ওয়াশ সুবিধায় ৮৫ লাখ মানুষ, বিশ্বব্যাংক ঋণ দেবে ১৮৩৩ কোটি টাকা
২০ ডিসেম্বর ২০২০ ১৩:৫০
ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড ১৯) পরিস্থিতি মোকাবিলায় গ্রামীণ অঞ্চলে ওয়াশ ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এ জন্য বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে বড় ধরনের আর্থিক পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য হাত ধোয়া, নিরাপদ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন সুবিধা মিলবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে প্রায় ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।
প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারি তহবিল থেকে যাবে ৫০ কোটি ৮২ লাখ টাকা। আর ঋণ হিসেবে বিশ্বব্যাংক দেবে ১ হাজার ৮৩২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। প্রকল্পটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘মানবসম্পদ উন্নয়নে গ্রামীণ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি প্রকল্প।’
দেশের ৩০ জেলার ৯৮ উপজেলায় নতুন বছরের প্রথম থেকে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর এই প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ শুরু করবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষ হবে ২০২৫ সালে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রকল্পটি প্রস্তাব পাওয়ার পর চলতি বছরের ১৯ আগস্ট প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ জানায়, এসডিজির প্রতিশ্রুতি অনুসারে নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন বিষয়ে সকলের জন্য উন্নত পরিষেবা নিশ্চিত করা, স্থানীয় সরকার বিভাগগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক বিকাশ, পানির গুণগতমান এবং স্থায়িত্বেও সমস্যাগুলো মোকাবিলা, গ্রামীণ অঞ্চলে পাইপযুক্ত পানি সরবরাহ কভারেজ বৃদ্ধি এবং টেকসই পরিচালনার সঙ্গে উন্নত টয়লেটের ব্যবহার বৃদ্ধি স্থানীয় সরকার বিভাগের অন্যতম দায়িত্ব।
প্রকল্পটি প্রথমত, প্রাথমিকভাবে সমস্যা সংকুল গ্রামীণ অঞ্চলে নিরাপদ পরিচালিত পাইপযুক্ত পানি সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করে জীবনযাত্রাকে উন্নত করতে অবদান রাখবে। যা পুষ্টি, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার ফলাফলকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে। দ্বিতীয়ত, ওয়াশ (পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও হাইজিন) পরিষেবাগুলোতে অর্থায়নের জন্য বেসরকারি মূলধনকে জড়িত করা এবং প্রতিযোগিতামূলক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার মাধ্যমে ওয়াশ পরিষেবাগুলোর বাজার সরবরাহ বৃদ্ধি ও জোরদার করে মূল বাধা সমাধান করবে। তৃতীয়ত, প্রকল্পটি জলবায়ু সম্পর্কিত উন্নত স্যআনিটেশন সুবিধা তৈরির মাধ্যমে এবং মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নতীর মাধ্যমে ভূ-উপরিস্থ এবং ভূ-গর্ভস্থ পানির দূষণকে হ্রাস করতে এবং জনস্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে ভূমিকা রাখবে।
প্রস্তাবিত প্রকল্পটি জনসমাগমপূর্ণ স্থানে এবং বিদ্যালয়ের গুণগতমানের ওয়াশ পরিষেবাগুলো বাড়িয়ে মূলত পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধে এবং বর্তমান কোভিড-১৯ মহামারিসহ সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাবের সময়েও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অবদান রাখবে।
এ প্রকল্পের আওতায় দেশের ৩০টি জেলার মোট ৯৮টি উপজেলায় বসবাসকারী প্রায় সাড়ে ৪ মিলিয়ন (৪০ লাখ) লোক তাদের বাসভবনে নিরাপদে পরিচালিত ওয়াশ সুবিধা পাবেন। আরও প্রায় ১ মিলিয়ন (১০ লাখ) লোক বিভিন্ন কমিউনিটি ক্লিনিকসহ জনসমাগমপূর্ণস্থানে নিরাপদে পরিচালিত স্যানিটেশন সুবিধাগুলো পাবেন। এছাড়া প্রায় ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন (২৫ লাখ) লোক কাউন্টারপার্টের (পিকেএসএফ) তহবিলের মাধ্যমে নিরাপদে পরিচালিত ওয়াশ সুবিধাগুলো পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। অন্যান্য সুবিধা পাবেন আরও ১০ লাখ মানুষ।
পিকেএসএফ তার কাজের জন্য ভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিশ্বব্যাংক থেকে অর্থ পাবে এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর দাখিল করা এ প্রকল্পে পিকেএসএফের কোনো কাজ অন্তর্ভুক্ত নেই।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে, ৭৮টি লার্জ পাইপ ওয়াটার সাপ্লাই স্কিম, ৩ হাজার ৩৬৪টি কমিউনিটি পর্যায়ে পাইপড ওয়াটার সাপ্লাই স্কিম, ৩৫২টি পাবলিক স্যানিটেশন ও হাইজিন সুবিধা, ৫০০টি কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো স্যানিটেশন ও হাইজিন সুবিধা, ৭৮০টি কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর টয়লেটে রানিং ওয়াটার সুবিধা দেওয়া, ৩ লাখ ৫১ হাজার ২৭০টি অতি দরিদ্রদের জন্য টয়লেট, ৮৮২টি কোভিড-১৯ রোধে পানি সুবিধাদিসহ হাত ধোয়া স্টেশন নির্মাণ, কোভিড-১৯ রোধে প্রয়োজনীয় উপকরণাদি সরবরাহ এবং ৩৪০ জন মাস কারিগরি পরামর্শক নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মামুন-আল রশীদ পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের ৩০ জেলার মোট ৯৮টি উপজেলার গ্রামীণ এলাকায় নিরাপদ সুপেয় পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও কোভিড-১৯ রোধে রানিং ওয়াটারসহ হাইজিন সুবিধা দেওয়া সম্ভব হবে। এর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।’