Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘একজন আরেকজনকে চিটার-বাটপার ডাকলে কেউ সম্মান করবে না’


১৯ ডিসেম্বর ২০২০ ১৭:২২

চট্টগ্রাম ব্যুরো: আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, আলেমদের আমরা সম্মান করি। কিন্তু যারা ওয়াজে একজন আরেকজনকে ওরে বাটপার-ওরে চিটার বলেন, যারা ধর্মের নামে অধর্মের কথা বলেন, অসত্য কথা বলেন তাদের কেউ সম্মান করে না।

শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার উদ্যোগে এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। নগরীর কাজীর দেউড়ির মোড়ে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে এই সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহবুবুল আলম হানিফ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘দুঃখজনকভাবে ধর্মের অপব্যাখা দিয়ে ভাস্কর্যের ওপর আঘাত করা হচ্ছে। যারা বলছেন তারা ধর্মব্যবসায়ী। একাত্তর সালে তারা ধর্মের দোহাই দিয়ে গণহত্যা করেছিল। এরাই বলেছিল, নারীদের ভোগ করা জায়েজ। এত জঘন্য কথা ইসলাম ধর্মে থাকতে পারে না। কারণ ইসলাম শান্তির ধর্ম।’

তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে একজনকে বলতে শুনলাম, আলেমদের সম্মান করে কথা বলতে হবে। আমরা তো আলেমদের সম্মান করি। আমাদের বাবা-মা তো আলেমদের সম্মান করার শিক্ষাই দিয়েছেন। যারা ইসলাম ধর্ম প্রচার করে, তাদের সম্মান করা তো মুসলমান হিসেবে আমাদের দায়িত্ব। কিন্তু কে আলেম? যারা ওয়াজের নামে চটকদার কথাবার্তা বলেন, ইউটিউবে যদি শোনেন- কী সব জঘন্য কথা তারা বলেন! একজন আরেকজনের উদ্দেশে বলেন- ওরে বাটপার, ওরে চিটার! এগুলো কি ধর্মের কথা, এগুলো কি একজন আলেমের ভাষা !’

‘আরেকজন ওয়াজে বললেন, বাংলাদেশে নাকি করোনাভাইরাস হবে না। মুসলমানের দেশে নাকি করোনাভাইরাস হতে পারে না। তিনি বলছেন, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস হবে না, হবে না, হবে না- যদি হয় তাহলে আমি শপথ করে বলছি, কোরআন মিথ্যা হয়ে যাবে। এগুলো কোনো আলেমের কথা? বাংলাদেশে তো করোনাভাইরাস হয়েছে, এখন কী বলবেন? যারা মিথ্যা কথা বলে, ধর্মের অপব্যাখা দেয়, তাদের কিভাবে শ্রদ্ধা করব? শ্রদ্ধা নিজেকে অর্জন করতে হয়। সম্মান নিজেকে অর্জন করতে হয়। যারা ধর্মের নামে অধর্মের কথা বলে, অসত্য কথা বলে, তাদের কেউ সম্মান করে না, কেউ সম্মান করবে না।’

বিজ্ঞাপন

ভাস্কর্য ভাংচুরকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ধর্মের দোহাই দিয়ে আপনারা ভাস্কর্য ভাঙছেন। পবিত্র ইসলামের কোথাও কি ভাস্কর্য ভাঙার কথা আছে? পৃথিবীর সকল মুসলিম রাষ্ট্রে ভাস্কর্য আছে। ভাস্কর্যের সঙ্গে ধর্মের কোনো সাংঘর্ষিক অবস্থান নেই। এটা মনের ব্যাপার। এদেশের তথাকথিত ধর্মব্যবসায়ীরা ধর্মের তথাকথিত ভুল ব্যাখা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে ফায়দা লুট করতে চায়।’

ইউটিউবে ধর্মব্যবসায়ীদের ওয়াজ শুনে বিভ্রান্ত না হয়ে পড়ালেখা করে নিজে জেনে-বুঝে ধর্ম পালনের জন্য শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানান হানিফ।

অনুষ্ঠান ভাস্কর্য ভাংচুরের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে হানিফ সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাঙালি জাতির হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আছে। এখানে সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের বসবাস আছে। এদেশের মানুষ অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করে। আমাদের যে গৌরব ও ইতিহাস-ঐতিহ্য আছে ভাস্কর্যের মাধ্যমে সেটা প্রকাশিত হয়। ভাস্কর্যের ওপর আঘাত কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। যারা এর সঙ্গে জড়িত আছেন বা যারা এতে মদদ দিচ্ছেন, তাদের আমরা আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিয়ে নিশ্চিত করব ভবিষ্যতে যাতে কোনো গোষ্ঠী ভাস্কর্যের ওপর আর আঁচড় দিতে না পারে।’

শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হৃদয়ে ধারণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার জন্য কোনো জাতি আমাদের মতো এত ত্যাগ স্বীকার করেনি। আমরা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছি। এই স্বাধীনতা আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার। এই স্বাধীনতা আমাদের ধরে রাখতে হবে। স্বাধীনতাকে নিয়ে কোনো কটাক্ষ বা এর ওপর কোনো আঁচড় বরদাশত করার কোনো সুযোগ নেই।’

‘আমাদের স্বাধীনতার আন্দোলন হয়েছিল চার মূলনীতির ভিত্তিতে। বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্র। পরবর্তী সময় এই চার নীতির ওপর ভিত্তি করে আমাদের সংবিধান রচিত হয়েছে। এই চারটি স্তম্ভের ওপর আমাদের সংবিধান দাঁড়িয়ে আছে। এই সংবিধানও আমরা ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে পেয়েছি। এই সংবিধানের চার মূলনীতির ওপর কোনো আঘাত বাঙালি জাতি সহ্য করতে পারে না’- বলেন হানিফ।

এদিকে অনুষ্ঠান শেষে আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে হানিফ বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা শুনেছি কিছু কিছু জায়গায় বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন। বিদ্রোহীদের বিষয়ে আমাদের দলের অবস্থান একেবারে কঠোর। যারা এর আগে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন, তাদের পরবর্তীতে আর নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়নি। যারা দায়িত্বশীল পদে থেকে দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন বলে প্রমাণ হয়েছে, তাদের দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে যারা প্রার্থী হিসেবে থাকবেন বা দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করবেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা নির্বাচন করবেন তাদের ভবিষ্যতে আর কখনো নৌকা প্রতীক এবং দলীয় সমর্থন পাবার প্রশ্ন থাকবে না।’

বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি সাজ্জাত হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন চসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাইনুদ্দিন হাসান চৌধুরী, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা তৌফিকুর রাহমান, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লুবনা হারুন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শিবু প্রসাদ চৌধুরী।

আওয়ামী লীগ বাটপার-চিটার মাহবুবুল আলম হানিফ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সম্মান

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর