ধনী লোকদের কাছ থেকে পানির দাম বেশি নেবে ওয়াসা
১৯ ডিসেম্বর ২০২০ ১৭:৫০
ঢাকা: রাজধানী ঢাকায় বসবাসকারী ধনী লোকদের কাছ থেকে পানির বেশি দাম নেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে পানি ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ওয়াসা। উচ্চবিত্তরা যে দামে পানি পাচ্ছেন, সেই একই দাম দিয়ে নিম্নবিত্তেদের পানি কিনতে হয়— এই বৈষম্য কমানো উচিত বলে মনে করেন ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান।
শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় কারওয়ান বাজার ওয়াসা ভবনে নিম্ন আয় এলাকার আদর্শ গ্রাহকের সম্মাননা স্মারক বিতরণ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ওয়াসার এমডি এ কথা বলেন। ঢাকা ওয়াসা, ওয়াটারএইড বাংলাদেশ এবং দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র (ডিএসকে) যৌথভাবে দ্বিতীয়বারের মতো এ সম্মাননা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
তাকসিম এ খান বলেন, ‘পানির যা উৎপাদন খরচ তার চেয়ে অনেক কমে দিচ্ছি। বাকিটা সরকার আমাদের দিচ্ছে। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, এ সুবিধাটা বড় লোকরাও পাচ্ছে। আমরা সবাইকে এক রেটে কেন পানি দেব! যারা নিম্ন আয়ের তাদের অধিকার আছে। সব শ্রেণির মানুষের জন্য পানির দাম এক হওয়া উচিত না। আমরা চিন্তাভাবনা করছি, এলাকাভিত্তিক পানির দাম নির্ধারণ করব। পানির দাম কমানো হয়ত সম্ভব না। কিন্তু অন্যান্য জায়গায় দাম বাড়বে।’
ওয়াসা নগরিক বস্তিগুলো বৈধ পানি সুবিধা দিচ্ছে ঢাকা ওয়াসা। আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নগরির সকল বস্তিকে বৈধ পানির আওতায় নিয়ে আসার আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘২০১০ সাল থেকে আমরা পানিকে জাতিসংঘ ঘোষিত মানুষের মৌলিক অধিকার বিবেচনা করে বস্তি এলাকায় বৈধ পানি দিচ্ছি। তাদের হোল্ডিং নাম্বার নেই, তারপরেও আমরা তাদেরকে পানি দিচ্ছি। আমরা আশা করছি, ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ঢাকা শহরের বস্তিগুলোকে বৈধ পানির আওতায় নিয়ে আসতে পারব।’
নিম্ন আয় এলাকার আদর্শ গ্রাহকের সম্মাননা স্মারক বিতরণ অনুষ্ঠানে রাজধানীর বিভিন্ন বস্তির ২৫ জনকে সম্মাননা প্রদান করে ওয়াসা। এই ২৫ জন ব্যক্তি তাদের নিজ নিজ বস্তির সকলকে নিয়ে ওয়াসার বৈধ পানির সংযোগ ব্যবহার করেন এবং সময়মতো বিল পরিশোধ করেন।
বস্তিবাসীকে উদ্দেশে করে ওয়াসা এমডি বলেন, ‘মুম্বাইর বস্তিতে পানি ব্যবস্থাপনা মাস্তানদের আওতায়। কাকরাইল বস্তির পানিও মাস্তানদের হাতে ছিল। আমরা সেটিকে বৈধতার মধ্যে নিয়ে আসতে পেরেছি। সেখানকার গ্রাহকরা আজ এখানে সম্মাননা নিতে এসেছেন। এ শহরের অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি আছে। যাদের টাকার কোনো অভাব নেই। কিন্তু তাদের কাছে আমাদের ৭০ লাখ টাকা বকেয়া আছে। কিন্তু বস্তির মানুষের কাছে আমাদের ১০০ টাকাও বকেয়া নেই।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘ঢাকায় দুই কোটির বেশি মানুষ। লাখ লাখ দরিদ্র মানুষ। তাদেরও পানি দরকার। ওয়াসা ৯০ শতাংশ মানুষকে পানি সরবরাহ করছে। পদ্মার পানিকে, মেঘনার পানিকে পরিশোধন করে আপনার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেটার বিল আপনি দিচ্ছেন না।’
দেশের পার্বত্য অঞ্চলসহ সর্বত্র বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশের সব বড় বড় শহরে সার্ফেজ ওয়াটারের ব্যবস্থা করছি। নদীর পানিকে পরিশোধন করে খাবার ও ব্যবহার উপযোগী করা হচ্ছে। মাটির নিচ থেকে আমরা পানি তুলব না। ২০৩০ সালের মধ্যে সারাদেশের মানুষকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হবে।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পানি সরবরাহ অনুবিভাগ) মুহাম্মদ ইব্রাহিম ও ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান এবং দুস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের (ডিএসকে) নির্বাহী পরিচালক ডা. দিবালোক সিংহ সহ ঢাকা ওয়াসা, ওয়াটারএইড বাংলাদেশ এবং ডিএসকের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।