২ কোটি বই ছাপানো বাকি, শেষ মুহূর্তে তড়িঘড়ি এনসিটিবি’র
২৭ ডিসেম্বর ২০২০ ১০:৩২
ঢাকা: প্রতি বছরের মতো ‘বই উৎসব’ না হলেও নতুন বছরের প্রথম দিনেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেবে সরকার। তবে বছর শেষ হতে চললেও এখনো ছাপানো হয়নি প্রায় ২০ শতাংশ বই। সংখ্যার হিসাবে এর পরিমাণ প্রায় দুই কোটি! এ অবস্থায় শেষ মুহূর্তে এসে তড়িঘড়ি করে এসব বই ছাপাচ্ছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
এনসিটিবিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিতরণের জন্য নির্ধারিত সব বই এখনো ছাপানোর কাজ শেষ করতে পারেনি তারা। এখনো দুই কোটির মতো বই ছাপাতে বাকি রয়েছে। শেষ সময়ে এসে রাত-দিন কাজ করে এসব বই ছাপছে প্রকাশনীগুলো। তবে এই অল্প সময়ে সব বই ঠিকঠাক ছাপানো যাবে কি না, তা নিয়েও রয়েছে শঙ্কা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রকাশক সারাবাংলাকে বলেছেন, ‘এই ডিসেম্বর মাসে সামান্য সময়ের জন্যেও বিশ্রাম নিতে পারিনি। একটানা কাজ করে যেতে হচ্ছে। শুরুতে বিভিন্ন কারণেই এনসিটিবি বই ছাপানোর কাজ শুরু করতে গড়িমসি করে। পরে এসে তাড়াহুড়া করে ছাপতে হয় সব বই। গেল বছরও এমনটা হয়েছে। এবারও হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এভাবে কাজ করতে গিয়ে বইয়ের বাঁধাই, ছাপাসহ বিভিন্ন কাজের মান খারাপ হয়। অথচ কাজটা একমাস আগে শুরু করার নির্দেশনা দিলেও কিন্তু এই ঝামেলা পোহাতে হয় না। সেক্ষেত্রে আমাদেরও পরিশ্রম কম হয়।’
এ ব্যাপারে এনসিটিবি চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা সারাবাংলাকে বলেন, ‘এটা সত্য যে এখনো ২০ শতাংশের মতো বই ছাপানোর বাকি। কিন্তু আগামী দুয়েকদিনেই এই বই ছাপা হয়ে যাবে। ফলে নববর্ষের দিনে কোনো শিক্ষার্থীই বই বঞ্চিত থাকবে না। আমরা সবার হাতে বই তুলে দেবো। এখনো পর্যন্ত দেশের সব বিদ্যালয়েই বই পৌঁছে গেছে।’
সব শিক্ষার্থীর হাতে সময়মতো বই পৌঁছাবে কি না— এমন শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, ‘কোনো বিদ্যালয়ে হয়তো ৫০টি বই প্রয়োজন, আমরা সেখানে দিয়েছি ১০টি বই, কিন্তু দিয়েছি। বাকি বইগুলো আগামী দু থেকে তিন দিনের মধ্যে পৌঁছে যাবে। এ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। সব শিক্ষার্থী সময়মতো বই হাতে পাবে। প্রকাশনা সংস্থাগুলো প্রতিদিন ৫০ লাখ করে বই ছাপাচ্ছে।’
তবে ৫০ লাখ করে বই ছাপানোর যে বক্তব্যটি নারায়ণ চন্দ্র সাহা দিয়েছেন, সেটিকে সত্য নয় বলে জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন প্রকাশক। কারণ এই বছর ১৫১টি প্রিন্টিং প্রেসে ছাপানো হচ্ছে সরকারি বই। এই সব প্রেস মিলিয়েও প্রতিদিন মাত্র ১০ লাখের মতো বই ছাপানো সম্ভব। ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাকি বই ছাপানো অসম্ভব— বলছেন তারা।
প্রকাশকরা বলছেন, বছরের প্রথম দিনে সব বই পাবেন শিক্ষার্থীরা। কোনো কোনো জেলায় দুই-তিনটি বিষয়ের বই বাকি থেকে যাবে। সেগুলো হয়তো জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে পৌঁছে যাবে। তবে এই বক্তব্য নাকচ করে দিয়েছেন এনসিটিবি চেয়ারম্যান।
এদিকে, এ বছর ৩৫ কোটিরও বেশি বই ছাপানোর কথা রয়েছে। এর মধ্যে ২৪ কোটি ৪১ লাখ বই মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী এবং ১০ কোটি ৫৪ লাখ বই প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ছাপানো হচ্ছে। এসব বই ছাড়াও রয়েছে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল বই এবং পাঁচটি ভাষায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্যও রয়েছে নিজস্ব ভাষার প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত বই।
এবছর পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ৯৪ হাজার ২৭৫ শিক্ষার্থী নিজ ভাষায় বই পাবে। যেখানে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত সব বিষয়ের বই নিজ ভাষায় পাবে তারা। আর তৃতীয় শ্রেণিতে কেবল মাতৃভাষা বইটি পাবে তারা নিজেদের ভাষায়। নিজ ভাষায় বই পেতে যাওয়া পাঁচটি নৃ-গোষ্ঠী হলো— চাকমা, মারমা, সাদ্রী, ত্রিপুরা ও গারো।
এ বিষয়ে এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ন চন্দ্র সাহা বলেন, এবার পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিশুদের নিজ ভাষায় বই দেওয়া হবে। ২০১৬ সাল থেকে সরকার তাদেরকে নিজ ভাষায় বই তুলে দিচ্ছে। তবে সাঁওতালরা এবারও তাদের ভাষায় বই পাচ্ছে না।
এছাড়াও এ বছর ৯ হাজার ১৯৬ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর হাতে তাদের নিজ নিজ শ্রেণির ব্রেইল বই তুলে দেওয়া হবে। আগে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্বল্প পরিসরে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ব্রেইল বই দেওয়া হতো।
উল্লেখ্য, এ বছর করোনাভাইরাসের ঝুঁকি থাকার কারণে বই উৎসব হচ্ছে না। তবে বছরের প্রথম দিনেই শিক্ষার্থীরা বই হাতে পাবে। শিক্ষাকে মানসম্পন্ন করার লক্ষ্যে ২০১০ সাল থেকে প্রতিবছর ১ জানুয়ারি বই উৎসব করে আসছে। এপর্যন্ত মোট ৩৩১.৩৮ কোটি বই বিতরণ করা হয়েছে।