একাত্তরে দেশ স্বাধীন হলেও চেতনা প্রতিষ্ঠার লড়াই চলবে দীর্ঘদিন
২৭ ডিসেম্বর ২০২০ ২০:৫৩
ঢাকা: প্রায় ৩০ জন সহযোদ্ধা যখন ভয় পেয়ে বিস্ফোরক ফেলে পালিয়ে গেলেন, তখন বাকি যোদ্ধাদের নিয়ে লক্ষ্যে এগিয়ে যান রুহুল আহম্মদ বাবু। অপারেশনের এক পর্যায়ে পাকিস্তানিরা সামনে চলে আসে। তাদের পরাস্ত করে উড়িয়ে দিয়েছিলেন সাতমা ছড়া ব্রিজ।
যুদ্ধদিনের গৌরবগাঁথার সেই কথাগুলো সিনেমার গল্পকেও যেন হার মানায়। তবে যে মুক্তিযোদ্ধারা জীবনবাজি রেখে সেই গৌরবের কীর্তি রচনা করেছিলেন, তারা বলছেন— যুদ্ধে পাকিস্তানিদের হারিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে একাত্তর সালেই, তবে মুক্তিযুদ্ধের সেই চেতনা প্রতিষ্ঠার লড়াই এখনো চলছে, চালিয়ে যেতে হবে আরও দীর্ঘ দিন।
সারাবাংলা ডটনেটের নিয়মিত আয়োজন ‘সারাবাংলা ফোকাস’ অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের সেই গৌরবগাঁথাই তুলে ধরলেন যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আহম্মদ বাবু। বড়লেখার সাতমা ছড়া ব্রিজ উড়িয়ে দেওয়ার সেই গল্প এদিন শুনিয়েছেন তিনি।
‘একাত্তর: বড়লেখা সাতমা ছড়া ব্রিজ উড়িয়ে দেওয়ার গল্প’ শিরোনামে শনিবারের (২৬ ডিসেম্বর) এ পর্বে অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখক ও গবেষক সালেক খোকন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সারাবাংলা ডটনেটের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট এমএকে জিলানী। সারাবাংলা ডটনেটের ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।
সারাবাংলা ফোকাস অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে শুরুতেই রুহুল আহম্মদ বাবু বলেন, বাঙালি কখনোই যোদ্ধা ছিল না। সময়ই আমাদের যুদ্ধ করতে শিখিয়েছে। সেই যুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাঙালি বিজয়ও ছিনিয়ে এনেছে।
যুদ্ধদিনের কথা বলতে গিয়ে এখনো শিহরিত হন বাবু। বলেন, মুক্তিযুদ্ধে মাত্র তিন জন পাকিস্তানিকে হত্যা করতে পেরেছিলেন তিনি। আক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন, অনেক মুক্তিযোদ্ধা নিজের বীরত্ব প্রকাশের জন্য অতিরঞ্জিত করে বলেন, ৫০ জন কিংবা তারও বেশি পাকিস্তানিকে হত্যা করেছেন। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, পুরো যুদ্ধে ছয় হাজার দুইশ থেকে ছয় হাজার চারশ জন পাকিস্তানি মারা গেছেন। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আসল তথ্য তুলে ধরার আহ্বান জানান তিনি।
মুক্তিযোদ্ধা গবেষক সালেক খোকন বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করেন, তাদের এমনভাবে কাজ করা উচিত যেন প্রকৃত তথ্য প্রকাশ পায়। কারণ পরবর্তী প্রজন্মকে বিভ্রান্তিতে ফেলা যাবে না। তারা প্রকৃত সত্য খুঁজে বের করবেই। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে নিখুঁত ও প্রকৃত সত্য নিয়েই তাদের কাছে আমরা তা তুলে ধরতে চাই।
সালেক খোকন বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছেন। আমাদের একটি পতাকা দিয়েছেন, জাতীয় সংগীত দিয়েছেন। কিন্তু বীরদের স্বপ্নের বাংলাদেশ কেমন ছিল, তারা কিসের আকাঙ্ক্ষায় মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন— এসব বার্তা পৌঁছে দিতে হবে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে। তাহলেই পরবর্তী প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে উঠবে এবং দেশকে এগিয়ে নিতে পারবে। কারণ দেশ স্বাধীন হলেও চেতনা প্রতিষ্ঠার লড়াই এখনো চলছে। দীর্ঘদিন চলবে এ লড়াই।
সালেক খোকন বলেন, এখনো মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি সক্রিয়। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে শক্তি নিয়ে এ লড়াই আমাদেরকেই চালিয়ে যেতে হবে। মুক্তিযোদ্ধারা বেঁচে থাকতে তাদের কাছ থেকে ভাষ্য সংগ্রহ করতে না পারলে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায় বলে মনে করেন তিনি।
এখনো ‘হায়েনারা সক্রিয় আছে’ উল্লেখ করে রুহুল আহম্মদ বাবু তরুণদের উদ্দেশে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যেনো কোনোভাবেই হারিয়ে না যায়, সে দায়িত্ব তোমাদেরই নিতে হবে।
প্রসঙ্গত, সপ্তাহের শনি, সোম ও বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সারাবাংলা ফোকাস হয়ে থাকে। সারাবাংলা ডটনেটের ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি প্রচার হয় অনুষ্ঠানটি।
একাত্তর একাত্তর: বড়লেখা সাতমা ছড়া ব্রিজ উড়িয়ে দেয়ার গল্প বড়লেখা বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আহম্মদ বাবু মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ গবেষক সালেক খোকন সাতমা ব্রিজ সারাবাংলা ফোকাস