Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শাহজালালে করোনা পজিটিভ যাত্রীকে হেলথ টোকেন!— ব্যবস্থা নিতে চিঠি


১৯ ডিসেম্বর ২০২০ ২২:২৩

ঢাকা: করোনা মহামারিতে লন্ডভন্ড গোটা বিশ্ব। এই মহামারি সামাল দিতে ইতোমধ্যে হিমশিম খেয়েছে পৃথিবীর প্রভাবশালী ও উন্নয়নশীল অনেক দেশ। বাংলাদেশও করোনা মোকাবিলায় নিয়েছে নানান উদ্যোগ। তবুও এখানে প্রতিদিন বাড়ছে করোনা আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। আর এই কারণে বাংলাদেশের বিমানখাতে লেগেছে লোকসানের ধাক্কা। তিনমাস লকডাউনের পর বিমানে যাত্রী পরিবহন শুরুর অনুমতি দেওয়া হয়। তবে যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মানতে নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি সিভিল এভিয়েশনও বিমানে যাত্রী পরিবহনে দেয় নানা নির্দেশনা। কিন্তু সিভিল এভিয়েশনের নির্দেশনাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে করোনা আক্রান্ত কিংবা নেগেটিভ সনদ না থাকলেও যাত্রী পরিবহন করছে বাংলাদেশ বিমানসহ কয়েকটি বিদেশি এয়ারলাইন্স।

বিজ্ঞাপন

আশ্চর্যের বিষয় হলো করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিকেও হেলথ টোকেন দিয়েছে শাহজালাল বিমানবন্দরে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীরা! সেইসঙ্গে করোনা নেগেটিভ সনদ না থাকলেও তারা হেলথ টোকেন পেয়েছে। যার কারণে বিদেশ থেকে অনেক যাত্রীকে আবার বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোও হয়েছে। সম্প্রতি এসব বিষয় অভিযোগ আকারে উল্লেখ করে হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এএইচএম তৌহিদ উল আহসান স্বাস্থ্যকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর একটি চিঠিও দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

সেই চিঠিতে বলা রয়েছে, শাহজালালের বহির্গমন কনকর্স হলে স্বাস্থ্য ডেস্কে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মী কর্তৃক কোভিড-১৯ টেস্টের সনদ পরীক্ষা করে নেগেটিভ সনদধারীদের হেলথ টোকেন দেওয়ার নিয়ম। কিন্তু ১৭ নভেম্বর ডেস্কে দায়িত্বরত স্যানিটারি ইন্সপেক্টর যাত্রী মর্জিনা খাতুনের করোনা পজিটিভ সনদ থাকা সত্ত্বেও হেলথ টোকেন সরবরাহ করেন। ফলে ওই যাত্রীকে সাউদিয়া এয়ারলাইন্সযোগে যাওয়ার পর সেখান থেকে ফেরত পাঠানো হয়। ওই সময়ে হেলথ টোকেন প্রদানের দায়িত্বে ছিলেন স্যানিটারি ইন্সপেক্টর সাইফুল ইসলাম ও কামরুজ্জামান। এছাড়া ২০ নভেম্বর হেলথ ডেস্কে দায়িত্বরত স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মাধবী সরকার যাত্রীর কোভিড-১৯ পজিটিভ সনদ থাকা সত্ত্বেও হেলথ টোকেন সরবরাহ করেন। পরে ওই যাত্রীকে এয়ারলাইন্স কর্তৃক বোর্ডিং কার্ড ইস্যু না করে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে তাকে বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য বিভাগ কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।

এসব বিষয় উল্লেখ করে স্বাস্থ্যকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে। অপরদিকে সিভিল এভিয়েশন যাত্রী পরিবহনে নানা নির্দেশনা দিয়েছে বিমান সংস্থাগুলোকে। সেই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিদেশ থেকে কেউ বাংলাদেশে এলে তার করোনা নেগেটিভ সনদ থাকা বাধ্যতামূলক। বাংলাদেশে আসার আগে সব যাত্রীকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পিসিআর ল্যাবে করোনা পরীক্ষা করাতে হবে। শুধু নেগেটিভ সনদ থাকলেই তারা বাংলাদেশে আসার অনুমতি পাবেন। আর বিমানবন্দরে যাত্রীদের সেই মেডিকেল সনদ দেখাতে হবে।

এই বিষয়ে সম্প্রতি একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, বিএমইটি কার্ডধারী বাংলাদেশি কর্মীরা যে দেশে আছেন সেখানকার পিসিআর ল্যাবে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা সহজলভ্য না হলে তারা অ্যান্টিজেন বা অন্য কোনো গ্রহণযোগ্য পরীক্ষার সনদ নিয়ে দেশে আসতে পারবেন। এছাড়া বিমানবন্দরে কর্মরতদের শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করাসহ যাত্রী, ক্রু ও উড়োজাহাজ জীবাণুমুক্তকরণ প্রক্রিয়া যথাযথভাবে করতে হবে। বিশেষ করে চীন, সৌদি আরব, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কাতার, বাহরাইন, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাজ্যে চলাচল করা ফ্লাইটের ক্ষেত্রে এ নির্দেশনা কার্যকর হবে।

অপরদিকে সম্প্রতি ১০টির বেশি এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে পাঁচ শতাধিকের বেশি যাত্রী করোনা সনদ ছাড়াই হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। সম্প্রতি সৌদি এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে মকবুল ও মহসিন নামে দুই যাত্রী করোনা পজিটিভ সার্টিফিকেট থাকার পরও দেশে আসেন। পরে তাদের বিমানবন্দর থেকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।

হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে স্বাস্থ্যকর্মীদের দায়িত্বে অবহেলা এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিমানবন্দর পরিচালকের চিঠি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য ডেস্কের সহকারী পরিচালক ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘পজিটিভ রোগী এলে এয়ারলাইন্স সেটি ধরতে পারে। এখন থেকে কোনো পজিটিভ থাকলে সেটা রাউন্ড সার্কেল দিয়ে লাল কালি দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট শাখাকে বলে দেওয়া হয়েছে। সার্টিফিকেটের লেখাগুলো রেগুলার ফন্টের। ফলে নেগেটিভ এবং পজেটিভ ভুল হতেই পারে। আর কিউআর কোড স্ক্যানার আসাতে তারা লেখা না দেখে কোড মেরে দিচ্ছে। কিন্তু স্বাস্থ্যকর্মীকে রিপোর্ট নেগেটিভ না পজিটিভ সেটা তো দেখতে হবে। আর এখানে এটাই ভুল হয়েছে। কিন্তু ৯ তারিখের পর আর এমনটা ঘটেনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন যাত্রী অনেক বেড়েছে। প্রতিদিন ৩০টি ফ্লাইট বিদেশ যাচ্ছে আবার আসছে। একই কাজ করতে করতে ভুল ভ্রান্তি হতেই পারে। তবে ভুলের জন্য তাদের কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী সময়ে যদি এমন হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ভুল এমন একটি ভুল যে- যার মাশুল পুরো জাতিকে বহন করতে হবে। যেমন- ধরুন ইতালিতে গেল আর ইতালি বলল বাংলাদেশের কাজ খারাপ। তাদের সাথে কোনো সম্পর্ক রাখার দরকার নেই। ফলে সব বিমান বন্ধ হয়ে যাবে। তাই আমরা বিষয়টি কঠোরভাবে দেখছি।’

হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এএইচএম তৌহিদ-উল-আহসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘দায়িত্বে অবহেলার কারণে আমরা চিঠিটি দিয়েছি। আমরা চাই তারা আরও সতর্কতার সঙ্গেও দায়িত্ব পালন করুক। একজন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি যদি দেশে-বিদেশে যাওয়ার হেলথ কার্ড পান তাহলে এটা দুঃখজনক। সেইসঙ্গে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিও বিদেশে চলে যাচ্ছেন আর সেটা ধরা পড়ছে না। এটা কিভাবে সম্ভব? তাই আমরা বিষয়টি আরও সতর্ক এবং গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য চিঠি দিয়েছি।’

উল্লেখ্য, করোনার কারণে বাংলাদেশে মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক রুটে সকল বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় শুধু চার্টার্ড ফ্লাইট চালু ছিল। আর বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল শুরু হয় জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে। যদিও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চলাচল শুরু হয় ১ জুন। তবে দেশীয় কয়েকটি বিমানের পুরো ফ্লাইট এখনও আন্তর্জাতিক রুটে চালু হয়নি।

এএইচএম তৌহিদ উল আহসান করোনা পজিটিভ চিঠি পরিচালক বহির্গমন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্বাস্থ্য অধিদফতর হেলথ টোকেন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

সিনিয়র সাংবাদিক বদিউল আলম আর নেই
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৩১

সম্পর্কিত খবর