‘১৮ বছরের কম বয়সীদের ভ্যাকসিনের প্রয়োজন নেই’
২৭ ডিসেম্বর ২০২০ ১৭:৫৯
ঢাকা: ১৮ বছরের কম বয়সী যারা আছেন, তাদের করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রয়োজন হবে না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশের বয়স ১৮ বছরের নিচে। এই মুহূর্তে এদের ভ্যাকসিনের দরকার নেই। পৃথিবীর কোথাও তাদের ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে না এবং তাদের ট্রায়ালও হয়নি।
রোববার (২৭ ডিসেম্বর) মহাখালীর ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরে ওষুধ এবং টিকার জন্য স্থাপিত ল্যাবরেটরি পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
জাহিদ মালেক বলেন, আমরা এখানে দু’টি ল্যাব দেখেছি। একটি ওষুধের, আরেকটি ভ্যাকসিনের। আমাদের যে ওষুধের ল্যাব আছে, সেটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) অনুমোদন দিয়েছে। সেই অনুমোদনের ফলে আমাদের ল্যাব আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেল। এতে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের মান নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকবে না। এখানে আমাদের যত ওষুধ কোম্পানি আছে, সে ওষুধের মান প্রতিনিয়ত পরীক্ষা করা হয় এবং সে মান বজায় রাখার জন্য যা যা করা প্রয়োজন তা করা হয়। আগামীতে এই ল্যাবরেটরিতে কোভিড ভ্যাকসিনও পরীক্ষা করা হবে।
মন্ত্রী বলেন, নভেম্বরে সেরাম ইনস্টিটিউটটের সঙ্গে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ভ্যাকসিন পাওয়ার বিষয়ে চুক্তি হয়েছে। পারচেজ এগ্রিমেন্টও হয়ে গেছে। আশা করছি জানুয়ারির শেষের দিকে অথবা ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে বাংলাদেশ ভ্যাকসিন পাবে। যখনই অ্যাস্ট্রাজেনেকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পাবে, তখনই বাংলাদেশ সেই ভ্যাকসিন পাবে। ভ্যাকসিন সংরক্ষণের জন্য জেলা হাসপাতালগুলোতে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ফ্রিজিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিবহনের জন্য কোল্ড বক্স কেনার প্রক্রিয়া চলছে। একইসঙ্গে দেশের ভেতরে ভ্যাকসিন সম্পর্কিত সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পরিবহন ব্যবস্থা, স্টোরেজ সিস্টেম, কোল্ড চেইন মেইনটেন্যান্সের জন্য কিছু বাড়তি কোল্ড বক্সের দরকার ছিল, সেটারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
দেশের সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষকে একবছরের মধ্যে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার কথা জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেবো। প্রথম ধাপে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার তিন কোটি ভ্যাকসিন ধাপে ধাপে দিতে ছয় মাস সময় লাগবে। পরে আমরা কোভ্যাক্সের ভ্যাকসিন পাবো। সেটাও একবারে দেবে না। ধাপে ধাপে আসবে। মোট সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে এক বছরের বেশি সময় লাগবে।
১৮ বছরের চেয়ে কম বয়সীদের ভ্যাকসিন দেওয়া প্রসঙ্গে জাহিদ মালেক বলেন, আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বয়স ২৫ বছরের নিচে। আর ১৮ বছরের নিচে ৪০ শতাংশ মানুষ। এই মুহূর্তে এদের ভ্যাকসিনের দরকার নেই। এছাড়া গর্ভবতী নারী ও কিছু অন্য জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের এই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে না। কাজেই আমাদের মোট জনসংখ্যার প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষের এই মুহূর্তে ভ্যাকসিন প্রয়োজন হবে না।
তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার নতুন ধরন দেখা দিয়েছে। সেটা বাংলাদেশে নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা এয়ারপোর্টে বলে দিয়েছি, যারা ইউরোপ থেকে আসবে তাদের আলাদা লাইনের মাধ্যমে বের করতে হবে। পাশাপাশি যারা করোনার সার্টিফিকেট না নিয়ে আসবে, তাদের তিন দিনের পরিবর্তে সাত দিনের কোয়ারেনটাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রথম ধাপে স্বাস্থ্যকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী, বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যসহ ষাটোর্ধ্বদের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে বলেও মন্তব্য করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের দেশে ৯ ধরনের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। করোনার ভ্যাকসিন এলে মোট ১০ ধরনের ভ্যাকসিন বাংলাদেশে প্রয়োগ করা হবে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমানসহ অন্যরা।