লাইসেন্স ছাড়া ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ১০ বছরে ভ্যাট-ট্যাক্স শূন্য
২১ ডিসেম্বর ২০২০ ২৩:১৮
ঢাকা: চিকিৎসা পেশা থেকে অবসর নেওয়ার পর গত ১০ বছর ধরে ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালিয়ে আসছেন ডা. দেলোয়ার হোসেন। রাজধানীর গ্রীন লাইফ হসপিটালের বিপরীত দিকে রুপায়ন প্রাইম ভবনের চতুর্থ তলায় অবস্থিত তার এই ‘ড্রীমস ডায়াগনস্টিক সেন্টার’। তবে অভিযোগ রয়েছে— এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নেই কোনো লাইসেন্স। আর গত ১০ বছরে একটি টাকাও ভ্যাট-ট্যাক্স পরিশোধ করেনি প্রতিষ্ঠানটি।
গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ এবং শামীম নামে একজনের অভিযোগ পেয়ে ঘটনা তদন্তে সোমবার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি টিম ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যায়। তদন্ত দলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের উপপরিচালক (হাসপাতাল-২) ডা. মো. ইউনুস আলী ও সহকারী পরিচালক (হাসপাতাল-৩) ডা. হাবিব ইসমাইল ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।
তদন্ত শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে উপপরিচালক ইউনুস আলী বলেন, ডিজি হেলথের গঠিত তদন্ত কমিটির কাজের অংশ হিসেবে আমরা এখানে এসেছি। তদন্তের জন্য আমরা বিভিন্ন কাগজপত্র চেয়েছি।
তদন্তে কী উঠে এসেছে— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রশ্নের লিখিত উত্তর নিয়েছি। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দেওয়া হবে। তার আগে কিছু বলা যাবে না।
তবে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, যাত্রা শুরুর পর থেকে একাধিকবার নাম বদলেছে প্রতিষ্ঠানটি। শুরুতে এর নাম ছিল প্যারামাউন্ট মেডিকেল সেন্টার। পরে এর নাম হয় দেলোয়ার রিসার্চ সেন্টার। এরপর প্রতিষ্ঠানটির নাম দেওয়া হয় ড্রীমস ইমাজিন সেন্টার। মাস দুয়েক হলো এর নাম হয়েছে ড্রীমস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার।
তদন্ত সূত্র জানায়, গত ১০ বছর ধরে চারটি নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালিয়ে আসছেন ডা. দেলোয়ার। কিন্তু এর একটির পক্ষেও কোনো ট্রেড লাইসেন্স নেই। এমনকি স্বাস্থ্য অধিদফতরেরও কোনো লাইসেন্স নেই। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান প্রিজমেরও কোনো সার্টিফিকেট নেই ডা. দেলোয়ারের। আর তদন্ত দলের প্রশ্নের উত্তেরে ডা. দেলোয়ার লিখেছেন, গত ১০ বছরে এই প্রতিষ্ঠান থেকে সরকারকে কোনো ভ্যাট-ট্যাক্স দেননি।
আধুনা ড্রীমস ডায়াগনস্টিক সেন্টার নাম নেওয়া প্রতিষ্ঠানটির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, কিছুদিন পরপরই প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করেন ডা. দেলোয়ার। একটি নামের বিপরীতে লাইসেন্সের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। না পেলে নাম পরিবর্তন করে ফের আবেদন করেন। তবে কোনো নামের বিপরীতেই কোনো লাইসেন্স পাননি তিনি।
সূত্র বলছে, এখানে মূলত প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা ও আলট্রাসনোগ্রাম করা হয়। একেকটি আলট্রাসনোগ্রামের ফি নেওয়া হয় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। এর বাইরে বিভিন্ন প্রসেসিং ফি বাবদ আরও হাজার পাঁচেক টাকা নিয়ে থাকেন তিনি। যদিও সরকারি নিয়মে এর ফি হওয়ার কথা মাত্র আটশ টাকা। সরকারি নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করেই তিনি এখানে ইচ্ছামতো ফি নিয়ে থাকেন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য।
জানা গেছে, আলট্রাসনোগ্রাম করাতে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ জনের মতো রোগী আসেন এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। একেক জনের কাছ থেকে আট হাজার টাকা হিসাবে এখান থেকে প্রতিদিন ন্যূনতম দুই লাখ টাকা আয় আছে ডা. দেলোয়ারের। সে হিসাবে তার মাসিক আয় ৬০ থেকে ৭০ লাখ। অথচ এর বিপরীতে কোনো ভ্যাট-ট্যাক্সই দেন না তিনি। তদন্ত দলও বলছে, ১০ বছরে বিপুল পরিমাণ ভ্যাট-ট্যাক্স ফাঁকি দিয়েছেন তিনি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি নিজে একজন ইউরোলজি বিশেষজ্ঞ। আমি নিজে একটি চেম্বার চালাই। এর জন্য আমি কোনো লাইসেন্সের প্রয়োজন অনুভব করিনি। তবে আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে বাড়তি ফি নেওয়া বা লাইসেন্স ছাড়াই ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালানোর বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ট্যাক্স ফাঁকি ডা. দেলোয়ার ড্রীমস ডায়াগনস্টিক সেন্টার ভ্যাট ফাঁকি লাইসেন্স লাইসেন্স নেই