Wednesday 20 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিজয়ের ৪৯ বছর— যা ভাবছেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা


১৭ ডিসেম্বর ২০২০ ১৭:২৭

ঢাকা: ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। বিকেল চারটা বেজে ৩১ মিনিট। রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানের পক্ষে আত্মসমর্পণ দলিলে সই করলেন জেনারেল নিয়াজী। এরই মধ্য দিয়ে দীর্ঘ নয়মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে বাংলাদেশ লাভ করল কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা।

১৯৭১ সালে আজকের এই দিনে পাকিস্তানের শোষণের নাগপাশ ছিন্ন করে চূড়ান্ত বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল বাংলাদেশ। পৃথিবীর বুকে বীরবেশে আত্মপ্রকাশ করেছিল স্বাধীন একটি মানচিত্র— বাংলাদেশ। ২০২০ সালে এসে বাংলাদেশ পালন করছে বিজয়ের ৪৯তম বার্ষিকী।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। দীর্ঘ নয়মাসের সেই ভয়াল যুদ্ধে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক অকুতোভয় ছাত্র-শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন। প্রাণপণে যুদ্ধ করেছেন পাকবাহিনীর বিপক্ষে। প্রাণ দিয়েছেন অসংখ্য শিক্ষক। বিজয়ের ৪৯তম বার্ষিকীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাংলাদেশ নিয়ে তাদের নিজস্ব ভাবনার কথা জানতে চেষ্টা করেছে সারাবাংলা ডটনেট।

স্বাধীনতার ৪৯তম বার্ষিকীতে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলোজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শাহরিয়াদ ইসলাম মনে করেন, ‘এরই মধ্যে যথেষ্ট প্রতিভা দেশেই তৈরি হয়েছে। দেশ স্বাধীনের প্রায় ৫০ বছর হলো। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশের সত্যিকারের উন্নয়ন হয়নি। যেটুক উন্নয়ন হয়েছে তা গত কয়েক বছরে এবং এটা বিশ্বস্বীকৃত। আমি মনে করি, দেশকে সমৃদ্ধ করতে এখন মেধাশক্তির মূল্যায়ন ও পরিচর্যা বাড়াতে হবে।’

বিজয়ের ৪৯তম বছরে এসে শাহরিয়াদের ইচ্ছে, তিনি যেন দেশের উপকারে আসতে পারেন। তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ যেন আমার কাজের মাধ্যমে উপকৃত হয়— এইটাই আমার চাওয়া। এছাড়া বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের উন্নয়ন বিশ্ব দরবারে তুলে ধরা সবার জন্যই একটি দায়বদ্ধতার জায়গা।’

বিজ্ঞাপন

বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তুলি বসাক মনে করেন, বিজয়ের পর থেকে এই পর্যন্ত দেশে বুদ্ধিবৃত্তিক ও কাঠামোগত— উভয় দিক থেকেই উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। তবে দেশের বিচার ব্যবস্থায় এখনও কিছুটা শিথিলতা আছে বলে মনে করেন তিনি। তুলি বলেন, ‘বুদ্ধিবৃত্তিক ও কাঠামোগতসহ বিভিন্ন দিক দিয়ে দেশের উন্নয়নের চাকা ঘুরলেও বিচার ব্যবস্থায় এখনও কিছুটা শিথিলতা দেখা যায়। এই দিকটা দেখা দরকার। পাশাপাশি শিক্ষা ও গবেষণা খাত প্রসারে গুরুত্ব দিতে হবে।’

সুন্দর রাষ্ট্র বিনির্মাণে সকলকে ভূমিকা রাখতে হবে বলে মনে করেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান রুহান। রাষ্ট্র বিনির্মাণের এই মহাযজ্ঞে নিজেও অংশ হতে চান। সারাবাংলাকে আতিক বলেন, ‘স্বাধীনতার এত বছরেও আমরা বাংলাদেশকে কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে পাইনি। এই অবস্থা থেকে বের হতে হলে তরুণ প্রজন্মকে দেশপ্রেমিক হতে হবে। রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তা ঠিকভাবে অনুভব করে রাষ্ট্র বিনির্মাণে নিজ নিজ স্থান থেকে ভূমিকা রাখতে হবে। আমিও এই মহাযজ্ঞে অংশ নিতে চাই।’

চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শাহনাজ পারভীন। পড়াশোনা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানাইজেশনের স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড লিডারশিপ বিভাগে। বিজয়ের ৪৯তম বার্ষিকীতে নিজের ভাবনা প্রকাশ করতে গিয়ে সারাবাংলাকে শাহনাজ বলেন, ‘৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর হয়েছে। এত কম সময়ে স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করা হয়েছে, দারিদ্র হ্রাস পেয়েছে, এমডিজি অর্জন, এলডিসিজি বাস্তবায়নসহ তখনকার যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ এখন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় ‍রূপান্তর হচ্ছে। একজন বিশ্ববিদ্যলয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমি মনে করি, জ্ঞান–মেধা দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা নির্মাণে অবশ্যই সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।’

ভূগোল বিভাগের শিক্ষার্থী অর্পিতা রায় শাওনের মতে যে কারণে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের প্রাণদান- তা অনেকাংশেই আজ ভূ-লুণ্ঠিত। কিছু কিছু ঘটনা তাকে এমন ভাবতে বাধ্য করেছে। তিনি বলেন, ‘সুদীর্ঘ ২৩ বছরের যে বঞ্চনার ইতিহাস তা ৭১-এর ১৬ই ডিসেম্বর আমাদের বিজয় অর্জনের মাধ্যমে অবসান ঘটে। তবে যে লক্ষ্যে আমাদের কাঙ্ক্ষিত বিজয় তা আজ অনেকাংশেই ভূলুণ্ঠিত! কিছু কিছু ঘটনা আমাকে তা-ই ভাবায়। কথায় আছে, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন।— বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই কথাটি আদতেই সত্য।’

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মার্জিয়া ভূইয়া তাবেন্দা। এই শিক্ষার্থী মনে করেন, স্বাধীনতার প্রায় পঞ্চাশ বছরের এই পথচলায় বাংলাদেশ রাষ্ট্রের রয়েছে যুগপৎ অর্জন ও ব্যর্থতা। সচেতন নাগরিক হয়ে দেশকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে চান তাবেন্দা।

তিনি বলেন, ‘এই দীর্ঘ পরিক্রমায় আমাদের বেশকিছু অর্জন ও সাফল্য রয়েছে। সেইসঙ্গে রয়েছে কিছু ব্যর্থতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি মনে করি, দেশ ও জাতির জন্য আমার কিছু দায়বদ্ধতা রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই প্রজন্মের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব সচেতন নাগরিক হওয়া। সচেতনতা এবং শিক্ষা একটি জাতির উন্নয়নে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই সচেতন এবং সুশিক্ষিত হওয়াই আমার প্রথম দায়বদ্ধতা।

অর্থনীতি বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী আবদুল কাইয়ুম আনান মনে করেন, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে ধর্মীয় মৌলবাদ যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে— সেই দিকটা যত্নসহকারে দেখা দরকার। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ রাষ্ট্র সবার। এখানে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানসহ সকলেই শান্তিতে বসবাস করতে হবে। ধর্মকে পুঁজি করে কেউ যেন কোনো ধরনের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে না পারে— এই দিকটা যত্ন সহকারে খেয়াল রাখতে হবে।’

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস রাকা মনে করেন, স্বাধীনতার পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও দেশের নানান প্রান্ত থেকে ধর্ষণ, গুম, খুনসহ প্রভৃতির খবর শুনতে পাওয়াটা দুঃখজনক। সারাবাংলাকে রাকা বলেন, ‘আমরা পাকিস্তানিদের অত্যাচার থেকে স্বাধীন হয়েছি শান্তিতে থাকব বলে। কিন্তু এখনও আমরা গুমের সংবাদ শুনি, প্রত্যেকদিন পত্র-পত্রিকায় ধর্ষণের সংবাদ ছাপে, খুন-খারাবী চলে এখনও— বিষয়গুলো দুঃখজনক। বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে গড়ে তুলতে হলে সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে। এই ধরনের ঘটনাগুলো যাতে পুনরাবৃত্তির পথ না পায়, সে বিষয়ে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।’

ঢাবি শিক্ষার্থী বিজয়ের ৪৯ বছর ভাবনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর