Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘আল্লাহর ইচ্ছায় আল্লামা শফীর মৃত্যু, হত্যা মামলা ষড়যন্ত্রমূলক’


২৩ ডিসেম্বর ২০২০ ১৭:০৭

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সাবেক আমির প্রয়াত শাহ আহমদ শফীকে হত্যার অভিযোগ এবং এ সংক্রান্ত মামলার পেছনে ‘রাজনৈতিক চক্রান্ত’ আছে বলে মনে করছেন হেফাজতে ইসলামের নেতারা। চিহ্নিত দালালগোষ্ঠী দেশকে অস্থিতিশীল করতে এ চক্রান্ত করছে বলে অভিযোগ তাদের।

বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম মাদরাসা মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে এ অভিযোগ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের আমির জুনাইদ বাবুনগরীর উপস্থিতিতে হেফাজতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক নুরুল আফছার আজাহারী লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান।

হেফাজত নেতারা বলেন, ‘আমরা মনে করি সম্পূর্ণ আল্লাহর ইচ্ছায় ওনার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল। তাকে হত্যা করা হয়েছিল এমন কোনো মেডিকেল রিপোর্টও নেই। এরপরও মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে এবং বিবরণে যাদেরকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, তারা কেউই এর সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। সুতরাং তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ষড়যন্ত্র ও উদ্দেশ্যমূলক।’

গত ১৮ সেপ্টেম্বর ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব শতবর্ষী শাহ আহমদ শফী’র জীবনাবসান হয়। চট্টগ্রামের হাটহাজারীর বড় মাদ্রাসা হিসেবে হিসেবে পরিচিত দারুল উলুম মইনুল ইসলাম মাদরাসার মহাপরিচালক ছিলেন তিনি। তিনদিন ধরে ওই মাদরাসায় আহমদ শফীকে অবরুদ্ধ করে ছাত্র বিক্ষোভ হয়। এর মধ্যেই গুরুতর অসুস্থ শফীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় এবং ঢাকায় হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি মারা যান। মৃত্যুর পর থেকে শফীর অনুসারীরা তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করে আসছিলেন।

শফী’র মৃত্যুর পর গত ১৫ নভেম্বর প্রতিনিধি সম্মেলন করে হেফাজতে ইসলামের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে আমীর নির্বাচিত হন আগের কমিটির সহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরী। মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছিলেন নুর হোসাইন কাসেমী, যিনি কয়েকদিন আগে মারা গেছেন। নতুন কমিটিতে শফীপন্থীদের বাদ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।

এরপর গত ১৭ ডিসেম্বর আহমদ শফীকে নির্যাতনের মাধ্যমে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগ এনে তার শ্যালক মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন বাদী হয়ে হেফাজতের ৩৬ নেতার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলা তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন।

এ প্রেক্ষাপটে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের পক্ষ থেকে বলা হয়, আহমদ শফীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযোগে মামলা একটি রাজনৈতিক চক্রান্ত। মাদরাসার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করা এবং হেফাজতে ইসলামের নেতাদের হয়রানি করার হীন ষড়যন্ত্র থেকে মামলা করা হয়েছে। ইসলামের নীতি ও আদর্শ থেকে বিচ্যুত একটি কুচক্রি মহলের পায়ের তলায় মাটি না থাকায় তারা আহমদ শফীর মৃত্যু নিয়ে চক্রান্তে মেতেছে।

শফীপন্থীদের প্রতি ইঙ্গিত করে হেফাজতের দাবি, একটি চিহ্নিত দালালগোষ্ঠী শাহ আহমদ শফীকে জিম্মি করে হাটহাজারী মাদরাসায় ব্যক্তিতন্ত্র কায়েম করেছিল। সেখানে নানা অনিয়মের পাশাপাশি ছাত্রদের ওপর হয়রানি-নির্যাতন চালানো হত। কয়েকজন শিক্ষককে মাদরাসা থেকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল। মহলটির স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি ও অনাচারের কারণে মৃত্যুর আগে আহমদ শফীর জনপ্রিয়তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল এবং তিনি বিতর্কিত হয়ে পড়েছিলেন।

শফীর মৃত্যু স্বাভাবিক দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অনেক আগে থেকেই আহমদ শফীর শারীরিক অবস্থা নাজুক ছিল। বেশ কয়েকবারই তার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। মামলায় তথাকথিত হত্যার যেসব কারণ উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো অতিরঞ্জন ও মিথ্যাচারে পরিপূর্ণ এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করে হেফাজত।

মাদরাসায় ছাত্র বিক্ষোভের নেপথ্যে শাহ আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানির স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ আনেন হেফাজত নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মাদরাসার তৎকালীন শিক্ষা পরিচালক নূর আহমদকে পাশ কাটিয়ে সহকারী শিক্ষা পরিচালক আনাস মাদানি দীর্ঘদিন থেকে ছাত্রদের নানাভাবে হয়রানি করে আসছিল। একক সিদ্ধান্তে ছাত্রদের ভর্তি ফরম এবং দাওরায়ে হাদিস ছাত্রদের বোর্ড পরীক্ষার প্রবেশপত্র আটকে রাখে মাদানি। অনেক ছাত্রদের বোর্ডিংয়ের খাবার এবং আবাসিক সিট অন্যায়ভাবে বাতিল করে। তার অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারি কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে শফীর মৃত্যুর দুইদিন আগে সর্বস্তরের ছাত্ররা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আহমদ শফী তার ছেলেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেন।

তাদের দাবি, ছেলে আনাস মাদানির দীর্ঘদিনের স্বেচ্ছচারিতা, অনিয়ম, ছাত্র-শিক্ষকদের ওপর জুলুম-নির্যাতনসহ নানা দুর্নীতি স্পষ্ট হলে শফী বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। তিনি আনাস মাদানির ওপর ক্ষুদ্ধ হয়ে স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে মাদরাসার মহাপরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করে শূরার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। শূরার সদস্যরা সেটি গ্রহণ করতে রাজি হননি। কিন্তু শফীর দৃঢ় সিদ্ধান্তের কারণে শুরা সদস্যরা তাকে প্রধান উপদেষ্টা মনোনীত করেন।

সংবাদ সম্মেলনে হেফাজত নেতাদের মধ্যে মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, জুনায়েদ বাবুনগরী, মোহাম্মদ ইয়াহইয়া, নোমান ফয়জী, তাজুল ইসলাম, মোহাম্মদ শোয়াইব, কেফায়েতুল্লাহ, জসিম উদ্দীন, লোকমান হাকিম, কবির আহমদ, হাবিবুল্লাহ আজাদি, আজিজুল হক ইসলামাবাদি, দিদার কাসেমী, নাছির উদ্দীন মুনীর, আশরাফ আলী নেজামপুরী, ফোরকান আহমদ, ওমর কাসেমী, মাহমুদুল হাসান ফতেপুরি, আতাউল্লাহ কৈয়গ্রাম. মীর ইদরিস নদভী, জাকারিয়া নোমান ফয়জী, মোহাম্মদ আহসানুল্লাহ, শফিউল আলম, নুরুল আবসার আজহারী, আনোয়ার শাহ আজহারী, হারুন আজিজ নদভী, মুফতী আবু সাইদ, মুফতী রাশেদ, আব্দুল্লাহ নাজিব, মোহাম্মদ বাবুনগরী, আব্দুস সবুর, মো. রফিক, নূর মুহাম্মদ।

আল্লামা শফী জুনাইদ বাবুনগরী টপ নিউজ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর