Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাগেরহাটে তৈরি জালনোট ছড়ায় দেশজুড়ে, ৭ হাজারে মেলে লাখ টাকা


২৮ ডিসেম্বর ২০২০ ১৮:১৪

চট্টগ্রাম ব্যুরো: খুলনা-বাগেরহাট কেন্দ্রিক জালনোট প্রস্তুতকারী চক্রের সন্ধান পেয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নিজস্ব কারখানায় তৈরি ১ লাখ টাকার জালনোট মাত্র ৭ হাজার টাকায় বিক্রি করছে চক্রটি। সেই নোট ছড়িয়ে পড়ছে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। এতে আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

অনলাইনে ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন দিয়ে মোবাইল বিক্রি করে জালনোট পাওয়া এক প্রবাসীসহ দু’জনের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নামে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। জালনোট ব্যবহার করে মোবাইল ক্রয়কারীকে গ্রেফতারের পর তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী খুলনা-বাগেরহাট কেন্দ্রিক চক্রের এক সদস্যকেও গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছেন ইউনিটের সদস্যরা।

বিজ্ঞাপন

তাদের কাছ থেকে জালনোট চক্রের বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন নগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) আসিফ মহিউদ্দীন।

গ্রেফতার দু’জন হল- মহিউদ্দিন আল আজাদ মহিন (২৬) ও মো. মারুফ মোল্লা (২৮)। দু’জনের কাছ থেকে ৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকার জালনোট উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া মহিউদ্দিনের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে কেনা ছয়টি মোবাইলও উদ্ধার করা হয়েছে।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক সঞ্জয় সিনহা সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, মহিউদ্দিন আল আজাদের বাড়ি কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার বকশিয়া ঘোনা এলাকায়। চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর থানার আদর্শ পাড়া এলাকায় তাদের বাসা। মারুফ মোল্লা বাগেরহাট জেলার সদর উপজেলার গুটাপাড়া ইউনিয়নের মৃত মাহবুব মোল্লার ছেলে।

বিজ্ঞাপন

চলতি বছরের জুলাই মাসে নগরীর হালিশহর এলাকার বাসিন্দা একজন শিক্ষার্থী ৮০ হাজার টাকা দামের একটি মোবাইল ফোন বিক্রির জন্য ফেসবুকে অফার দেন। ইংরেজিতে ‘ফাহিম খান’ নামে খোলা একটি আইডি থেকে মহিউদ্দিন ফেসবুকে ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে ৮০ হাজার টাকায় মহিউদ্দিন ফোনটি কিনে নেন। নগরীর হালিশহরে আড়ং সেন্টারের সামনে তাদের মধ্যে টাকা লেনদেন হয়। কিন্তু ওই শিক্ষার্থী বাসায় গিয়ে বুঝতে পারেন, নগদ দেওয়া ৮০ হাজার টাকার সব নোট জাল। ১৮ জুলাই তিনি হালিশহর থানায় মামলা দায়ের করেন।

সম্প্রতিকালে মার্কিন প্রবাসী এক ব্যক্তি দেশে ফিরে একটি মোবাইল সেট বিক্রির জন্য ফেসবুকে অফার দেন। সেখানেও ‘ফাহিম খান’ নামে এক ব্যক্তি তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং মোবাইল কিনতে সম্মত হন। নগরীর চন্দনপুরায় ৭৮ হাজার টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তার কাছে মোবাইল সেটটি বিক্রি করা হয়। ওই প্রবাসীও বাসায় ফিরে বুঝতে পারেন তিনি প্রতারিত হয়েছেন। তিনি কোতোয়ালী থানায় এ বিষয়ে অভিযোগ করেন।

পুলিশ পরিদর্শক সঞ্জয় সিনহা সারাবাংলাকে বলেন, ‘ফেসবুকের ফাহিম খান এবং মহিউদ্দিন আল আজাদ একই ব্যক্তি। দু’টি ঘটনায় একই ব্যক্তির সম্পৃক্ততা পেয়ে আমরা তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় প্রথমে মহিউদ্দিনকে গ্রেফতার করি। তার বাসায় অভিযান চালিয়ে ৩৪ হাজার টাকার জালনোট উদ্ধার করি। জিজ্ঞাসাবাদে মহিউদ্দিন আমাদের জানান, বাগেরহাটের জনৈক মারুফ মোল্লার কাছ থেকে তিনি জালনোটগুলো সংগ্রহ করেন। তখন তার মাধ্যমে আমরা মারুফকে গ্রেফতারের ফাঁদ পাতি। তাকে আরও ৩ লাখ টাকার জালনোট দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। মারুফ সেই জালনোট দিতে বাগেরহাট থেকে চট্টগ্রামে আসার পর আমরা তাকেও গ্রেফতার করি।’

গ্রেফতার ‍দু’জনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এডিসি আসিফ মহিউদ্দীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেখে জালনোট ব্যবহার করে মোবাইলসহ পণ্য কেনার আইডিয়া সম্পূর্ণ মহিউদ্দিনের। সে একসময় মডেলিংয়ে জড়িত ছিল। এরপর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টস অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিল। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর লকডাউন পরিস্থিতিতে তার চাকরি চলে যায়। বেকার মহিউদ্দিন জালনোট ব্যবহার করে এই প্রতারণায় জড়িয়ে পড়ে। সে গত আট মাসে আটটি প্রতারণা করেছে বলে আমাদের জানিয়েছে। আর মারুফ মোল্লার বাগেরহাটে মাছের ঘের ছিল। এখন মাছের ব্যবসা ছেড়ে পুরোপুরি জালনোটের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে, কারণ এতে লাভ অনেক বেশি।’

‘মারুফ জানিয়েছে, খুলনা ও বাগেরহাটে জালনোট তৈরির কয়েকটি কারখানা আছে। কারখানা বলতে শুধু প্রিন্টার ব্যবহার করে জালনোট ছাপানো। এমন সূক্ষ্মভাবে সেগুলো ছাপানো হয় এবং যেসব সিরিয়াল নম্বর ব্যবহার করা হয়, তাতে বোঝার কোনো উপায় নেই যে সেগুলো জাল। এই চক্রের সদস্যরা নিজেদের সাংকেতিক ভাষায় ‘রাস্তার কামলা’ বলে সম্বোধন করে। জালনোটকে বলে-কাপড়। এক লাখ টাকাকে বলে ‘একটা কাপড়’। মোবাইলে অর্ডার দেয় এভাবে যে- আমাকে একটা কাপড় দাও। অর্থাৎ আমাকে এক লাখ টাকার জালনোট দাও।’

এডিসি আসিফ আরও জানিয়েছেন, এক লাখ টাকার জাল নোট সাধারণত সাত হাজার টাকায় বিক্রি হয় বাগেরহাট থেকে। তবে ঈদের সময় চাহিদা বেড়ে গেলে তখন সর্বোচ্চ ৯ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। আর খুলনা-বাগেরহাটের কারখানা থেকে কেনার পর খুচরা হিসেবে ১ লাখ টাকার জালনোট সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।

গ্রেফতার মারুফ মোল্লা ঢাকা, খুলনা ও বাগেরহাট কেন্দ্রিক চক্রের আরও পাঁচ-ছয় জনের নাম বলেছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন এডিসি আসিফ মহিউদ্দীন।

কাপড় জাল টাকা বাগেরহাট রাস্তার কামলা লাখ টাকা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর