নভেম্বরে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে এসেছে এক টন সোনা!
২২ ডিসেম্বর ২০২০ ১০:০১
ঢাকা: করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সবকিছু হয়েছে এলোমেলো। ভঙ্গ হয়েছে কত শত স্বপ্ন। বিদেশ পাড়ি দেওয়া লাখো মানুষ ফিরে এসেছেন দেশের মাটিতে। কিন্তু এই সময়ে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। অর্থনীতিবিদরা দেশের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর পেছনেও রেমিট্যান্সের এই প্রবাহকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন। এর বাইরেও একটি তথ্য সবার নজর কেড়েছে— কেবল গত নভেম্বর মাসেই বৈধভাবে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীরা দেশে এনেছেন ৯ হাজার ৩৬৭ পিস সোনার বার। এসব সোনার বারের ওজন দাঁড়ায় ১ হাজার কেজির বা এক টনেরও বেশি!
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র বলছে, এই একটন সোনা এসেছে কেবল চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর দিয়ে। এর সুনির্দিষ্ট পরিমাণ ১ হাজার ৯৬ কেজি। আর এই সোনা থেকে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ১৯ কোটি ৫৫ লাখ ৬২ হাজার ৬৭৪ টাকা ৭ পয়সা।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর কাস্টমস সূত্র জানিয়েছে, এই এক টন সোনাই দেশে যাত্রীরা এনেছেন ব্যাগের রুলের আওতায়, যা একমাসে এই বিমানবন্দরের রেকর্ড। এর আগে একমাস সময়ে এত বেশি সোনা কখনোই দেশে আসেনি এই বিমানবন্দর ব্যবহার করে।
এর আগে, ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে বৈধ পথে সোনা আসে মাত্র ১৩ কেজি ৬৭৪ গ্রাম। এর বিপরীতে রাজস্ব এসেছিল ৬৮ লাখ ৩ হাজার ৫১৭ টাকা। আর চলতি বছরের অক্টোবর মাসে সোনা এসেছে ২৫৯ কেজি। রাজস্বের পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। অন্যদিকে ২০১৯ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত, অর্থাৎ ৯ মাসে বিদেশফেরত যাত্রীরা ব্যাগেজ রুলের আওতায় ঘোষণা দিয়ে সোনা এনেছেন ১০৪ কেজি ২৩৫ গ্রাম, যা থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪ কোটি ৭৫ লাখ ১৬ হাজার ৮৮৪ টাকা। সে তুলনায় নভেম্বর মাসের তথ্য যেকোনো হিসাবেই সব ধরনের রেকর্ড ছাড়িয়েছে।
এনবিআরের নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাগেজ রুলের আওতায় একজন যাত্রী বৈধভাবে শুল্ক-কর দিয়ে সর্বোচ্চ ২০ ভরি বা দু’টি সোনার বার আনতে পারেন। এ জন্য প্রতি ভরিতে (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) শুল্ক-কর দিতে হয় ২ হাজার টাকা। সোনার বারের বাইরে ১০০ গ্রাম ওজনের (প্রায় সাড়ে আট ভরি) সোনার অলংকার আনা যায় বিনা শুল্কে।
২০১৮ সালের আগে ব্যাগেজ রুলের বাইরে দেশে বৈধ পথে সোনা আমদানির কোনো ব্যবস্থা ছিল না। ২০১৮ সালে সরকার সোনা নীতিমালা করে। এ নীতিমালার আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের মাধ্যমে সোনা আমদানি করে আসছে। এই নীতিমালার আওতায় গত এক বছরে ২৫ কেজি সোনা আমদানি করেছে দু’টি প্রতিষ্ঠান। আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আমদানির জন্য আবেদন করেছে।
সেই হিসাবে দেখা যাচ্ছে, একবছরে সোনা ব্যবসায়ীরা যে পরিমাণ সোনা আমদানি করেছেন, তার চেয়ে ৪৩ গুণ বেশি সোনা চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে একমাসে এনেছেন প্রবাসীরা। আর গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে পুরোটা সময়ে এ বিমানবন্দর দিয়ে সব মিলিয়ে ১০৪ কেজির বেশি সোনার বার এনেছিলেন যাত্রীরা। ফলে শুধু চলতি মাসের নভেম্বরে একটি বিমানবন্দর দিয়ে আসা এক টনের বেশি সোনা আসায় অবাক কাস্টমস কর্মকর্তরাও।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির (বাজুস) সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের বাৎরিক চাহিদা ২০ থেকে ৩০ টন। আমার ব্যক্তিগত অভিমত, যে সোনা বৈধভাবে এসেছে, সেটা বাজারে ব্যবহার কম হয়েছে। এটা ব্যক্তিগত কাজে বেশি ব্যবহার হয়েছে। যাত্রীরা আসার সময় ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের জন্যই এগুলো নিয়ে এসেছেন।
তিনি বলেন, এর প্রতিকার চাইলে ব্যাগেজ রুলে সোনা আনা বন্ধ করে দিতে হবে। সরকার ১৮ জনকে সোনা আমদানির বৈধ লাইসেন্স দিয়েছে। স্বর্ণ নীতিমালা ২০১৮ বাস্তবায়নে পথে। ব্যাগেজ রুলে কোনো মানুষ ২০ ভরি সোনা আসতে পারবে না। আমরা এটা বন্ধের দাবি জানাই।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার ফখরুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, একমাসে এত স্বর্ণের বার আসা অবিশ্বাস্য। কেননা অতীতে তো দূরে থাক, গত অর্থবছরেও এতো সোনা বৈধভাবে আসেনি। তবে ব্যাগেজ রুলের মাধ্যমে সোনা আসায় সরকার রাজস্ব পাচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে— এই সোনা কোথায় যাচ্ছে? আসলে যাত্রীরা ব্যবহার করছে, নাকি অন্য কোথাও যাচ্ছে?
এই প্রশ্ন সত্ত্বেও ফখরুল আলম বলেন, কাস্টমসের নজরদারি বেড়ে যাওয়ায় সোনা চোরাচালান কমে গেছে। আমরা কাজ করছি। আমাদের কাজের ক্ষেত্রে আন্তরিকার কোনো ঘাটতি নেই।