ঢাকা: লক্ষ্মীপুরের সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের স্ত্রী সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলাম ও মেয়ে ওয়াফা ইসলামকে আগামী ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) আসামিদের সময় বৃদ্ধির আবেদন মঞ্জুর করে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আসামিদের পক্ষে ছিলেন- সিনিয়র আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার ও আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা। দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে শুনানি করে আইনজীবী খুরশিদ আলম খান।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। আদেশের বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন তিনি।
এ কে এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘গত ১০ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি শহিদ ইসলাম পাপুলের স্ত্রী সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলাম ও মেয়ে ওয়াফা ইসলামের আগাম জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়ে ১০ দিনের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে এসময়ে বিচারিক আদালতে ছুটি থাকায় আসামি পক্ষ আজ সময়ের আবেদন করলে আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করে আগামী ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন।’
এর আগে, গত ১০ ডিসেম্বর আসামিদের জামিন আবেদন খারিজ করে আদালত। পাপুলের স্ত্রী ও মেয়ের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগ প্রতীয়মান হয়নি মর্মে প্রতিবেদন দেওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের উপপরিচালক মো. আরেফিন আহসান মিঞাকে আগামী ৪ জানুয়ারি আদালতে সশরীরে হাইকোর্টে উপস্থিত হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।
এছাড়া আদালত এ বিষয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্ট ও বাংলাদেশ ব্যাংককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের উপপরিচালক মো. আরেফিন আহসান মিঞা দুদকের অভিযোগ পর্যালোচনা করে মতামত দেন বলে আদালতে উপস্থাপন করা তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন।
গত ২৬ নভেম্বর অবৈধ সম্পদ অর্জন ও টাকা পাচারের অভিযোগের মামলায় কুয়েতে গ্রেফতার লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম পাপুলের স্ত্রী সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলাম ও মেয়ে ওয়াফা ইসলাম হাইকোর্টে আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
এর আগে, গত ১১ নভেম্বর দুদকের উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন বাদী হয়ে ২ কোটি ৩১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ ও ১৪৮ কোটি টাকার অর্থ পাচারের অভিযোগে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শহিদ ইসলাম পাপুল ও তার স্ত্রী সংরক্ষিত আসনের এমপি সেলিনাসহ চার জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার আসামিরা হলেন- পাপুল, তার স্ত্রী সেলিনা ইসলাম, মেয়ে ওয়াফা ইসলাম ও সেলিনার বোন জেসমিন প্রধান।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম পাপুলের বিরুদ্ধে মানবপাচারসহ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত উপায়ে শত শত কোটি টাকা অর্জন করে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। পরে পাপুলের বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে গত ২২ জুলাই সেলিনা ইসলাম ও জেসমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। পর তাদের চার জনের সব হিসাব স্থগিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দেয় দুদক।
চলতি বছরের ৭ জুন মানবপাচার, ভিসা জালিয়াতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য শহিদ ইসলাম পাপুলকে গ্রেফতার করে কুয়েতের পুলিশ। এরপর থেকে তিনি কুয়েতের কারাগারে আছেন। আগামী ২৮ জানুয়ারি পাপুলের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার রায় দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।