সমন্বিত ভর্তি পদ্ধতিকেই ভবিষ্যত মনে করছেন উপাচার্যরা
২০ ডিসেম্বর ২০২০ ১৮:৫৮
ঢাকা: সমন্বিত ভর্তি পদ্ধতিকেই ভবিষ্যত বলছেন দেশের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা। শিক্ষার্থীদের হয়রানি আর অভিভাবকদের অতিরিক্ত খরচ কমাতে এই পদ্ধতিটি দ্রুত জনপ্রিয় হবে বলেও মনে করছেন তারা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মীজানুর রহমান বলেন, ‘এই ভর্তি পদ্ধতিটি অনেক বেশি সহজ এবং সাশ্রয়ী। ফলে এটি দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করবে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় এ বছর সমন্বিত ভর্তি পদ্ধতিতে সায় দেয়নি, তারাও তখন এই পদ্ধতিতে ফিরতে চাইবে। কারণ এটিই ভবিষ্যত।‘
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এতদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা যে পরিশ্রম করেছে এখন এটি পুরোপুরিভাবে কমে যাবে। পরীক্ষা দিতে খরচ হবে সামান্য। এতে করে হয়তো প্রতিষ্ঠানের আয় কমবে, কিন্তু যাদের জন্য এই প্রতিষ্ঠান তাদের বহুমুখী উপকার হবে।’
সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিপক্ষে ঢাবির একাডেমিক কাউন্সিল
তিনি আরও বলেন, ‘ফর্ম বিক্রি করে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানিই বেশ লাভবান হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের আয়ের কথা বিবেচনা করে আমরা পরীক্ষার্থীদের পরিশ্রম বাড়িয়ে দিতে পারি না। এটি কখনোই ভালো আচরণ হতে পারে না। এজন্য আমি বলবো সবাই যেন সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়। ভবিষ্যতে এই পদ্ধতিটি শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয় হবে এবং তারাও এই দাবিটি সামনে আনবে।’
এই বক্তব্যে একমত হয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকুল আরেফিনও। তিনি বলেন, ‘আজ হোক কাল হোক সমন্বিত পদ্ধতিতেই সবাই ধীরে ধীরে যুক্ত হবেন।’
এদিকে এবছর গত ১ ডিসেম্বর সবশেষ দেশের ১৯টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছুদের সুবিধার কথা বিবেচনায় কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বিত পদ্ধতিতে পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তির বিষয়ে একত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
এ বছর ২৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের জন্য অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষার কথা জানায়। পরে ফেব্রুয়ারিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করবে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এতে রাজি হয়নি।
এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় আবেদনের জন্য ন্যূনতম জিপিএ এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফল যোগ করে মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য জিপিএ ৬, বাণিজ্য বিভাগের জন্য জিপিএ ৬.৫ ও বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জিপিএ ৭ নির্ধারণ করা হয়েছে। তাদের এইচএসসি সিলেবাসের ভিত্তিতে আলাদা আলাদা ভর্তি পরীক্ষা হবে।
ভর্তি পরীক্ষার জন্য ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ই নিজেরা কেন্দ্র পরিচালনা করবে। এ বছর ও গত বছরের উচ্চমাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা এবারের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, ‘পরীক্ষা হবে বহুনির্বাচনি প্রশ্নে। আর পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে এইচএসসি পস করা দুটি ব্যাচ। পরীক্ষার্থীদের এমসিকিউ পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ক্ষেত্রে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির জন্য আলাদাভাবে ন্যূনতম নম্বর ঠিক করতে পারবেন।’
ভর্তি পরীক্ষা শর্তে বলা আছে, কোনো পরীক্ষায় জিপিএ ৩ এর কম থাকলে পরীক্ষার জন্য আবেদন করা যাবে না। তবে এসএসসি ও এইচএসসি ফলাফল কিভাবে বিবেচনায় নেওয়া হবে সেই সিদ্ধান্ত এখনো নেওয়া হয়নি।
মানবিক শিক্ষার্থীদের ইউনিটে পরীক্ষা হবে বাংলা, ইংরেজি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ে। এর মধ্যে বাংলায় ৪০, ইংরেজিতে ৩৫ এবং আইসিটিতে ২৫ নম্বরের পরীক্ষা হবে।
বাণিজ্য শিক্ষার্থীদের জন্য হিসাববিজ্ঞান ২৫ নম্বর, ব্যবস্থাপনা ২৫ নম্বর, ভাষা ২৫ নম্বরের মধ্যে বাংলায় ১৩ ও ইংরেজিতে ১২ নম্বর এবং আইসিটি ২৫ নম্বর বিষয়ে পরীক্ষা হবে।
বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের ভাষা ২০ নম্বরের মধ্যে বাংলায় ১০ ও ইংরেজিতে ১০ নম্বর, রসায়ন ২০ নম্বর, পদার্থ ২০ নম্বর এবং আইসিটি, গণিত ও জীববিজ্ঞান বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে। এর মধ্যে আইসিটি, গণিত ও জীববিজ্ঞানের মধ্যে যেকোনো দুটি বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে। যার প্রতিটির নম্বর হবে ২০ করে।
পরীক্ষা হবে করোনার প্রকোপ কমার পর।