Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আহমদ শফীর মৃত্যু ‘অস্বাভাবিক’, বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি ছেলের


২৯ ডিসেম্বর ২০২০ ১১:৪১

ঢাকা: হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা আমির প্রয়াত আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর ঘটনাকে ‘অস্বাভাবিক’ বলে মনে করছে তার পরিবার। আহমদ শফীর মৃত্যুর ‘রহস্য’ বিচার বিভাগী তদন্তের মাধ্যমে উদঘাটন করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তার ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন আহমদ শফী আল-মাদানি।

মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে তিনি এ দাবি জানান। লিখিত বিবৃতিতে ইউসুফ আল-মাদানি চারটি দাবি তুলে ধরেন।

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে শফীপুত্রের তুলে ধরা চারটি দাবি হলো— বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে আহমদ শফীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করে এর সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শান্তির ব্যবস্থা করতে হবে; পরিবারের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলা তদন্ত করে অবিলম্বে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করতে হবে; আহমদ শফীর পরিবারের সদস্য ও তার অনুসারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, যারা মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি-ধমকি দিচ্ছে তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে; এবং আহমদ শফীর রেখে যাওয়া সব দ্বীনী ও সামাজিক অঙ্গনগুলো থেকে বিরোধীদের অপসারণ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মাওলানা ইউসুফ বিন আহমদ শফী আল-মাদানি বলেন, ‘আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মুত্যুর তিন দিন আগে হাটহাজারীতে নারকীয় তাণ্ডব ও ধ্বংসলীলা চালানো হয়েছে। তার অফিস রুম ও হাটহাজারী মাদ্রাসার অনেক শিক্ষকের রুম ভাঙচুর করা হয়েছে। জীবনের শেষে মুহূর্তে মুমূর্ষ অবস্থায় তাকে অতি প্রয়োজনীয় ওষধ গ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি। রুমের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। এসি ফ্যানসহ আসবারপত্র ভাঙচুর করা হয়েছিল। চিকিৎসার ব্যাঘাত ঘটানো, মুখের অক্সিজেন খুলে ফেলাসহ হাসপাতালে যেতে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছিলো। এতসব ঘটনার পর আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যু স্বাভাবিক হয়েছে বলার কোনো সুযোগ নেই। বরং সেদিন হাটহাজারিতে সিনিয়র শিক্ষকদের গলায় গামছা লাগিয়ে টানাহ্যাচড়া করা হয়েছিলো। তারপরেও বাবুনগরীগণ কিভাবে বলছেন, মাদ্রাসায় কোনো কিছুই হয়নি? আমরা এই মিথ্যাচারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

বিজ্ঞাপন

তিনি অভিযোগ করেন, “জুনায়েদ বাবুনগরী বারবার বলছেন, আল্লামা শাহ্ আহমদ শফীর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। তিনি এর স্বপক্ষে আমার ভিডিও বার্তার মাধ্যমে দেওয়া স্বীকারোক্তিকে বড় দলিল হিসাবে ব্যবহার করছেন। অথচ গত ২২ সেপ্টেম্বর আমার কাছ থেকে জোরপূর্বক এই স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছে।’’

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, হাটহাজারী মাদ্রাসার দায়দায়িত্ব ছিনিয়ে নেওয়া এবং আল্লামা শফীর মৃত্যুর প্রায় মাস খানেক পর হেফাজতে ইসলামের নামে মামা ভাগ্নের একটি অবৈধ কাউন্সিল করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে একটি অবৈধ কমিটি গঠন করা হয়েছে। অথচ বাবুনগরীর মামা মহিবুল্লাহ বাবুনগরী দুই বছর আগে নিজেই হেফাজত ইসলাম থেকে পদত্যাগ করেছেন। তিনি হেফাজতের কোনো দায়িত্বে না থাকলেও তার আহ্বানে অবৈধ কাউন্সিলরের মাধ্যমে গঠিত তথাকথিত এই কমিটিতে বাবুনগরীর পারিবারিক সদস্য রয়েছেন প্রায় ২২ জন।

তিনি বলেন, হেফাজতে দুইটি রাজনৈতিক দলের একটির ৩৬ জন, আরেকটির ২৪ জন সদস্যকে বিভিন্ন পদে পদায়িত করে হেফাজতকে একটি চিহ্নিত রাজনৈতিক গোষ্ঠির এজেন্ডা বাস্তবায়ন ও দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করছে। তাই আমরা এই কমিটিতে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। শিগগিরই নিয়মতান্তিকভাবে কাউন্সিল আহ্বান করে হেফাজতের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। হেফাজতের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সব জেলা, থানা, শহর ও নগর কমিটি ঘোষণা করা হবে।

এক প্রশ্নের উত্তরে মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, এই সংগঠনকে শক্তিশালী করতে সারাদেশের আলেম ওলামায়ে কেরামের সাথে পরামর্শ করে হেফাজতে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। বাবুরগরীর রুমের পাশেই আল্লামা আহমদ শফীর ওপর বর্বর নির্যাতন করা হয়েছে। তারপরেও কেউ যদি বলেন তার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে তা উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরাই হেফাজতে ইসলামের মূলধারা। এ নিয়ে কোনো বিভ্রান্তির সুযোগ নেই। আমির মারা যাওয়ার পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করার নজির দুনিয়ার কোথাও নেই।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা মাঈনউদ্দীন রুহী, আল্লামা শফীর ছোট ছেলে মাওলানা আনাস মাদানী, প্রয়াত ফজলুল হক আমিনীর ছেলে আবুল হাসনাত আমিনী, মাওলানা সলিমউল্লাহ, মাওলানা রুহুল আমিন, মুফতি আবদুস সাত্তার ও মাওলানা নুরুল ইসলামসহ হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতারা।

আল্লামা আহমদ শফী ইউসুফ আল-মাদানি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর