খুলনায় পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণের ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণ
১৯ ডিসেম্বর ২০২০ ০৮:৪৩
ঢাকা: ব্যয় বাড়ছে খুলনা শহরে পয়ঃনিষ্কাশন নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রকল্পে। এই প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ৯৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ১১৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা বেড়ে সেই ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২১২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। অর্থাৎ ব্যয় হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। সেই সঙ্গে দুই বছর মেয়াদও বাড়ানো হয়েছে এই প্রকল্পে। সংশোধনী প্রস্তাবনা অনুযায়ী ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ করা হচ্ছে প্রকল্পটির। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি তৈরির সময় জমির যে দাম হিসাব করা হয়েছিল, পরবর্তী সময়ে জমির দাম অনেক বেড়ে যায়। এছাড়া প্রকল্প প্রণয়নের সময়ের পর নানা কারণেই অনেক জমির শ্রেণি পরিবর্তিত হয়েছে। এ কারণেও অনেক জমির দাম বেড়েছে। ফলে এই প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো সারাবাংলাকে জানিয়েছে, প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এরই মধ্যে প্রকল্পটির প্রক্রিয়াকরণ শেষ হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় এটি উপস্থাপন করা হবে। বাস্তবায়িত হলে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাত্রার জন্য খুলনা মহানগরীতে সুয়ারেজ ব্যবস্থা নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে। পয়ঃবর্জ্য, ময়লা পানি অপসারণ ও সঞ্চালনের জন্য পাম্প স্টেশন নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হবে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্র জানায়, বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত তৃতীয় বৃহত্তম বিভাগীয় শহর এবং দ্বিতীয় বন্দরনগরী খুলনা যা জলবায়ু পরিবর্তনীয় প্রভাব দ্বারা প্রভাবিত। খুলনা শহর জেলার উত্তরাংশে ভৈরব নদীর ধার ঘেঁষে দীর্ঘ ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত যার উত্তর-পশ্চিমাংশে বড় বড় নিচু জলাভূমি ও বিল অঞ্চল অবস্থিত। খুলনা সিটি করপোরেশন ৪৫ দশমিক ৬৫ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবস্থিত। রূপসা-ভৈরব নদীর তীরবর্তী অংশে শহরের প্রধান প্রধান বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো সম্প্রসারিত হয়েছে। খুলনা শহরে বসবাসকারী প্রায় ১৫ লাখ মানুষের জন্য যথাযথ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় অধিকাংশ লোক স্বাস্থ্যসুরক্ষার নিজস্ব বিকল্প ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল।
স্থানীয় সরকার বিভাগ আরও বলছে, কিছু সংখ্যক নগরবাসী কুয়া কূপ পদ্ধতি (পিআইটি) এবং প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সেপটিক ট্যাংক পদ্ধতির পয়ঃব্যবস্থা ব্যবহার করে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এগুলো রাস্তার পাশে অবস্থিত উন্মুক্ত ড্রেনের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত। ফলে ময়লা-বর্জ্য পানির প্রবাহে পানি দূষিত হচ্ছে। এজন্য প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় রাখা এবং জনসাধারণের স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাত্রার জন্য খুলনা মহানগরীতে সুয়ারেজ ব্যবস্থা নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণের জন্য এই প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ১০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। বর্তমানে প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ অংশের ব্যয় বেড়েছে।
প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, প্রকল্পের ডিপিপির প্রাক্কলন প্রস্তুত করা হয় ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি। ২০১৮ সালের ১০ এপ্রিল একনেকে তা অনুমোদিত হয়। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে রেজিস্ট্রি করা কবলা দলিলের ওপর ভিত্তি করে জেলা রেজিস্ট্রার, খুলনার কাছ থেকে প্রাপ্ত বাজারমূল্য নির্ধারণ কমিটি নির্ধারিত মৌজাওয়ারি রেকর্ডীয় শ্রেণিভিত্তিক প্রতি শতক জমির মূল্যেও দেড় গুণ ও উপরিস্থ সম্পদের ক্ষতিপূরণ একগুণ ভিত্তি ধরে প্রকল্পের ডিপিপি ২০১৭ সালে প্রণয়ন করা হয়েছিল। ডিপিপি অনুমোদনের পর ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে জমি অধিগ্রহণ প্রস্তাব জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, খুলনা বরাবর পাঠানো হয়। কিন্তু এর মধ্যে সরকার ২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর জারি করা গেজেট অনুযায়ী অধিগ্রহণ করে জমির মূল্য তিন গুণ ও জমির ওপর অবস্থিত সম্পদের ক্ষতিপূরণ দ্বিগুণ হারে দেওয়ার আদেশ কার্যকর হয়। ফলে মূল ডিপিপিতে অধিগ্রহণের জন্য সংস্থান করে জমির প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে জমির মূল্য বেড়েছে।
২০১৭ সালে প্রস্তুত করে মূল ডিপিপিতে জমির যে রেকর্ডীয় শ্রেণি ধরে ডিপিপি প্রস্তুত করা হয়েছিল, ডিপিপি অনুমোদনের পর জমি অধিগ্রহণ প্রস্তাব পাঠানোর পর জেলা প্রশাসকের এলএ শাখা থেকে সরেজমিন অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাবিত জমিগুলো পরিদর্শন করা হয়। সরেজমিন পরিদর্শনের সময় জমির শ্রেণি নির্ণয়ের ক্ষেত্রে জমির রেকর্ডীয় শ্রেণি ও ব্যবহারভিত্তিক শ্রেণির পার্থক্য যাচাই-বাছাই করে জমির প্রকৃত শ্রেণি নির্ধারণ করা হয়। রেকর্ডীয় পর্চা খতিয়ানে জমির যে শ্রেণি উল্লেখ ছিল, তা অনেক আগে প্রস্তুত হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে জমির মালিক বিভিন্নভাবে ভূমি ব্যবহারের ফলে এবং অনেক ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক কারণেও কিছুটা ভরাট হয়ে জমির প্রকৃত শ্রেণি পরিবর্তন হয়। ফলে মূল ডিপিপিতে জমির যে শ্রেণি ছিল, তা পরে পরিবর্তন হয়ে যাওয়ায় জমির দাম বেড়ে যায়।
২০১৮-২০১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য মৌজাওয়ারি শ্রেণিভিত্তিক জেলা রেজিস্ট্রার জমির গড় মূল্য তালিকা নির্ধারিত হয়নি। জমি অধিগ্রহণ প্রস্তাব পাঠানোর পর ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় ৪ ধারা নোটিশ ও ৭ ধারা নোটিশ পাঠানোর পর প্রস্তাবিত জমির মূল্য প্রাক্কলনের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের এলএ শাখা ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভূমি প্রশাসন ম্যানুয়াল ভূমি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের ২০১৭-২০১৮ সালে রেজিস্ট্রি করা কবলা দলিলে জমির গড় মূল্যের প্রায় ৩৫ শতাংশ বেশি ধরে জমির মূল্য প্রাক্কলন প্রস্তুত করে।
এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মামুন-আল-রশীদ পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে খুলনা মহানগরীতে পয়ঃবর্জ্য ও ময়লা পানি অপসারণ ও সঞ্চালনের জন্য পাম্প স্টেশন নির্মাণ এবং পরিশোধনের জন্য ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ সম্ভব হবে। অধিগ্রহণ করে জমিতে পরে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ঋণ সহায়তার পয়ঃবর্জ্য ও ময়লা পানি পরিশোধনের জন্য ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ করা হবে।