শুধু ইতিহাস নয়, অনুভূতিতেও মিশে থাক মুক্তিযুদ্ধ
১৯ ডিসেম্বর ২০২০ ১৪:৪৮
ঢাকা: শিশুদের কাছে রূপকথার গল্প যেমন, শৈশবে রুমানা রিয়াজ আরেফিন আর ডক্টর রিজওয়ানা রিয়াজের কাছে মুক্তিযুদ্ধের গল্পগুলো ছিল ঠিক তেমনই। মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ রিয়াজউদ্দিনের গর্বিত দুই কন্যা ইতিহাসের মতো করে মুক্তিযুদ্ধকে জানেননি, জেনেছিলেন প্রতিদিনের জীবনের অংশ হিসেবে। তাদের কাছে ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২৬ শে মার্চ, ১৬ ই ডিসেম্বরসহ বাংলাদেশ জন্মের বিশেষ দিনগুলো তাৎপর্যপূর্ণ। ঈদ কিংবা পয়লা বৈশাখ যেমন আনন্দের, বাঙালির চেতনাময় দিনগুলো শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন তাদের এনে দেয় উৎসবের সেই পূর্ণতা। তাৎপর্যময় দিনগুলো ঘিরে আগের দিন থেকেই শুরু হতো তাদের প্রস্তুতি।
ঠিক এমন পরিবেশে বেড়ে ওঠা রুমানা রিয়াজ আর রিজওয়ানা রিয়াজ সারাবাংলা ফোকাসে জানান, বাংলাদেশকে নিয়ে তাদের বাবার স্বপ্নের কথা, তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে তাদের ভাবনার কথা।
ড. রুমানা রিয়াজ আরেফিন কাজ করছেন ক্যালিফোর্নিয়ার রিভার ফোকাস, সিলিকন ভ্যালি’র সিনিয়র পানিসম্পদ প্রকৌশলী হিসেবে। আর রিজওয়ানা রিয়াজ কাজ করছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক হিসেবে।
বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সারাবাংলা’র সরাসরি বিশেষ আয়োজন সারাবাংলা ফোকাসে অংশ নেন তারা। সারাবাংলা’র স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট এমএকে জিলানীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও যুক্ত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখক, গবেষক সালেক খোকন।
মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ রিয়াজউদ্দিন বিএলএফের (বাংলাদেশ লিবারেশন ফ্রন্ট) সুনামগঞ্জ সাব অঞ্চলের ডেপুটি লিডার ছিলেন। সালেক খোকন জানান, বর্তমান প্রজন্মের প্রতি গভীর আস্থা ছিল রিয়াজউদ্দিনের।
তরুণ প্রজন্মের প্রতি রিয়াজউদ্দিনের আহ্বান ছিল ‘তোমরা নিজের কাজটাকে ভালোভাবে করো, দেশটাকে ভালোবাসার প্রকাশ হচ্ছে সেটি। বিবেকের কাছে সৎ থেকো। অন্যায়ের প্রতিবাদ করো। দেশের জন্য নিজেকে যোগ্য করে তোলো। মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসটি জেনে নিও। কখনো কোথাও এদেশকে অপমানিত হতে দিও না।’
ভার্চুয়াল আলোচনায় বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা তাদের গৌরবময় শৈশব, একাত্তরকে তারা কীভাবে জেনেছেন, নিজের জীবনকে কোন আদর্শে গড়ে তুলেছেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযোদ্ধার কি প্রত্যাশা ছিলো এ সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যদিয়ে যে দেশের জন্ম হয়েছিল, সে দেশের প্রতিটি মানুষ যেন সেই যুদ্ধের মর্মার্থকে তাদের কাজের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন, এমনটিই স্বপ্ন ছিল রিয়াজউদ্দিনের। একাত্তরকে শুধুমাত্র ইতিহাসের পাতায় রেখে যেতে চাননি মুক্তিযোদ্ধারা।
বীরের সন্তানরা জানান, রিয়াজউদ্দিনের সুযোগ হয়েছিলো কর্মের মাধ্যমে দেশের জন্য কিছু করার। সন্তান ও তরুণ প্রজন্মের কাছে চাওয়া ছিল, স্বাধীনতাটাকে ধরে রাখার। এদেশে এমন কোনো ঘটনা যেন না ঘটে যাতে করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে পিছিয়ে যায়।
রিয়াজউদ্দিনের মতো দেশের সকল মুক্তিযোদ্ধার বড় অর্জন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। এ অর্জন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাদেরকে তৃপ্ত করে। সেইসঙ্গে বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি দেখেও পীড়িত হয়েছিলেন। তবে মৃত্যুর আগে সেই আক্ষেপ অনেকটাই ঘুচেছে রিয়াজউদ্দিনের। আস্থা পেয়েছিলেন গণজাগরণমঞ্চের তরুণদের দেখে। যেই বাংলাদেশের জন্য মুক্তিযোদ্ধারা জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলেন, দেশের তরুণরা যেনো সেই বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করে। সেজন্য প্রত্যেককে তার অবস্থান থেকে কাজ করে যাওয়ার আহবান ছিলো মুক্তিযোদ্ধা রিয়াজউদ্দিনের।
প্রসঙ্গত, সারাবাংলা ফোকাস সপ্তাহের প্রতি শনি, সোম এবং বুধবার সন্ধ্যা ৭ টা ৩০ মিনিটে সারাবাংলা ডট নেটের ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেলে লাইভ সম্প্রচারিত হয়।