Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

একাত্তরে সরকার না হলেও অনেক দেশের মানুষের সমর্থন পেয়েছে বাংলাদেশ


২৩ ডিসেম্বর ২০২০ ১৭:১১

ঢাকা: একাত্তরে পাকিস্তানের অপশাসন থেকে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার যে যুদ্ধ, সেই যুদ্ধ কেবল এই দুই দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। দেশ-উপমহাদেশ ছাপিয়ে এ যুদ্ধের আবহ ছড়িয়ে পড়েছিলো সারাবিশ্বে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশকে প্রথম স্বাধীন দেশের স্বীকৃতি দিয়েছিল ভুটান। একই দিনে প্রতিবেশী ভারতও স্বীকৃতি দেয়। তবে এর আগে থেকেই ভারত সব ধরনের সহায়তা দিয়ে পাশে থেকেছিল বাংলাদেশের, যা বাংলাদেশ চিরকাল শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও এর পরবর্তী সময়ে অন্যান্য দেশের স্বীকৃতি পাওয়া এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় প্রতিষ্ঠা করাও ছিল এক ধরনের যুদ্ধ। তবে মুক্তিযুদ্ধকালীন বা মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে অনেক দেশের সরকারই বাংলাদেশের পাশে না থাকলেও সেসব দেশের মানুষ বাংলাদেশকে সমর্থন করে গেছেন।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) সারাবাংলা ডটনেটের নিয়মিত আয়োজন ‘সারাবাংলা ফোকাস’ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘সারাবাংলা ফোকাস’ অনুষ্ঠানের এ পর্বের বিষয় ছিল ‘আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন বেলজিয়াম ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুব হাসান সালেহ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. ইয়াসমীন হক। সারাবাংলার স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট এমএকে জিলানীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানটি সারাবাংলার ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল থেকে সরাসরি প্রচারিত হয়।

বিজ্ঞাপন

আলোচনায় যুক্ত হয়ে নাসির উদ্দিন ইউসুফ বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়কে সাদরে গ্রহণ করেছিল সারাবিশ্বের মানুষ। অনেক জায়গায় সে দেশের সরকারকেও ছাপিয়ে গিয়েছিল সাধারণ মানুষের এই সমর্থন। যেমন— মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু প্রথমে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি। কিন্তু সেই দেশের মানুষেরা বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনগুলোতেও ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ হয়েছিল বিখ্যাত ম্যাডিসন স্কয়ারে। পাকিস্তানসহ মুসলিম বিশ্বের অনেক দেশ স্বাধীন বাংলাদেশকে সমর্থন করেনি। কিন্তু সেসব দেশের কবি-সাহিত্যিক, শিল্পী, সাংবাদিকরাও বাংলাদেশের পাশে থেকেছেন। বাংলাদেশকে সমর্থন দেওয়ায় অনেককে কারাবরণও করতে হয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণহত্যার বিরুদ্ধে যেমন বিশ্ব জনমত তৈরি হয়েছিল, তেমনি নতুন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটছে তার যৌক্তিকতাও বিশ্বের জনগণ অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। এ কারণে বিশ্ব জনমত বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল।

এসময় ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির প্রসঙ্গও শ্রদ্ধার সঙ্গে উল্লেখ করেন নাসির উদ্দিন ইউসুফ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বীকৃতির জন্য বেশিরভাগ উন্নত দেশে ঘুরেছিলেন তিনি। এ জন্য অনেক জায়গায় অপমানিতও হয়েছিলেন। তবু বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়ে গেছেন তিনি।

তবে একাত্তরে যে সমর্থন ও প্রচারণা বাংলাদেশ পেয়েছিল, পঁচাত্তরের পর তা অনেকাংশেই হারিয়ে ফেলেছিল বলে উল্লেখ করেন নাসির উদ্দিন ইউসুফ। তিনি বলেন, পঁচাত্তরের পর রাষ্ট্র তার চরিত্র বদলে ইসলামি রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক গড়েছিল। বাংলাদেশকে সারাবিশ্বের সামনে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল।

আলোচনায় যুক্ত হয়ে ইয়াসমীন হক সারাবাংলা ফোকাসে বলেন, একাত্তরের পর বাংলাদেশে পাকিস্তানাইজেশন করার পাঁয়তারা শুরু হয়েছিল। যুদ্ধের পর বাংলাদেশ যখন মাথা তুলে দাঁড়াতে শুরু করেছিল, ঠিক তখনই বঙ্গবন্ধুকে খুন করে সবকিছুতে পরিবর্তন আনার প্রচেষ্টা শুরু হয়ে গিয়েছিল। পঁচাত্তর না হলে বাংলাদেশ হয়তো আরও অনেকদূর এগিয়ে যেত।

বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ, অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামো পঁচাত্তরের পরও ২১ বছর অব্যাহত ছিল বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত মাহবুব হাসান সালেহ। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা এখনো চলছে। এসব কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের বিব্রত হতে হয়।

নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন নিয়ে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। কিন্তু এসব ঘটনা সারাবিশ্বেই ঘটে থাকে। বাংলাদেশের অগ্রগতি যেমন অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিক্ষার হার বৃদ্ধি, নারী নির্যাতন প্রতিরোধে নতুন আইন— এসব কথা বিশ্বের কাছে বেশি করে তুলে ধরা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

নিজেদের অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণকে বড় সাফল্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কূটনৈতিক লড়াই অনেক বড় লড়াই। বিশ্বের মানুষের কাছে বাংলাদেশের সংস্কৃতি, খেলাধুলা ও নারীদের সাফল্য তুলে ধরার আহ্বান জানান তিনি। আর এজন্য কূটনীতিকদের পাশাপাশি শিল্পী, শিক্ষক, সাংবাদিকদেরও কাজ করতে হবে বলে মত দেন তিনি। ড. ইয়াসমীন হক ও মাহবুব হাসান সালেহ এ বিষয়ে একমত প্রকাশ করেন।

আলোচনার শেষ ভাগে মাহবুব হাসান সালেহ বলেন, মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহিদ ও দুই লাখ মা-বোনের প্রতি সুবিচার প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া জরুরি। এ লক্ষ্যে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

বর্তমানে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ আরও গৌরব ও সম্মানের সঙ্গে বিশ্বের দরবারে পরিচিত হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন অতিথিরা।

একাত্তর ড. ইয়াসমিন হক নাসির উদ্দিন ইউসুফ মাহবুব হাসান সালেহ মুক্তিযুদ্ধ সরকারের স্বীকৃতি সাধারণ মানুষের সমর্থন সারাবাংলা ফোকাস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর