগে আপনাদের জাতির পিতা মাহাত্মা গান্ধীর সার্ধশততম জন্মবার্ষিকী আমরা উদযাপন শেষ করেছি। বাংলাদেশে আমরা বাপুজির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন হিসাবে একটি বিশেষ ডাকটিকিট অবমুক্ত করেছি। আমরা আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সম্মানে ভারতের ডাক বিভাগের একটি স্টাম্পের উদ্বোধনও করব।’
এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানগুলো যৌথভাবে উদযাপনের জন্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে একত্রিত হওয়ার জন্য ভারতীয় সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে দুটি দেশের অবিচ্ছেদ্য যোগসূত্র স্মরণে আমরা বিশ্বব্যাপী বাছাই করা শহরে যৌথ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০২১ সালের ২৬শে মার্চ ঢাকায় নরেদ্র মোদির উপস্থিতিতে যৌথ উদযাপনের গৌরবময় স্মৃতি স্মরণীয় করে রাখা হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।