প্রথম পর্যায়ে যারা পাচ্ছেন করোনার টিকা
২০ ডিসেম্বর ২০২০ ২০:০৩
ঢাকা: বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে এখন পযর্ন্ত সবচেয়ে বেশি আলোচিত শব্দগুলোর একটি ‘ভ্যাকসিন’। বলা চলে, গোটা বিশ্ব উন্মুখ হয়ে আছে এই ভ্যাকসিনের জন্য। জনগণের জন্য টিকা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকারও।
ইতোমধ্যেই অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্রিটিশ-সুইডিশ ওষুধ নির্মাতা অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত তিন কোটি ডোজ টিকা সংগ্রহের জন্য ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে ক্রয়চুক্তি সই করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মাধ্যমে এই ভ্যাকসিনটি নিয়ে আসছে বাংলাদেশ সরকার। প্রত্যেককে এই ভ্যাকসিনের দুটি করে ডোজ নিতে হবে। প্রথম ডোজ নেওয়ার ২৮ দিন পর নিতে হবে দ্বিতীয় ডোজ।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ক্রয় চুক্তি অনুযায়ী জানুয়ারি থেকে শুরু করে পরবর্তী ছয় মাসে ৫০ লাখ করে মোট তিন কোটি ভ্যাকসিন পাওয়া আশা করছে বাংলাদেশ। আর এজন্য নেওয়া হচ্ছে নানা ধরনের প্রস্তুতি। দেশে টিকা আনা, সংরক্ষণ ও বিতরণ ব্যবস্থাপনা নিয়েও নেওয়া হচ্ছে নানারকম পদক্ষেপ। সরকারের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ম্যানেজমেন্ট টাস্কফোর্স ইতোমধ্যেই টিকা দেওয়ার জন্য জাতীয় পর্যায় থেকে শুরু করে জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও মনিটরিং কমিটি গঠনের পরিকল্পনা নিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনার জন্য জাতীয় পর্যায়ে তিনটি কমিটি গঠিত হয়েছে। এর মধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে উপদেষ্টা করে গঠন করা হয়েছে কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছে টিকা ব্যবস্থাপনা ওয়ার্কিং গ্রুপ। এছাড়াও স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরার নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছে কোভিড-১৯ টিকা বিতরণ ও প্রস্তুতি কমিটি।
কোভিড-১৯ টিকা বিতরণ ও প্রস্তুতি কমিটির অন্যতম সদস্য ও রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) কার্যকরী সদস্য ডা. মোশতাক হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ইতোমধ্যেই জাতীয়ভাবে কোভিড-১৯ টিকা বিতরণ ও প্রস্তুতি পরিকল্পনা বিষয়ে একটি প্রাথমিক খসড়া শেষ করা হয়েছে। খসড়া পরিকল্পনা অনুমোদনের জন্য জমা দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী চারটি ধাপে টিকা বিতরণ করা হবে। প্রথম পর্যায়ে দুই ধাপে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রথম ধাপে দেশের মোট জনসংখ্যার তিন শতাংশ অর্থাৎ ৫১ লাখ ৮৪ হাজার ২৮২ জন টিকা পাবেন। দ্বিতীয় ধাপে মোট জনসংখ্যার সাত শতাংশ অর্থাৎ এক কোটি ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৭ জন টিকা পাবেন।
তিনি বলেন, প্রথম পর্যায়ে দুই ধাপে বিতরণ শেষে দেশে দ্বিতীয় পর্যায়ের টিকা দেওয়া শুরু হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে মোট জনসংখ্যার ১১ থেকে ২০ শতাংশ অর্থাৎ এক কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার ৯৩৮ জন টিকা পাবেন। তৃতীয় পর্যায়ে টিকা পাবেন দেশের মোট জনসংখ্যার ২১ থেকে ৪০ শতাংশ অর্থাৎ তিন কোটি ৪৫ লাখ ৬১ হাজার ৮৭৭ জন। চতুর্থ ও সর্বশেষ পর্যায়ে দেশের মোট ৪১ থেকে ৮০ শতাংশ অর্থাৎ ছয় কোটি ৯১ লাখ ২৩ হাজার ৭৫৪ জনকে টিকার আওতায় আনা হবে।
হার্ড ইমিউনিটির (গণরোগ প্রতিরোধক্ষমতা) কারণে বাকি ২০ শতাংশ মানুষের টিকা প্রয়োজন নাও পড়তে পারে বলে উল্লেখ করেন ডা. মোশতাক হোসেন।
তিনি বলেন, ‘করোনার টিকাদান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে গঠিত কিছু কমিটি কাজ শুরু করেছে। এই কমিটির অন্যতম কাজই হবে টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার জনগোষ্ঠীর তালিকা তৈরি করা।
প্রথম পর্যায়ের প্রথম ধাপে ধারাবাহিকভাবে যারা পাবেন করোনার টিকা
প্রথম পর্যায়ের প্রথম ধাপে দেশের মোট জনসংখ্যার তিন শতাংশ অর্থাৎ ৫১ লাখ ৮৪ হাজার ২৮২ জন টিকা পাবে।
১. প্রথম পর্যায়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে যারা কোভিড-১৯ ইউনিটের চিকিৎসাসেবার সঙ্গে জড়িত তাদের টিকা দেওয়া হবে। হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও মিডওয়াইফারি কর্মকর্তা, স্বাস্থ্যকর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভারসহ স্বাস্থ্যসেবায় জড়িতরা এই ধাপের অন্তর্ভুক্ত হবে। এই ধাপে তিন লাখ ৩২ হাজার ২৭ জনকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই ধাপে যেসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সরকারি সাহায্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছে তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
২. এই পর্যায়ের একইসঙ্গে দেশের বেসরকারি ও স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে যারা কোভিড-১৯ ইউনিটের চিকিৎসাসেবার সঙ্গে জড়িত তাদেরও টিকা দেওয়া হবে। সেইসঙ্গে দেশের স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন এনজিও এই ধাপে যুক্ত হবে। এই ধাপে বেসরকারিভাবে কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসায় জড়িত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা দেওয়া হবে যার সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ।
৩. খসড়া পরিকল্পনা অনুযায়ী এর পরেই টিকা দেওয়া হবে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের, যারা কোভিড-১৯ চিকিৎসার সঙ্গে সরাসরিভাবে যুক্ত নয়। টিকা বিতরণ থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যখাতকে সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়াও এই ধাপে প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কর্মী, অফিস সহায়ক, লন্ড্রি, কিচেন স্টাফ, গাড়িচালক ও হাসপাতালের সঙ্গে জড়িতরা টিকা পাবেন। এই সেক্টরের আনুমানিক এক লাখ ২০ হাজার জনকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
৪. এর পর পরিকল্পনায় দেশের দুই লাখ ১০ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে একটা বড় অংশের বয়স ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে হওয়ায় তারা কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে সবসময়। আর তাই মুক্তিযোদ্ধাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রথম ধাপেই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পরে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে পরিকল্পনায়।
৫. পরিকল্পনা অনুযায়ী এর পর চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসাসেবার সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি দেশের জন্য দায়িত্ব পালনে সংক্রমণের ঝুঁকির মুখে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের টিকা দেওয়া হবে। এই ক্ষেত্রে পাঁচ লাখ ৪৬ হাজার ৬১৯ জনকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মধ্যে দুই লাখ ১২ হাজার জন পুলিশ, দুই হাজার ৬১৩ জন নিয়মিত কর্মকর্তা ও কর্মচারী, প্রায় ১৪ হাজার ব্যাটালিয়ান আনসার, ১৮ হাজার আনসার, তিন লাখ প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবকদের টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে এই ধাপে ৪৩ লাখ ভিডিপি সদস্যকে টিকা দেওয়ার জন্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
৬. এই পর্যায়ে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবি, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব), কোস্ট গার্ড ও প্রেসিডেন্ট গার্ড সদস্যকে টিকা দেওয়া হবে। এই ধাপে দুই লাখ ৭৪ হাজার ৯১৩ জন সেনাবাহিনী, ২২ হাজার নৌবাহিনী, ১৪ হাজার বিমানবাহিনী, ৫০ হাজার বিজিবি সদস্যদের টিকা দেওয়া হবে। দেশে র্যাবের নিয়োগ সাধারণত পুলিশবাহিনী ও সেনাবাহিনী থেকে হয়ে থাকে। তাই এই বাহিনীর কর্মকর্তারা স্ব স্ব বাহিনীর আওতায় টিকা পাবেন। একইসঙ্গে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের সদস্যরা আর্মড ফোর্স বাহিনীর আওতায় টিকা পাবেন।
৭. পরিকল্পনা অনুযায়ী এর পর দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়সহ সচিবালয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের পাঁচ হাজার কর্মকর্তাকে টিকা দেওয়া হবে।
৮. এই ধাপে দেশের ৫০ হাজার মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও গণমাধ্যমকর্মীকে টিকা দেওয়া হবে। এইক্ষেত্রে শুধুমাত্র তাদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে যারা ফ্রন্টলাইনে থেকে কাজ করে যাচ্ছে।
৯. এর পর দেশের এক লাখ ৭৮ হাজার ২৯৮ জন জনপ্রতিনিধিকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। এর মধ্যে জাতীয় সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধি, সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরাও অন্তর্ভুক্ত হবেন। টিকা বিতরণ কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা ও নিজ নিজ এলাকার জনগণের সংস্পর্শে আসার কারণে তাদের এই ধাপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
১০. পরিকল্পনা অনুযায়ী সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার বিভিন্ন রকমের সেবাকর্মীরা যারা সরাসরি মানুষকে সেবা দিয়ে থাকেন তারা টিকা পাবেন। এক লাখ ৫০ হাজার কর্মী টিকা পাবেন এই পরিকল্পনার আওতায়।
১১. এ পর্যায়ে দেশের বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার পেশাজীবী টিকা পাবেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষের সঙ্গে সরাসরি সংস্পর্শে আসার কারণে এই ব্যক্তিরা সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে। এজন্য বিভিন্ন মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, মন্দিরের পুরোহিত, চার্চ, বৌদ্ধমন্দির ও অন্যান্য উপাসনালয়ের পেশাজীবীরা এই টিকা পাবেন।
১২. একই সঙ্গে প্রথম পর্যায়ে দেশের বিভিন্ন কবরস্থানে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের কবর দেওয়ার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা টিকা পাবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী দাফন ও সৎকারে যুক্ত ৭৫ হাজার কর্মী এই টিকা পাবেন।
১৩. গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনায় যুক্ত ওয়াসা, ডেসকো, তিতাস, পল্লীবিদ্যুৎ, ডেসার কর্মীদের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদেরও এই পর্যায়ে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা আছে খসড়া অনুযায়ী। এক্ষেত্রে চার লাখ জনসংখ্যাকে টিকার আওতায় আনা হবে।
১৪. দেশের বিভিন্ন জল, স্থল ও বিমানবন্দরে কাজ করা এক লাখ ৫০ হাজার কর্মীকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে এই পর্যায়ে। এছাড়াও এক লাখ ২০ হাজার অদক্ষ প্রবাসী শ্রমিক যারা কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশে ফিরে যাবেন তাদের টিকা দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে দক্ষ শ্রমিক অথবা যদি কোনো ভ্রমণকারী আলাদাভাবে টিকা পেতে চায় তবে সেটি অতিরিক্ত খাত থেকে দেওয়া যেতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে খসড়া পরিকল্পনায়।
১৫. এর বাইরে দেশের জেলা ও উপজেলায় সরাসরি মানুষের সংস্পর্শে এসে কাজ করতে হয় এমন চার লাখ সরকারি কর্মচারীদের টিকা দেওয়া হবে।
১৬. এছাড়াও এক লাখ ৯৭ হাজার ৬২১ জন ব্যাংক কর্মচারীকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
১৭. এইচআইভি, যক্ষ্মা, ক্যানসার আক্রান্ত বিভিন্ন রোগীসহ যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম ও বিশেষভাবে ঝুঁকির মুখে আছে এমন ৬ লাখ ২৫ হাজার জনকে টিকা দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে রোগ অনুযায়ী ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করা হবে। যদি কার্যকর না হয়ে থাকে তবে যথার্থ ভ্যাকসিন প্রদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
১৮. খসড়া পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রায় ৭৮ হাজার জনকে দেওয়ার মতো টিকা বাফার রিজার্ভ হিসেবে রাখা হবে জরুরি ও মহামারি সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনায় জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের জন্য।
প্রথম পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে যারা পাবেন করোনার টিকা
খসড়া পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে ৬০ বছর ও এর চাইতে বেশি বয়ষ্ক জনগণকে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২১ সালের মধ্যে দেশের ৬০ বছর অথবা এই বয়সসীমার অধিক বয়সের জনসংখ্যা হবে এক কোটি ৪৭ লাখ ১০ হাজার ৩৬৯ জন। এই সংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার ৮ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যার মধ্যে প্রথম সাত শতাংশ এক কোটি ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৭ জনকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনার আওতায় আনা হয়েছে যা মোট জনসংখ্যার সাত শতাংশ। বাকি ১ দশমিক ২ শতাংশ অন্যান্য ক্যাটাগরিতে টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে খসড়া পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়েছে।
যারা বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন ও চিকিৎসায় নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের প্রয়োজন হতে পারে এমন জনগোষ্ঠীকেও খসড়া পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে বিবেচনায় রাখা হয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী অন্যান্য রোগের আক্রান্ত ও বয়ষ্কদের মধ্যে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুহার এখন পর্যন্ত বেশি।
ডা. মোশতাক হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এভাবে একটা খসড়া করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রেজিস্টার করতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের কর্মীদের তালিকা করতে বলা হয়েছে। টিকা আসার বিষয় কনফার্ম হলে জেলা উপজেলা পর্যায়েও তালিকা করা হবে। এক্ষেত্রে একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্রের ব্যবহার করে যাদের বয়স ৬০ বছরের বেশি তাদের রেজিস্ট্রশন করানো হবে। এছাড়াও তৃণমূল পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, জন্ম নিবন্ধন কার্ড দেখে বয়স অনুযায়ী এইসব কাজে সাহায্য করবে। শহরের ক্ষেত্রে মিউনিসিপালটি, সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার কর্মীরা এ কাজে সাহায্য করবে। আগে থেকে তালিকা করলে কিছুটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। তাই যখন নিশ্চিত হওয়া যাবে তখন এই কাজ শুরু করা হবে। আমরা যখন নিশ্চিত হবো টিকা আসার বিষয়ে সেখানে থেকে আট সপ্তাহ সময় লাগবে টিকা প্রদানের জন্য।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যারা কাজ করছেন তারাও টিকা পরিকল্পনার আওতায় আসবে। তবে রোহিঙ্গাদের টিকা দানের বিষয়ে সরকার দাতাসংস্থার কাছ থেকে সাহায্য চাইতে পারে বলেও জানান ডা. মোশতাক হোসেন।
টিকা বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা মেনে টিকা বিতরণ বিষয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে আসলে কোনো ব্যত্যয় ঘটানোর সুযোগ নেই। এছাড়াও ভ্যাকসিন দেশে আনার পর সংরক্ষণ থেকে শুরু করে বিতরণের আগ পর্যন্ত যতধরণের প্রস্তুতিমূলক কাজ আছে সেগুলো নিয়েও কাজ করা হচ্ছে। যাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা এফডিএ’র অনুমোদন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা দ্রুত টিকা সংগ্রহ করে বিতরণ করতে পারি।