‘নানা সূচকে দেশ এগুলেও বাড়ছে অঞ্চলভিত্তিক বৈষম্য’
১৯ ডিসেম্বর ২০২০ ২২:০০
ঢাকা: অর্থনৈতিক উন্নয়নের নানা সূচকে দেশ এগিয়ে গেলেও বাড়ছে বৈষম্য। যেখানে শীর্ষ পাঁচ শতাংশ ধনী পরিবারের আয় দেশের মোট আয়ের ২৮ শতাংশ, সেখানে নিচের পাঁচ শতাংশের আয় মাত্র শূন্য দশমিক ২৩ শতাংশ। বিকেন্দ্রীকরণের অভাবে আয়ের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। অনেক মানুষ এখনো বাঞ্চনার শিকার হচ্ছে। করোনার সময়েও প্রতিবন্ধীরা হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা বঞ্চিত হচ্ছেন।
শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীদের সংগঠন ইকোনমিকস স্টাডি সেন্টার (ইএসসি) আয়োজিত ‘ইএসসি সংলাপ পর্ব ৬- বিজয়ের ৫০ বছর: সামাজিক অর্জন ও বঞ্চনার গল্প’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক ড. বিনায়েক সেন, একসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের কো ফাউন্ডার মহুয়া পালসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরা হয়। প্রবন্ধে বলা হয়, ১৯৭২ থেকে ১৯৭৯ সালে ৪ শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়লেও গত দশকে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ শতাংশ। বয়স্কাল ৪০ থেকে বেড়ে ৭২ বছর হয়েছে। গত দুই দশকে স্বাক্ষরতার হার ২৯.২৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৪.৭০ শতাংশ হয়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নীত হয়ে উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে। একই সময়ে বেড়েছে বৈষম্য।
এতে আরও বলা হয়, শীর্ষ পাঁচ শতাংশ ধনী পরিবারের আয় দেশের মোট আয়ের ২৮ শতাংশ, যেখানে নিচের পাঁচ শতাংশ পায় ০.২৩ শতাংশ। বিকেন্দ্রীকরণের অভাবে আয়ের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। এছাড়া ৮১ শতাংশ পুরুষের তুলনায় কেবল ৩৬ শতাংশ কর্মক্ষম নারী শ্রম বাজারে নিয়োজিত। দরিদ্রতম কোয়ান্টাইলের শিক্ষা গ্রহণের হার (মাধ্যমিকের চেয়ে বেশি) কেবল ১.১ শতাংশ। ৫৯ শতাংশ মেয়ের ১৮ বছর বয়সের পূর্বেই বিয়ে হয়, যা এশিয়া প্যাসিফিকে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশে প্রতিটি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্যে বছরে ১৪৮ মার্কিন ডলার ব্যয় হয়।
অর্থনীতি এম এম আকাশ বলেন, ‘দেশে আয় বৈষম্য বেড়ে চলছে। সঞ্চয়ের বৈষম্য বেড়ে চলছে। ধনীরা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। অর্থ পাচার করছে। আবার কেউ মধ্যপ্রাচ্যে যাচ্ছে কাজ করতে। রাজনীতির ক্ষেত্রেও বৈষম্য রয়েছে। প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের ভয়েস যদি উঠে না আসে তবে নীতি নির্ধারণে কোন পরিবর্তন ঘটবে না। বিশেষভাবে বঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কথাও আমাদের তুলে ধরতে হবে।
একসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের কো ফাউন্ডার মহুয়া পাল, করোনায় প্রতিবন্ধীরা কিভাবে সেবা পাবে তা কারো জানা নেই। হাসপাতালগুলো প্রস্তুত নয় কীভাবে প্রতিবন্ধীদের সেবা দিবে। চিকিৎসক ও নার্সদের এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ, বিশেষত করোনার সময়ে। করোনার সময়ে অভিভাবকরা প্রতিবন্ধী সন্তানদের জন্যে সেবা করার লোক পাচ্ছে না। প্রতিবন্ধীরা বহু প্রতিষ্ঠানেই চাকরি করতো, কিন্তু করোনার কারণে পিছিয়ে গেছে। প্রতিবন্ধী মানুষের সাথে চিকিৎসক বা নার্সরা কথা বলতে চায় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিবার বা আত্মীয়ের সঙ্গে কথা বলেন, রোগীর সাথে নয়।