Wednesday 11 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মিলছে ই-টেন্ডারিংয়ের সুফল, এক অর্থবছরেই সাশ্রয় ৯৩৫০ কোটি টাকা


২১ ডিসেম্বর ২০২০ ০৮:৫১

ঢাকা: ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অংশ হিসেবে সরকারের প্রবর্তিত ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্টের (ই-জিপি) সুফল মিলতে শুরু করেছে। ই-টেন্ডারিংয়ে বেঁচে যাচ্ছে সময়, অর্থ, পরিবেশ, শ্রম, হয়রানি ও হাঙ্গামা। সেই সঙ্গে এই সিস্টেম চালু হওয়ায় শুধুমাত্র ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সরকারি ক্রয় কাজে সাশ্রয় হয়েছে ১.১ বিলিয়ন ডলার। যা স্থানীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে) প্রায় ৯ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা।

এছাড়া ইলেকট্রনিক প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) বাস্তবায়ন সংক্রান্ত প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে বেঁচে যাবে ১০ হাজার ২৮৭ মিলিয়ন বা ১ হাজার ২৮ কোটি ৭০ লাখ পৃষ্ঠা কাগজ। সেই সঙ্গে করোনার মতো লকডাউন পরিস্থিতিতেও সচল ছিল ই-জিপি অর্থাৎ ই-টেন্ডারিং।

এসময় (মার্চ-ডিসেম্বর-২০২০) আহ্বান করা হয়েছে ৬৯ হাজার ৪৪৭টি দরপত্র। এগুলোর মোট মূল্য ৭৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে এসব তথ্য। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আওতায় সেন্টাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) এটি বাস্তবায়ন করছে।

বিশ্বব্যাংকের সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ই-জিপি ব্যবস্থায় টেন্ডারে কাগজের ব্যবহার ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় ৬.৯ শতাংশ কমে গেছে। এর ফলে শুধুমাত্র ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সরকারি ক্রয়কাজে ১.১ বিলিয়ন ইউএস ডলার সাশ্রয় হয়েছে। এ হিসেবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকারি ক্রয়ে মোট ব্যয়ের ৬২ শতাংশ ই-জিপির মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। টেন্ডার প্রক্রিয়াকরণের সময় ২০১৬-১৭ এর ১০০ দিন থেকে কমে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫৮ দিনে নেমে এসেছে। বর্তমানে সিপিটিইউ সরকারি ক্রয়ের ডিজিটাইজেশনে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এটি ২০১৭ সালে শুরু হয়ে ২০২৩ সালের  ডিসেম্বরে শেষ হবে।

বিশ্বব্যাংকের মূল্যায়ন অনুযায়ী, বাস্তবায়ন হলে ই-জিপির ফলে ৪৯৭ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরত্বের যাতায়াত কমে যাবে। এতে এক লাখ ৫৩ হাজার ৫৫৯টন কার্বনডাই অক্সাইড নিঃসরণ কমবে। প্রকল্প মেয়াদে ১০ হাজার ২৮৭ মিলিয়ন পৃষ্ঠার কাগজও সাশ্রয় হবে।

সিপিটিইউ’র সাবেক মহাপরিচালক মো. ফারুক হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো ক্রয় কার্যক্রম। এটি যদি ম্যানুয়ালি হতো তাহলে কোভিডের সময়ে বন্ধ থাকতো। কিন্তু অনলাইন হওয়াতে সব কিছুই বন্ধ থাকলেও ই-জিপির কার্যক্রম কিন্তু চলছিল। তাছাড়া এই সিস্টেমের কারণে সময় ও  দরপত্র প্রক্রিয়াকরণ ব্যয় ও সংশ্লিষ্টদের মুভমেন্টসহ অনেক কিছুই সাশ্রয় হয়েছে। বলা হয়, টাইম অব দ্য মানি। তাহলে এক্ষেত্রে সেটি অনেক বেঁচে গেছে। সেই সঙ্গে সরকারি কেনাকাটায় স্বচ্ছতা ও ইফিসিয়েন্সি অনেক বেড়েছে। এটি এমন একটি ব্যবস্থা যার সুফল মানুষ সবসময় ভোগ করতেই থাকবে।’

সিপিটিইউ সূত্র জানায়, গত মার্চ মাস থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোভিড সময়েও ই-জিপির নিরবচ্ছিন্ন পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে। এই সময়ে সিপিটিইউর হেল্পডেস্ক ও ই-জিপি সিস্টেম সপ্তাহের সাতদিন ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তখন ৭১ হাজার ৪৩৭টি দরপত্র উন্মুক্ত করা হয়। এসব দরপত্রের মোট মূল্য ৭৪ হাজার কোটি টাকার বেশি।

এসময় দাখিল করা হয় ২১ লাখের বেশি দরপত্র। ৪৪ হাজার ৮৪৯ জন দরদাতা অংশগ্রহণ নেন। মূল্যায়িত দরপত্রের মোট মূল্য ৭৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। এছাড়া একইসময়ে ৬২ হাজার ৭৪টি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। স্বাক্ষর হওয়া এসব চুক্তির মোট মূল্য দাঁড়িয়েছে ৫৪ হাজার টাকার বেশি।

আইএমইডি সূত্র জানায়, প্রথমদিকে চারটি বৃহৎ ক্রয়কারী সংস্থায় সফল বাস্তবায়নের পর ২০১২ সাল থেকে বিভিন্ন ক্রয়কারী অফিসে ই-জিপি বাস্তবায়ন শুরু হয়। দেশে মোট ক্রয়কারী সংস্থার সংখ্যা এক হাজার ৩৬২টি। গত ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট একহাজার ৩৫১টি সংস্থা ই-জিপিতে যুক্ত হয়। নিবন্ধিত দরদাতার সংখ্যা ৮১ হাজার ২০২টি। ই-জিপি চালুর ফলে টেন্ডার দাখিল নিয়ে যে ঝামেলা ছিল তার অবসান হয়েছে। ঘরে বসেই দরদাতারা অনলাইনে টেন্ডার জমা দিতে পারছেন। সাশ্রয় হচ্ছে সময় ও ব্যয়।

উল্লেখ্য, সরকারি ক্রয়ে ডিজিটাল ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) ২০১১ সালে পরীক্ষামূলকভাবে ই-জিপি গাইডলাইনের আওতায় ই-টেন্ডার চালু করে।

ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্টের (ই-জিপি) পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় বিশ্বব্যাংক সেন্টাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ)


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর