‘শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা অব্যাহত রাখতে পদক্ষেপ দরকার’
২০ ডিসেম্বর ২০২০ ২২:৩১
ঢাকা: স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশের কাতার থেকে উত্তরণ বাংলাদেশের জন্য সম্মানজনক। তবে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে রফতানি বাণিজ্যে। পণ্য রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা আর থাকবে না। এ কারণে রফতানি আয় বর্তমানের অন্তত ১৪ ভাগ কমে যেতে পারে। এই অভিঘাত থেকে সুরক্ষা পেতে এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা অব্যাহত রাখার বিষয়ে জোর দিতে হবে। জোটগত প্রধান বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং অন্যান্য প্রচলিত-অপ্রচলিত সব বাজার হিসেবে পরিচিত সব দেশ ও সরকারের সঙ্গে দরকষাকষির কাজটি চালিয়ে যেতে হবে।
রোববার (২০ ডিসেম্বর) ‘এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি’ শিরোনামে এক ওয়েবিনার এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও সরকারের প্রতিনিধিরা। শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা অব্যাহত রাখতে আঞ্চলিক জোট, বহুপাক্ষিক ও দ্বিপাক্ষিক পর্যায়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। কোনো কোনো দেশ ও জোটের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) কিংবা অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) করার কথাও বলেছেন তারা।
অর্থনীতি বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনোমিক রিপোটার্স ফোরাম (ইআরএফ), গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফল ডেভেলপেমন্ট (র্যাপিড)ও এশিয়া ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এই আয়োজন করেছে। জুম প্ল্যাটফর্মে আয়োজিত এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্র এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিন। মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন র্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. এম এ রাজ্জাক। ইআরএফ সভাপতি শারমিন রিনভীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওয়েবিনারে অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশে এশিয়া ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি কাজী ফয়সল বিন সিরাজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ। ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশেদুল ইসলাম।
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, ‘এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আছে সরকারের। দীর্ঘদিন এলডিসির মধ্যে পড়ে থাকা দেশের জন্য সম্মানের বিষয় নয়। এলডিসি থেকে উত্তরণের ফলে বাণিজ্য বিঘ্নিত হতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। তবে প্রকৃতই কী হবে সেটা কেবল ২০২৪ সালেই বোঝা যাবে।’
তিনি বলেন, ‘বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখতে ইইউর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া সুযোগ আছে। ব্রেক্সিট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর যুক্তরাজ্যের সঙ্গেও এই আলোচনা করা যায়। একইসঙ্গে প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গেও বাণিজ্য বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে।’
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, ‘এলডিসি নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। তবে যথাযথ প্রস্তুতি নিতে হবে। ব্যবসা বাণিজ্য সহজ করার জন্য বিডার বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে হবে এবং সরকার নিচ্ছে।’
বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন বলেন, ‘এলডিসি উত্তরণের পরও রূপান্তর কাল হিসেবে অতিরিক্ত আরও কয়েক বছর শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা পাওয়ার বিষয়ে চেষ্টা করা হচ্ছে। ইইউতে জিএসপি প্লাস সুবিধা নিয়ে আলোচনা চলছে। এলডিসিভুক্ত দেশগুলো নিয়ে সম্মিলিতভাবেও চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ‘
মূল প্রবন্ধে ড. এক রাজ্জাক বলেন, ‘মোট রফতানির ৭৫ শতাংশ এখন শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় আছে। এলডিসি থেকে উত্তরণে শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা হারানোর পাশাপাশি পণ্যে প্রণোদনা দেওয়া যাবে না। শুল্ক বাড়বে গড়ে ১৪ শতাংশ। সবচেয়ে বড় বাজার ইইউতে বাড়বে ৯ শতাংশ, কানাডায় ১৭, চীনে ১৬ দশমিক ২ ও জাপানে ৮ দশমিক ৭১ শতাংশ। ফলে রফতানি কমে যেতে পারে ৭০০ কোটি ডলারের মতো।
সবচেয়ে বড় বাজার ইইউ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ভিয়েতনামের সঙ্গে জোটের এফটিএ হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশটির শুল্ক কমছে ইইউতে। ২০২৭ সাল নাগাদ ভিয়েতনামের পণ্য যাবে বিনা শুল্কে। যেখানে বাংলাদেশের পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্কারোপ হবে। তখন কঠিন অবস্থায় পড়বে বাংলাদেশ।’
প্রসঙ্গত, আগামী ২২ থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট কমিটির (সিডিপি) এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করবে। ধারণা করা হচ্ছে, এলডিসি থেকে উত্তরণে বাংলাদেশের পক্ষে সুপারিশ পাওয়া যাবে। এই সুপারিশের পর ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিশ্ববাণিজ্যে শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা অব্যাহত থাকবে। ২৮ জাতির জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) আরও চার বছর অর্থাৎ ২০২৭ সাল পর্যন্ত এই সুবিধা থাকবে। এর পর এই সুবিধা আর থাকবে না। তখন রফতানিতে অন্তত ১০ শতাংশ কমবে।
পদক্ষেপ বাণিজ্য সুবিধা রফতানি শুল্কমুক্ত সুবিধা স্বল্পোন্নত দেশ