Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘বিকল’ হয়ে গেছে বি. চৌধুরীর বিকল্পধারা


১৮ ডিসেম্বর ২০২০ ২২:৩৬

ঢাকা: কোনো সাংগঠনিক তৎপরতা নেই বিকল্পধারায়। দলের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ কমিটি সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নেতৃত্ব দিয়ে যে যুক্তফ্রন্ট গঠন করা হয়েছিল, কোনো ধরনের অস্তিত্ব নেই তারও। দলের অস্তিত্ব কেবল মাঝে মাঝে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অন্যদিকে, দলের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর পরিবারের বিরুদ্ধেই রয়েছে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ। সব মিলিয়ে দলের নেতাকর্মীরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

বিজ্ঞাপন

নেতাকর্মীরা বলছেন, দেশে সন্ত্রাস, মাদকমুক্ত ও পরিছন্ন রাজনীতি প্রতিষ্ঠার যে লক্ষ্য ছিল— তা আর ধারণ করতে পারছে না বিকল্পধারা। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই দলটি বিকল হয়ে পড়েছে বলে মত তাদের। তাই সুযোগ পেলেই তারা অন্য রাজনৈতিক দলে যোগ দেবেন।

বিকল্পধারার প্রতিষ্ঠাতা ড. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী (বি. চৌধুরী) ছিলেন বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। দলটির গুরুত্বপূর্ণ অনেক দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এলে রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হন তিনি। পরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে তার কবর জিয়ারত করতে না গেলে বি. চৌধুরীর বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্টের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপির সংসদীয় দলের সভা। ২০০২ সালের ২১ জুন তিনি রাষ্ট্রপতি পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। বছর দুয়েক বিরতির পর তিনি ২০০৪ সালে গঠন করেন বিকল্পধারা।

দলের নেতাকর্মীরা বলছেন, পরিচ্ছন্ন রাজনীতি প্রতিষ্ঠা এবং সন্ত্রাস-দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে বিকল্পধারার যাত্রা শুরু হয়েছিল। নির্বাচনে জনপ্রতিনিধিত্বের জায়গায় তেমন কোনো সাফল্য না থাকলেও দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ কয়েক বছর বিকল্পধারা ছিল বেশ আলোচিত একটি দল।

সবশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বি. চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে রাজনৈতিক জোট গঠনের ঘোষণা ফের আলোচনার জন্ম দেয়। তবে শেষ পর্যন্ত জামায়াত ইস্যুতে সেই ঘোষণা বাস্তব রূপ লাভ করেনি, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠন করা হয় ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’। বি. চৌধুরী ওই সময় গঠন করেন ‘যুক্তফ্রন্ট’, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের হয়ে সেই জোট অংশ নেয় নির্বাচনে। লক্ষ্মীপুরে মেজর (অব.) আবদুল মান্নান ও মুন্সীগঞ্জে মাহী বি. চৌধুরী সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হন। এরপর থেকেই আর বিকল্পধারার তেমন কোনো কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়।

বিজ্ঞাপন

দলটির একাধিক সূত্র বলছে, বিকল্পধারা পরিচালিত হয় ডা. বি. চৌধুরী ও তার ছেলে মাহী বি. চৌধুরীর সিদ্ধান্তে। তবে মাহী বি. চৌধুরী বেশিরভাগ সময় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করেন। নেতাকর্মীদের অভিযোগ, সংসদ সদস্যপদ রক্ষার জন্য সময় হিসাব করে দেশে এসে সংসদ অধিবেশনে যোগ দেন। এর বাইরে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে তেমন কোনো তৎপর নন তিনি। ফলে বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম বৈঠকসহ অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। দেশের সব জেলা তো দূরের কথা, ঢাকা ও এর আশপাশের কয়েকটি জেলায় বিকল্পধারার যে কমিটি আছে, সেগুলোও পূর্ণাঙ্গ নয়। আবার নয় ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে কমিটি থাকলেও সেগুলো সচল নয়।

সাংগঠনিক তৎপরতায় মনোযোগী না হওয়ার পাশাপাশি মাহী বি. চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি জড়িয়ে পড়ার অভিযোগও রয়েছে। দলের নেতাকর্মীরাই বলছেন, এরই মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তার বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে। ব্যাখ্যা দিতে তিন বার তাকে দুদকে হাজিরাও দিতে হয়েছে।

সবকিছু মিলিয়ে নেতাকর্মীদের মত, বিকল্পধারা প্রকৃত অর্থে বিকল হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে দলটির ঘুরে দাঁড়ানোর তেমন কোনো আশাও দেখছেন না তারা। কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ডা. বি. চৌধুরীর ‘ক্লিন ইমেজে’র ওপর ভরসা রেখে আমরা এই দলে যোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু দলের কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রমই নেই। নির্বাচনের আগে একটু গা ঝাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা ছিল। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি, এটা কেবল সংসদীয় আসনে মনোনয়ন নিয়ে দরকষাকষির পাঁয়তারা ছিল। শেষ পর্যন্ত দুই জনের মনোনয়ন পাওয়া গেছে ওই সময়। কিন্তু দুই সংসদ সদস্যেরও কোনো ধরনের কার্যক্রম নেই বললেই চলে। বরং তারা নিজেদের আখের গুছিয়েই সন্তুষ্ট।

তবে বিকল্পধারার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এনায়েত কবিরের সঙ্গে কথা হয় সারাবাংলার। তিনি বলেন, দেশে এখন এমন কোনো ইস্যু নেই যে যা নিয়ে বিকল্পধারা তৎপর থাকবে। তাছাড়া আমরা মহাজোটের শরিক দল। আমাদের ভেবেচিন্তে কর্মসূচি পালন করতে হবে। রাষ্ট্রীয় সব কর্মসূচিই আমরা পালন করছি।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করলেও বিকল্পধারাকে কিছু করতে দেখা যায়নি। জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো ইস্যুতেও বিকল্পধারার কার্যক্রম নেই। এসব বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এনায়েত কবির বলেন, দেশে রাজনীতি নেই। গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি-পরিবেশ নেই। আলোচনা-সমালোচনা করা যাচ্ছে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে এগুলো সীমিত হয়ে গেছে। এ কারণে আমাদের দলটির তৎপরতা তেমন নেই।

এদিকে, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ন্যাপ ও গণফ্রন্টসগহ অনিবন্ধিত প্রায় ৩০টি দল নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন করেছিল বিকল্পধারা। দলের একাধিক সূত্র বলছে, বর্তমানে ওইসব দলের নেতাদের সঙ্গেও বিকল্পধারার সুসম্পর্ক নেই। ফলে বিকল্পধারার মতো যুক্তফ্রন্টের অস্তিত্বও এখন বলতে গেলে টিকে রয়েছে কেবল কাগজে-কলমে।

ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বি চৌধুরী বিকল্পধারা মাহী বি চৌধুরী মেজর (অব.) এম এ মান্নান সাংগঠনিক তৎপরতা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর