‘২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে অর্থ পাচারকারীদের তথ্য জানাতে হবে’
১৮ ডিসেম্বর ২০২০ ০৯:১০
ঢাকা: বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের বিষয়ে পরবর্তী তথ্য জানাতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপক্ষকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দিয়েছেন হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল তাহমিনা পলি।
শুনানির আগে দুদক, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইউ), পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশের আইজি, এনবিআরসহ বেশ কয়েকটি সংস্থা অর্থ পাচারকারীদের বিষয়ে আদালতে লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
দুদকের দাখিলকৃত প্রতিবেদনে ২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত অর্থ পাচার আইনের ধারা যুক্ত করে ৪৪ মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে তার তালিকা তুলে ধরা হয়। যেখানে ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, খালেদ মাহমুদ ভূইয়ার নাম রয়েছে। এ ছাড়া মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসটেন্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) সংক্রান্ত মামলার তালিকাও দিয়েছে দুদক। যেখানে সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদ, সাবেক এমপি মোসাদ্দেক আলী ফালু, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদের নাম রয়েছে।
এসব নাম তুলে ধরে দুদকের গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে আদালতকে জানান কৌশুলি মো. খুরশীদ আলম খান। তখন হাইকোর্ট বলেন, ‘গত ২২ নভেম্বর যে আদেশ দিয়েছি তার প্রেক্ষিতে নতুন কী তথ্য পেয়েছেন তা জানান। পুরাতন কাহিনী শুনিয়ে লাভ নাই। এগুলো তো সবাই জানে। যেসব তথ্য দিয়েছেন তাতে সন্তুষ্ট হতে পারছি না। ২০১৬ সাল থেকে মামলা করেছে সেটা ঠিক আছে, এটা তো করবেনই। কিন্তু যারা দেশ থেকে টাকা পাচার করে বিদেশে গাড়ি-বাড়ি করেছে তাদের সর্বশেষ নাম ঠিকানা দিন। অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে সরকারের যেসব সংস্থা রয়েছে তারা যদি কাজ করে তাদের নাম জানাটা কি অসম্ভব?’
হাইকোর্ট বলেন, ‘আমরা দেশ ও দেশের মানুষকে সহযোগিতা করতে চাই। অর্থপাচার নিয়ে যেসব নিউজ দেখেছি সেগুলো তো উদ্বেগজনক। আমরা যদি পদে থেকে দায়িত্ব পালন না করি তাহলে যখন পদে থাকব না তখন মানুষ আমাদের প্রশ্ন করবে, বলবে আপনারা তো বিচারক ছিলেন, কী করেছেন। সব সময় তো আর দায়িত্বে থাকব না, তখন মানুষ জিজ্ঞাসা করবে কিছুই তো করেননি, তখন তো আমরা লজ্জায় পড়ব।’
এ সময় আদালত আরও বলেন, ‘যে সব সংস্থা আছে, তারা যদি সরকারকে সহায়তা করে তাহলে কেন অর্থ পাচারকারীদের নাম ঠিকানা জানা যাবে না? কোর্টের কাজ হলো সরকার ও জনগণকে সহযোগিতা করা।’ অর্থপাচার নিয়ে গণমাধ্যমে যে রিপোর্ট হয়েছে তা অশনি সংকেত বলেও উল্লেখ করেন হাইকোর্ট।
পরে নিজ কার্যালয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘অর্থপাচার সংক্রান্ত এ মামলায় সুয়োমোটো রুল জারি হয়েছিল। সেখানে কারা কারা এই ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের নামগুলো দেওয়ার জন্য বলেছিল আদালত। তখন আমরা বলেছি-এসব অপরাধের সঙ্গে কারা জড়িত তা জানতে বিদেশি মিশনগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে, কোর্টকেও আমরা সেই চিঠি দিয়েছি এবং চিঠির উত্তর পেলে আমরা কোর্টে জমা দেব।’
‘বিএফআইউ এবং এমএলএআর আইন অনুযায়ী তাদের মামলা সম্পর্কিত কোনো বিষয় প্রকাশ করতে পারবো না। দুটো চিঠি জমা দিয়েছি এসব চিঠির উত্তর পেতে সময় লাগবে, এজন্য ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দিয়েছেন আদালত’, বলেন তিনি।
বিদেশে অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িতদের নাম প্রকাশের বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি, অপরাধীদের নাম জানতে পারলে প্রকাশ করব। অনেকগুলো নাম আমরা ইতোমধ্যে প্রকাশ করেছি, আমরা চিঠি দিয়েছি, নাম পেলে আপনাদের জানাতে পারবো।’
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে গত ২২ নভেম্বর বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এক আদেশে বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের সব ধরনের তথ্য চেয়েছেন। ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব, দুদক চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
এরপর হাইকোর্টের আদেশের জবাব তৈরি করতে অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে দুইবার বৈঠক করেছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। সর্বশেষ গত সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকে দুদক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ও এনবিআরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।