বাংলাদেশ-তুরস্ক: হাজার বছরের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে
২৩ ডিসেম্বর ২০২০ ১৯:১৭
ঢাকা: বাংলাদেশ-তুরস্ক দুই দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্কের ইতিহাস হাজার বছরেরও পুরনো। এই সম্পর্কে নতুন করে গতি আনতে চায় দুইদেশ। বাণিজ্য, বিনিয়োগ, প্রতিরক্ষাসহ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক অঙ্গনে পরস্পর পরস্পরের পাশে থাকতে চায়। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষায়, এশিয়ায় বাংলাদেশ তুরস্কের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বন্ধুদেশ।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুট ক্যাভুসলো মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় দুই দিনের সফরে ঢাকা আসলে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছায় স্বাগত জানান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
মেভলুট ক্যাভুসলো বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) ঢাকা ছাড়ার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে দেখা করে তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইওয়ান এরগোয়ানের বার্তা পৌঁছে দেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে তুরস্ক দূতাবাসের নতুন ভবন উদ্বোধন করেন।
নতুন ভবন উদ্বোধনের সময় তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইওয়ান এরদোয়ান এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক অনেক পুরনো। সামনের দিনে আমাদের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে, যাতে আমরা পরস্পরের উন্নয়নে কাজে লাগতে পারি। বাংলাদেশ বাস্তুচ্যূত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে উদার মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে। তুরস্কও ৪ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে, তাই আমরা বাংলাদেশের ব্যথ্যা বুঝি। এই সংকট সমাধানে তুরস্ক বাংলাদেশের পাশে থাকবে।’
নতুন ভবন উদ্বোধনের সময় তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুট ক্যাভুসলো বলেন, ‘আমাদের দুই দেশর মধ্যে ভাতৃত্বমূলক সম্পর্ক বিরাজ করছে, সামনের দিনে এই সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুর্দান্ত নেতৃত্বে বাংলাদেশ খুব ভালো করছে। আমাদের সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে তুরস্কের রাষ্ট্রপতি আগামী বছর বাংলাদেশ সফরে আসবেন। আজকে যে ভবনটা উদ্বোধন করলাম, এটা শুধু তুরস্কের জন্যই না, এটা বাংলাদেশের জনগণের জন্যও আতিথেয়তা দেবে।’
এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুট ক্যাভুসলো বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন এশিয়ার উদীয়মান তারা (রাইজিং স্টার)। এশিয়া নীতিতে বাংলাদেশ তুরস্কের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। অতি অল্প সময়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক খাতে যে উন্নতি করেছে, তা প্রশংসনীয়। আমরা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য দ্বিগুণ করতে এখন থেকে আমরা যৌথভাবে কাজ করব। তুরস্কের বড় বড় ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ নিতে চায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সামরিক খাতে আমাদের প্রয়োজনীয় ৭৫ শতাংশ নিজেরাই উৎপাদন করি, যা মান সম্মত এবং টেকসই। বাংলাদেশকে এই খাতে সহযোগিতা করতে চাই। প্রয়োজনে এই খাতের প্রযুক্তি বিনিময় এবং যৌথভাবে উৎপাদনে যেতে আগ্রহী তুরস্ক।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আজ (বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর) বাংলাদেশে তুরস্ক দূতাবাসের নতুন ভবন উদ্বোধন করা হল। ঠিক ৩ মাস আগে তুরস্কের আনকারায় বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধন করা হয়। এই ঘটনাটি দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে আমরা রাজনৈতিক সম্পর্ক, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, মানবিক সংকটসহ (রোহিঙ্গা) দ্বিপাক্ষিক সকল ইস্যুতে পরস্পরকে সহযোগিতা করব।’