Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিচ্ছিন্ন হচ্ছে দেশের সব অবৈধ গ্যাস সংযোগ


২১ ডিসেম্বর ২০২০ ১৬:৪৬

ঢাকা: দেশের সব অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরইমধ্যে এ কার্যক্রম শুরুও করে দিয়েছে গ্যাস বিতরণ সংস্থাগুলো। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার টার্গেট রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, জরাজীর্ণ পাইপলাইনে জোড়াতালি দিয়ে বছরের পর বছর ধরে চলছে গ্যাস সরবরাহ। তার সঙ্গে যুক্ত আছে অবৈধ সংযোগ। অন্যদিকে গ্যাস লাইনের ক্ষতি হচ্ছে বছরজুড়ে অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়িতেও। আর এসব কারণেই প্রায়শই ঘটছে দুর্ঘটনা।

বিজ্ঞাপন

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে যে সংখ্যক অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটে তার এক তৃতীয়াংশই গ্যাসের পাইপ লাইনের লিকেজ থেকে। গত বছরে সংঘটিত এক হাজার অগ্নিকাণ্ডের জন্য গ্যাসকে দায়ী করেছে সংস্থাটি।

সারাদেশে ছয়টি সরকারি কোম্পানি গ্যাস বিতরণ করে থাকে। তিতাস, কর্ণফুলী, পশ্চিমাঞ্চল, জালালাবাদ, বাখরাবাদ এবং সুন্দরবন এই ছয় প্রতিষ্ঠানের সারাদেশে বৈধ আবাসিক গ্রাহকের সংখ্যা ৩৮ লাখ। তাদের মধ্যে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, বৃহত্তর ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, নরসিংদী, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জে মোট ২৮ লাখ ৬৫ হাজার ৯০৭ জন গ্রাহক রয়েছে তিতাসের।

তিতাসসহ বিতরণ কোম্পানিগুলো থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সারাদেশে মোট ৩ লাখ ১৭ হাজার ২৭৫টি অবৈধ সংযোগ চিহ্নিত করা হয়েছে। এরমধ্যে চলতি মাসের ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত আড়াই লাখ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এ সময় ৩৪৪ কিলোমিটার অবৈধ গ্যাস সংযোগের পাইপ লাইন উচ্ছেদ করা হয়েছে। তবে এখনও এ ধরনের ২৬৩ কিলোমিটার পাইপ লাইন রয়ে গেছে। যা দিয়ে নিয়মিত গ্যাস চুরি হচ্ছে। আর ৬৩ হাজার অবৈধ সংযোগ রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

গ্যাস বিতরণ সংস্থার মধ্যে সবচেয়ে বড় তিতাসের আওতায় রয়েছে ১২ হাজার ২৫৩ কিলোমিটার পাইপ লাইন। এরমধ্যে ঢাকায় সাত হাজার কিলোমিটার রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সাত হাজার কিলোমিটার লাইনের ৭০ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ। চলতি বছরেও ১ হাজার ৬২২টি লিকেজ চিহ্নিত করেছে তিতাস। এরমধ্যে ৭৮১ টি সংস্কার করা হয়েছে। লিকেজ দেখা দিলে তা সারাই করে চলছে দিনের পর দিন। পাশাপাশি অবৈধ সংযোগের কারণে দুর্ঘটনা আরো বাড়ছে। তিতাস সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে তিতাসের দুইশ কিলোমিটারের বেশি লাইন অবৈধ রয়েছে।

জানা গেছে, গ্যাসের বর্তমানে নতুন গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ থাকায় অবৈধ সংযোগ দেওয়ার অবৈধ সংযোগ দেওয়ার সঙ্গে কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ রয়েছে। রাজধানী ঢাকার থেকেও আশেপাশের শহরগুলোতে অবৈধ সংযোগের সংখ্যা বেশি। বিশেষ করে বর্তমানে নারায়ণগঞ্জে সবচেয়ে বেশি অবৈধ সংযোগ রয়েছে। আবাসিক ও কারখানা দুইপর্যায়ে থাকা অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে এরই মধ্যে পাঁচ শতাধিকের নামে মামলা করেছে সংশ্লিষ্ট বিতরণ সংস্থা।

এবার সিস্টেমলস কমানোর পাশাপাশি দুর্ঘটনা এড়াতে দেশের সব অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিতরণ সংস্থাগুলো নিজ নিজ উদ্যোগে এই কার্যক্রম পরিচালনা করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিতাসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রতিবছরই অবৈধ গ্যাস লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়। তবে এবার অনেকটা শক্তভাবে এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

এর আগে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি বিভাগ গঠিত অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন সংক্রান্ত টাস্কফোর্স এক বৈঠকে চলতি মাসের মধ্যেই সব অবৈধ গ্যাসের লাইন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান জানান, রাজধানীর গ্যাস বিতরণ ব্যবস্থাকে ডিজিটাল নেটওয়ার্কের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অবৈধ সংযোগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিতরণ সংস্থাগুলোকে কঠোর হতে বলা হয়েছে।

অবৈধ গ্যাস সংযোগের কারণে সরকার আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছে আবার দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে দ্রুত অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কথা বলেছিলেন তিনি। পাশাপাশি নতুন লাইন প্রতিস্থাপনে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।

জানা গেছে, দেশে বর্তমানে যে পরিমাণ গ্যাস বিতরণ করা হয়েছে, সেখানে তার ছয় ভাগের মতো সিস্টেমলস রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশীয় গ্যাসের সঙ্গে সরকার প্রতিদিন ৬শ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি করছে। বেশি মূল্যে আমদানি করা এলএনজির খরচ তুলতে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর এর চাপ পড়ছে গ্রাহকদের ওপরে। অন্যদিকে অবৈধ সংযোগের কারণে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে সরকারের। এ কারণেই অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এদিকে জরাজীর্ণ গ্যাস লাইন প্রতিস্থাপন করতে ২শ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে তিতাস। এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজধানীর দুই হাজার কিলোমিটার বিতরণ লাইন প্রতিস্থাপন করা হবে। আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে এসব কাজ সমাপ্ত হলো গ্যাসের সিস্টেম লস কমে আসার পাশাপাশি দুর্ঘটনা কমবে বলে মনে করছেন বিতরণ সংশ্লিষ্টরা।

অবৈধ গ্যাস সংযোগ গ্যাস লাইন

বিজ্ঞাপন

খুলনায় যুবকের পেটে মিলল ইয়াবা
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০২

আরো

সম্পর্কিত খবর