ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটাতে নতুন সম্ভাবনা ‘সাউ পেরিলা-১’
২৬ ডিসেম্বর ২০২০ ০৮:৩২
শেকৃবি: আগামী বছর থেকে দেশে অভিযোজিত নতুন ভোজ্য তেলের ফসল ‘সাউ পেরিলা-১’ এর বাণিজ্যিকভাবে বৃহৎ পরিসরে চাষাবাদ শুরু হতে যাচ্ছে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডসমৃদ্ধ তেলটি দেশের তেলের ঘাটতি কমিয়ে আনার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে যথেষ্ট অবদান রাখতে সক্ষম বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। বাণিজ্যিক চাহিদা বেশি থাকায় ইতোমধ্যে বাণিজ্যিকভাবে সাউ পেরিলা-১ চাষের উৎসাহ দেখিয়েছে বেসরকারি বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এইচ এম এম তারিক হোসেন ২০০৭ সালে থেকে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে সংগ্রহকৃত জাতটি নিয়ে দেশে গবেষণা শুরু করেন। খরিপ-২ মৌসুমে অভিযোজিত এই ফসল সম্পর্কে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘ফসলটি থেকে আমরা লিনোলিনিক এসিড সমৃদ্ধ তেল আহরণ করতে পারব। যা সাধারণ তেলের চেয়ে বেশি উপকারি এবং বাজার মূল্যও বেশি। কৃষক নিজেই বীজ উৎপাদন করে সংরক্ষণ ও পরবর্তীতে চাষ করতে পারবেন। এছাড়াও তেল আহরণও করতে পারবেন স্বাভাবিকভাবে। এতে কৃষকরা বেশি উপকৃত হবেন।’
তিনি আরও জানান, চাষ সম্প্রসারণের জন্য ইতোমধ্যে এক সভায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম, কৃষি সংগঠক রেজাউল করিম সিদ্দিকের উপস্থিতিতে দেশের বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান লাল তীরকে সাউ পেরিলা-১ এর বীজ বিতরণ করা হয়েছে।
দেশে ৫১.২৭ লাখ মেট্রিক টন ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাতে প্রতি বছরই প্রায় ৪৬.২১ লাখ মেট্রিক টন তেল আমদানি করা হয়ে থাকে। সেখানে নতুন ভোজ্য তেল ফসলের চাষের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে অভাবনীয় পরিবর্তন আসবে বলে ধারণা সম্পৃক্ত বিজ্ঞানিদের। দেহের জন্য উপকারী এ তেলে নেই কোনো ক্ষতিকারক ইউরিক এসিড। তাছাড়াও দেশীয় পদ্ধতিতেও আহরণ করা যাবে তেল। মানের দিক থেকে উচ্চতর হওয়াই আমদানিকৃত বিভিন্ন উচ্চমূল্যের তেলের বিপরীতে দেশে উৎপাদিত তেলটির প্রাধান্যই বেশি থাকবে বলে ধারণা তাদের।
পরীক্ষামূলকভাবে চাষকৃত ১৩টি অঞ্চলের ভেতরে কুষ্টিয়া জেলার ‘আকাবা নার্সারি’র পরিচালক ডা. রুহুল আমিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘পুরোপুরি জৈব উপায়ে সাউ পেরিলা-১ চাষে কোনো কীটনাশক ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়েনি। বিঘা প্রতি ৬০০০ চারা চাষ করা গেলেও এর অর্ধেক চাষে আমি প্রায় ২০০ কেজির মত বীজ পেয়েছি। উৎপাদন খরচ অন্য সব তেলবীজের মতই, তবে রোগবালাই না হওয়াই কীটনাশক খরচ নেই বললেই চলে।’
পিএইচডি ফেলো মোহাম্মদ আব্দুল কাইয়ুম মজুমদার ২০১৮ সাল থকে অধ্যাপক ড. এইচ এম এম তারিক হোসেনের অধীনে সাউ পেরিলা-১ নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছেন। সাউ পেরিলা নতুন কৃষি উদ্যোক্তাদের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনা আখ্যায়িত করে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাধারণত ভোজ্য তেল ফসল রবি মৌসুমে চাষ হয়ে থাকে। কিন্তু সাউ পেরিলা খরিপ-২ এ হওয়া চাষে প্রতিযোগিতা কম থাকায় ভোজ্য তেলজাত দ্রব্যের চাহিদা মেটানো অপেক্ষাকৃত সুবিধা হবে। সম্প্রতি লাল তীরকে বীজ বিতরণ করা হয়েছে। আকিজ গ্রুপও এ নিয়ে উৎসাহ প্রকাশ করেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছে। আশা করছি দ্রুতই দেশে বাণিজ্যিকভাবে সাউ পেরিলা-১ এর চাষাবাদ শুরু হতে যাচ্ছে।’
বীজে ২৫ শতাংশের ওপরে আমিষ থাকায় তেল আহরণের পরে তা থেকে প্রাপ্ত খৈল গবাদিপশুর জন্য পুষ্টিকর খাবারসহ জৈব সার হিসেবেও ব্যাবহার করা যাবে। ৭০-৭৫ দিনের এই ফসল থেকে হেক্টর প্রতি সর্বোচ্চ ১.৫ টন পরিমান বীজ সংগ্রহ করা যাবে। বিজ্ঞানিরা আশা করছেন বাণিজ্যিকভাবে চাষে যেমন তেলের আমদানির পরিমান কমে যাবে, তেমনি সাউ পেরিলা-১ দেশের অর্থনীতিতেও আনতে পারে আমূল পরিবর্তন।
উল্লেখ্য, চলতি বছর ১২ জানুয়ারি ফসলটি সাউ পেরিলা-১ (গোল্ডেন পেরিলা বিডি) জাত হিসেবে নামকরণ করে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জাতীয় বীজ বোর্ড থেকে অবমুক্ত করা হয়েছে।