Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন প্রকল্পের প্রক্রিয়াকরণ শুরু


২৫ ডিসেম্বর ২০২০ ১১:৩৮

ঢাকা: গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাব দীর্ঘ দিন ঝুলে থাকার পর অবশেষে প্রক্রিয়াকরণ শুরু হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বদলে যাবে এই লেক। দুর্গন্ধ আর ময়লার ভাগারের পরিবর্তে সাজবে দৃষ্টিনন্দন রূপে। যানবাহন ব্যবস্থায় আসবে পরিবর্তন। রাজধানীর অন্যতম সৌন্দর্য্যমণ্ডিত স্থাপনা হাতির-ঝিলের রূপ পাবে লেকটি। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন উইং-১ এর যুগ্ম প্রধান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. সেলিম সারাবাংলাকে বলেন, কার্যবিবরণী ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সুপারিশগুলো মেনে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) সংশোধন করে পাঠানোর পর একনেকে উপস্থাপন করা হবে।

বিজ্ঞাপন

সূত্র জানায়, প্রথম সংশোধনীতে নতুন কার্যক্রম যুক্ত করায় ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৪ হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা। গত ১৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রস্তাবিত গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন (প্রশম সংশোধিত) প্রকল্পের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় জানানো হয়, কড়াইল বস্তি পুরোটাই উচ্ছেদ করা হবে না। যারা লেকে ভাসমান ঘরে বসবাস করে শুধু তাদেরই পুনর্বাসন করা হবে। এক্ষেত্রে জরিপের মাধ্যমে ৩ হাজার ৬০২টি পরিবারের ১২ হাজার ৭৮৪ জনকে এই কর্মসূচিতে যুক্ত করা হবে। প্রতি পরিবারকে মানবিক কারণে ৪৭ হাজার টাকা করে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ওই সভায় সাতটি বিষয়ে সুপারিশ দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

সূত্র জানায়, গত ২২ নভেম্বর জারি করা হয় পিইসি সভার কার্যবিবরণী। সেখানে দেওয়া সুপারিশগুলো হলো- বস্তিবাসীর পুনর্বাসন পরিকল্পনায় এককালীন আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি তাদের জন্য নির্মাণাধীন বা নির্মিতব্য ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাটে প্রস্তাবিত প্রকল্পে উচ্ছেদ হওয়াদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কি আছে তা সংশোধিত ডিপিপিতে (সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) যুক্ত করতে হবে। এছাড়া প্রকল্পে সরকারি তহবিলের অর্থ কিভাবে হবে (ঋণ/অনুদান) সে বিষয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে অর্থবিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের সম্মতিপত্র যুক্ত করতে হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ হতে প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী প্রস্তাবিত জনবলের বিষয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে অর্থ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিতে হবে। ডিপিপিতে সংযুক্ত ক্রয় পরিকল্পনায় ক্রয় অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ কলামে সংশ্লিষ্ট প্যাকেজের প্রাক্কলিত ব্যয় অনুযায়ী ডেলিগেশন অব ফাইনান্সিয়াল পাওয়ারের সিলিং অনুযায়ী ক্রয় অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষকে হবে তা উল্লেখ করতে হবে। পিডব্লিউডির ২০১৮ সালের এবং আরএইচডির ২০১৯ সালের রেট শিডিউল অনুযায়ী সংশোধিত প্রকল্পের ব্যয় প্রাক্কলন করতে হবে। প্রকল্পের মেয়াদ ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা যেতে পারে। ওয়াসার ড্রেনেজ মাস্টার প্লান অনুযায়ী নির্মিতব্য বা নির্মাণাধীন স্যুয়ারেজ কালেকশন পয়েন্ট পর্যন্ত প্রস্তাবিত প্রকল্পের স্যুয়ারেজ ড্রেন নির্মাণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ঢাকা ওয়াসা এবং প্রস্তাবিত প্রকল্পের মধ্যে স্যুয়ারেজ নেটওয়ার্কিং কাজে দ্বৈততা পরিহার করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

সূত্র জানায়, ১৯৬১ সালে তৎকালীন ডিআইটি (বর্তমানে রাজউক) গুলশান মডেল টাউন প্রকল্প বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু করে। একই সময়ে ১ হাজার একর জমি (বনানী-বারিধারা) আবাসিক এলাকা হিসেবে ব্যবহারের জন্য উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হয়। গুলশান মডেল টাউন এবং বারিধারা আবাসিক এলাকার অংশ হিসেবে ১০৯২ সালের দিকে ১ হাজার একর জায়গার ভূমি উন্নয়ন শেষ হয়। তবে ২৯৮ একর এলাকাজুড়ে বিদ্যমান লেকের উন্নয়ন কাজ না হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে ময়লা আবর্জনা ও জৈব মাটি জমে লেকের পানি ধারণ ক্ষমতা ক্রমে কমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় লেকের উন্নয়ন করে এলাকার পরিবেশ উন্নয়ন, সৌন্দর্য বর্ধন ও নগরবাসীর বিনোদন সুবিধা সম্প্রসারণের জন্য মূল প্রকল্পটি ২০১০ সালের ৬ জুলাই অনুমোদন লাভ করে। এর ব্যয় ছিল ৪১০ কোটি ২৫ লাখ টাকা। পরবর্তীতে নানা কারণে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়। ২০১৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভার সিদ্ধান্ত মেনে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ৪ হাজার ৮৮৬ কোটি ১১ লাখ টাকা ধরে প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়। একই বছরের ১১ অক্টোবর প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে। কিন্তু সেখানে অনুমোদন না দিয়ে কড়াইল বস্তি হতে কত পরিবারকে উচ্ছেদ করা হবে, তাদের কোথায় এবং কিভাবে পুনর্বাসন করা হবে ইত্যাদি বিষয়ে স্টাডি করে পরিকল্পনাসহ পুনরায় একনেকে উপস্থাপনের নির্দেশনা দেয়া হয়। এসব নির্দেশনা মেনে আবারও প্রস্তাব করা হলে ২০১৯ সালের ১ জুলাই একটি পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রকল্পটি সংশোধনের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে,পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বুয়েটের বিটিআরসির স্টাডি অনুযায়ী ট্রাফিক সার্ভে, ফিউচার ট্রাফিক ডিমাইন্ড এ্যানালাইসিস, জিও টেকনিক্যাল সার্ভে এবং ওয়াটার কোয়ালিটি টেস্টের উপর ভিত্তি করে প্রকল্পের ব্যয় বিভাজন তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া জমি অধিগ্রহণ ব্যয় পর্যালোচনা হরে প্রস্তাব পুনর্গঠন, বিভিন্ন পরিসেবা স্থানান্তর ব্যয়, প্রকল্পের সর্বোচ্চ ফলাফল পেতে ব্রিজ, ওভারপাস, রক্ষাপ্রদ কাজ অন্তর্ভুক্তি, লেকের খনন কাজের পরিমাণ বৃদ্ধি, পানির গুণগত-মান রক্ষার জন্য আরসিসি পাইপ নেটওয়ার্ক অঙ্গ হিসেবে অন্তর্ভুক্তি, পার্ক উন্নয়ন, খেলা ও বিনোদন সুবিধা অন্তর্ভুক্তি, কড়াইল এলাকার বস্তিবাসীদের পুনর্বাসন কাজ ইত্যাদি কারণে প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে।

প্রকল্পের আওতায় ব্রিজ,ওয়াকওয়েসহ বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। গুলশান, বনানী, বারিধারা, বাড্ডা, শাহজাদপুর ও নিকেতন এলাকায় নয়টি দৃষ্টিনন্দন সেতু নির্মাণ করা হবে। অবৈধ দখলদারদের থেকে গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উদ্ধার, লেকের পানি ধারণ ক্ষমতা পুনরুদ্ধার এবং পানির গুণগত মান রক্ষাসহ প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের মাধ্যমে এলাকার সৌন্দর্য বাড়ানো হবে।

গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন প্রকল্প ঢাকা

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামে আগুনে পুড়ল ৫ দোকান
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১২:৩৪

আরো

সম্পর্কিত খবর