Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

একে একে নাম ধরে ডাকিছেন বুঝি প্রভু


৩০ ডিসেম্বর ২০২০ ১৩:১৯

ঢাকা: এক বছরে এত বেশি মহীরুহের পতন ৭১ সালের পর বোধ করি আর কখনোই ঘটেনি। শিল্প-সাহিত্যের জগতে এক অপূরণীয় শূন্যতা তৈরি করে গেল ২০২০ সাল। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস যে ঝড় শুরু হয়েছে তাতে একটার পর একটা করে ভেঙে পড়ছেন আমাদের প্রাচীন বটবৃক্ষেরা, শূন্য হতে শুরু করেছে শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গন। বিধাতা যেন একে একে ডেকে নিচ্ছেন তার কাছে। প্রায় প্রতি মাসেই মৃত্যুর মিছিলে যোগ দিচ্ছেন কেউ না কেউ। ২০২০ সালে অসংখ্য গুণী মানুষ আমাদের ছেড়ে গেছেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন-

বিজ্ঞাপন

অভিনেতা আবদুল কাদের

২৬ ডিসেম্বর, শনিবার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন অভিনেতা আবদুল কাদের। উন্নত চিকিৎসার জন্য ৮ ডিসেম্বর চেন্নাইয়ে নেওয়া হয় কাদেরকে। সেখানকার হাসপাতালে পরীক্ষার পর জানায় তার শরীরে ক্যানসার ধরা পড়েছে। শারীরিক দুর্বলতার কারণে তাকে কেমোথেরাপি না দিয়ে ২০ ডিসেম্বর ঢাকা ফেরত আনা হয়। পরদিন ২১ ডিসেম্বর তার শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৬ ডিসেম্বর তার মৃত্যু হয়।

অভিনেতা আবদুল কাদের ১৯৫১ সালে মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার সোনারং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

আবদুল কাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন। কর্মজীবন শুরু হয় শিক্ষকতা দিয়ে। তিনি সিঙ্গাইর কলেজ ও লৌহজং কলেজে অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতাও করেছিলেন। বিটপী বিজ্ঞাপনী সংস্থায় এক্সিকিউটিভ হিসেবে চাকরির পর ১৯৭৯ সাল থেকে আন্তর্জাতিক কোম্পানি ‘বাটা’তে চাকরি করেন। সেখানে ছিলেন ৩৫ বছর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অমল চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তার প্রথম নাটকে অভিনয়।

 

নাট্যকার মান্নান হীরা

২৩ ডিসেম্বর মারা যান নাট্যকার মান্নান হীরা। তিনি ১৯৫৬ সালে সিরাজগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। মফস্বল শহর থেকে মাধ্যমিক, রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক এবং পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। নাট্যচর্চার শুরু থেকেই তিনি আরণ্যক নাট্যদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

তিনি নাট্যকার হলেও মঞ্চের অন্যান্য শাখার সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্ক ছিল। সব সময় তিনি নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন মঞ্চনাটক, টেলিভিশন ও পথনাটক রচনায়। তার নাটকের প্রধান উপাদান নিরন্ন মানুষ ও দরিদ্র জনপদ। বিশেষ করে তার পথনাটক বিশাল কৃষিজীবী মানুষ, তাদের উৎপাদন ও উপকরণ কেন্দ্র করে লেখা। তীক্ষ্ণ সংলাপের ঘাত–প্রতিঘাতে মান্নান হীরার নাটক যেমন অভিনয় উপযোগী, তেমনি সুখপাঠ্য। প্রচ্ছন্ন রাজনীতিকে কেন্দ্রে রেখে প্রেম ও অন্যান্য সামাজিক সম্পর্ক আবর্তিত হয় তার নাটকে। প্রথাগত সমাজ ও রাষ্ট্র কাঠামো ভেঙে ফেলতে অনুপ্রেরণা জোগায় তার লেখা নাটক। ২০০৬ সালে তিনি নাটক শ্রেণিতে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।

বিজ্ঞাপন

তার রচিত রাজনীতি–আশ্রয়ী পথনাটক প্রশংসিত হয়েছে দেশ–বিদেশে। তার একাধিক নাটক অনূদিত হয়ে দিল্লি, হংকং, পাকিস্তান, নেপালসহ অনেক দেশে প্রদর্শিত হয়েছে।

আরণ্যক নাট্যদলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন মান্নান হীরা। তার রচিত উল্লেখযোগ্য নাটকগুলোর মধ্যে আছে- ‘ক্ষুদিরামের দেশে’, ‘ফেরারী নিশান’, ‘আদাব’, ‘ঘুমের মানুষ’ ‘মৃগনাভি’, ‘শেকল’, ‘জননী বীরাঙ্গনা’, ‘মণিমুক্তা’, ‘একাত্তরের রাজকন্যা’, ‘মেহেরজান, ‘ফুটপাত’, ‘রেফারী’, ‘বাংলার বাদশা’, ‘সুখদৈত্য’, ‘লাল জমিন’ প্রভৃতি। একটা সময়ে এসে চলচ্চিত্রেও মনোযোগী হন তিনি। ‘একাত্তরের ক্ষুদিরাম’ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন মান্নান হীরা। তার আগে মান্নান হীরা ‘গরম ভাতের গল্প’ ও ‘৭১-এর রঙপেন্সিল’ নামে দুটি স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি পরিচালনা করেন।

অভিনেতা আলী যাকের

২৭ নভেম্বর মারা যান সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আলী যাকের। বেশ কয়েক বছর ধরে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন আলী যাকের। সেই চিকিৎসার অংশ হিসেবে নিয়মিত থেরাপি চলছিল তার। এরপর শারীরিক সমস্যা বেড়ে যাওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে নেওয়া হলে কোভিড-১৯ টেস্টের ফলাফল পজিটিভ আসে। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় তিনি মারা যান।

১৯৪৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার রতনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আলী যাকের। তিনি ছিলেন চার ভাই-বোনের মধ্যে তৃতীয়। তার বাবা মোহাম্মদ তাহের ছিলেন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। বাবার চাকরির বদলি সূত্রে অল্প বয়সে কুষ্টিয়া ও মাদারীপুরে কাটান আলী যাকের।

আলী যাকের ১৯৭২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন। ওই বছরেরই জুন মাসে তিনি নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে যোগ দেন। তখন থেকে নাগরিকই তার ঠিকানা। ‘বাকি ইতিহাস’, ‘নূরলদীনের সারাজীবন’ ‘সৎ মানুষের খোঁজে’, ‘দেওয়ান গাজীর কিস্‌সা’, ‘কোপেনিকের ক্যাপটেন’, ‘গ্যালিলিও’, ‘ম্যাকবেথ’সহ অনেক আলোচিত মঞ্চনাটকের অভিনেতা ও নির্দেশক তিনি। পাশাপাশি টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেও তিনি পেয়েছেন জনপ্রিয়তা। ‘আজ রবিবার’, ‘বহুব্রীহি’, ‘তথাপি’, ‘পাথর’, ‘দেয়াল’সহ বহু নাটকে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন আলী যাকের। বেতারে ৫০টির বেশি নাটক করেছেন তিনি। অভিনয় করেছেন বেশ কিছু চলচ্চিত্রে।

টেলিভিশনের জন্য মৌলিক নাটক লিখেছেন। নানা বিষয়ে দৈনিক পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখিও করেছেন দীর্ঘদিন। প্রকাশিত হয়েছে বই—‘সেই অরুণোদয় থেকে’, ‘নির্মল জ্যোতির জয়’। শখ করে ফটোগ্রাফিও করেছেন তিনি।

‘কালি ও কলম’ সম্পাদক আবুল হাসনাত

১ নভেম্বর মারা যান সাহিত্য-শিল্প-সংস্কৃতি বিষয়ক মাসিক পত্রিকা ‘কালি ও কলম’-এর সম্পাদক আবুল হাসনাত। সাহিত্যিক ও শিল্প সমালোচক আবুল হাসনাত ৭৫ বছর বয়সে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

কবিতা, উপন্যাস, চিত্র-সমালোচনাসহ সাহিত্যের নানা বিভাগে পদচ্ছাপ রেখেছেন আবুল হাসনাত। তিনি পরিচিতি লাভ করেন একজন বিচক্ষণ ও সংবেদনশীল সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে। দৈনিক সংবাদ পত্রিকার সাহিত্য সাময়িকী দীর্ঘদিন তার তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া আবুল হাসনাত ছায়ানটের অন্যতম সংগঠক ও সদস্য ছিলেন। তিনি ছায়ানটের কার্যকরী সংসদের সাবেক সহসভাপতি।

আবুল হাসনাত ১৯৪৫ সালের ১৭ জুলাই পুরান ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। সাহিত্যে তার ছদ্মনাম ছিল মাহমুদ আল জামান। দীর্ঘ ২৪ বছর দৈনিক সংবাদের সাহিত্য সাময়িকী সম্পাদনা করা আবুল হাসনাত আমৃত্যু কালি ও কলমের সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। পাশাপাশি চিত্রকলা বিষয়ক ত্রৈমাসিক ‘শিল্প ও শিল্পী’রও সম্পাদক ছিলেন তিনি।

১৯৮২ সালে ‘টুকু ও সমুদ্রের গল্প’ র জন্য আবুল হাসনাত অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য পুরস্কার পান। ২০১৪ সালে তিনি বাংলা একাডেমির সম্মানসূচক ফেলো মনোনীত হন।

লেখক রশীদ হায়দার

১৩ অক্টোবর চলে গেলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রখ্যাত লেখক, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও বাংলা একাডেমির সাবেক পরিচালক রশীদ হায়দার।

রশীদ হায়দার গল্প-উপন্যাস-নাটক-অনুবাদ-নিবন্ধ-স্মৃতিকথা ও সম্পাদনা মিলিয়ে ৭০টির বেশি বই রচনা করেছেন। তিনি একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, হুমায়ুন কাদির পুরস্কার ও অগ্রণী ব্যাংকসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হন।

১৯৪১ সালের ১৫ জুলাই পাবনার দোহাপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন রশীদ হায়দার। পরিচিতি রশীদ হায়দার নামে হলেও তার পুরো নাম শেখ ফয়সাল আবদুর রশীদ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দীন হায়দার। ডাকনাম দুলাল।

রশীদ হায়দার গোপালগঞ্জ ইনস্টিটিউশন থেকে মাধ্যমিক, পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। বড় ভাই জিয়া হায়দারের উৎসাহে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় রশীদ হায়দার কাজ শুরু করেন চিত্রালী পত্রিকায়।

১৯৬৪ সালে পাকিস্তান রাইটার্স গিল্ডের মুখপত্র ‘পরিক্রম’ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাজ শুরু করেন রশীদ হায়দার। ১৯৭২ সালে তিনি বাংলা একাডেমিতে চাকরি শুরু করেন। ১৯৯৯ সালে বাংলা একাডেমির পরিচালকের পদ থেকে অবসর নেন। পরে তিনি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক হন।

অভিনেতা মহিউদ্দিন বাহার

১৪ সেপ্টেম্বর মৃত্যু হয় জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’ খ্যাত অভিনেতা মহিউদ্দিন বাহারের। মহিউদ্দিন বাহার ১৯৪৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর ফেনী সদর উপজেলার মোটবী ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সরকারের সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে ২০০৫ সালে অবসর নেন।

সরকারি চাকরিজীবী হলেও অভিনয় ছিল মহিউদ্দিন বাহারের নেশা। স্কুলজীবন থেকেই বিভিন্ন নাট্য সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৭৬ সালে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের ছোটদের সিরিজ ‘রোজ রোজ’-এ প্রথম অভিনয় করেন মহিউদ্দিন বাহার। এরপর চাকরির পাশাপাশি হুমায়ূন আহমেদ, গিয়াস উদ্দিন সেলিমসহ অনেকের নাটকে অভিনয় করেন। প্রায় ২৬ বছর ধরে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে সমাজের নানা অসংগতি নিয়ে অভিনয় করেন মহিউদ্দিন বাহার। ইত্যাদিতে নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় মহিউদ্দিন বাহারের স্বভাবসুলভ সংলাপ হাসির খোরাক জোগাত।

ভাস্কর মৃণাল হক

২২ আগস্ট মারা যান ভাস্কর মৃণাল হক। সুপরিচিতি এ ভাস্কর নিজ উদ্যোগে নির্মাণ করেন মতিঝিলের ‘বলাকা’ ভাস্কর্যটি। ২০০৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নির্মিত গোল্ডেন জুবিলি টাওয়ার তারই শিল্পকর্ম।

রাজধানীতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে ‘রত্নদ্বীপ’, হোটেল শেরাটনের সামনে ‘রাজসিক’, পরীবাগ মোড়ে ‘জননী ও গর্বিত বর্ণমালা’, ইস্কাটনে ‘কোতোয়াল’, সাতরাস্তায় ‘ময়ূর’, মতিঝিলের ‘বক’, এয়ারপোর্ট গোল চত্বরের ভাস্কর্য, নৌ সদর দফতরের সামনে ‘অতলান্তিকে বসতি’, সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ের ভাস্কর্য, বঙ্গবাজারে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্যসহ বিভিন্ন ভাস্কর্যের নির্মাতা তিনি।

চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর

১৫ আগস্ট মারা যান বরেণ্য চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর। করোনায় সংক্রমিত হয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।

মুর্তজা বশীর অনেক দিন ধরেই হৃদ্‌রোগ, ফুসফুস ও কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিনি সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার করোনা পরীক্ষা করা হলে ফলাফল পজিটিভ আসে। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

প্রখ্যাত ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ছেলে মুর্তজা বশীরের জন্ম ১৯৩২ সালের ১৭ আগস্ট। বাংলাদেশের শিল্পকলার পরিসরে মুর্তজা বশীর ছিলেন অপরিহার্য ও অন্যতম উল্লেখ্য এক নাম। দৃশ্যশিল্পের বিভিন্ন শাখায় যেমন বিচরণ করেছেন তিনি, তেমনি সৃজনকলার অন্য দুটি মাধ্যম সাহিত্য ও চলচ্চিত্রেও রেখেছেন সৃজন-প্রতিভার স্বাক্ষর। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর সদ্য বিকাশমান এই অঞ্চলের দ্বিধাগ্রস্ত শিল্পকলাকে যারা পর্যাপ্ত আস্থা ও উপাদান জুগিয়েছেন, তিনি অবশ্যই তাদের মধ্যে অন্যতম। শুধু তা–ই নয়, মুর্তজা বশীর একাধারে চিত্রশিল্পী, ভাষাসংগ্রামী, গবেষক ও ঔপন্যাসিক।

তার গল্প, উপন্যাস, এমনকি তার কবিতাও মূলত আত্মজৈবনিক। মহান ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদের মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণের পর রক্তাক্ত আবুল বরকতকে যারা হাসপাতালে নিয়ে যান, মুর্তজা বশীরও তাদের মধ্যে ছিলেন।

চিত্রকলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ১৯৮০ সালে একুশে পদক পান মুর্তজা বশীর। একই কাজে স্বাধীনতা পুরস্কার পান ২০১৯ সালে। কর্মজীবনে তিনি দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

বাংলাদেশে বিমূর্ত ধারার চিত্রকলার অন্যতম পথিকৃৎ মুর্তজা বশীরের ‘দেয়াল’, ‘শহীদ শিরোনাম’, ‘পাখা’, ‘রক্তাক্ত ২১ শে’ শিরোনামের চিত্রকর্মগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পেইন্টিং ছাড়াও ম্যুরাল, ছাপচিত্রসহ চিত্রকলার বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করেছেন তিনি। এ ছাড়া লিখেছেন বই এবং গবেষণা করেছেন মুদ্রা ও শিলালিপি নিয়েও। বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য দেয়ালচিত্র করেছেন মুর্তজা বশীর।

 

সুরকার আলাউদ্দীন আলী

৯ আগস্ট মারা যান বরেণ্য সংগীতব্যক্তিত্ব আলাউদ্দীন আলী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের প্রদাহ ও রক্তে সংক্রমণের সমস্যায় ভুগছিলেন।

আলাউদ্দীন আলী বাংলা গান, বিশেষ করে বাংলা চলচ্চিত্রে অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান তৈরি করেছেন। তিনি একই সঙ্গে সুরকার, সংগীত পরিচালক, বেহালাবাদক ও গীতিকার। গান লিখে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন। গুণী এই মানুষের জন্ম ১৯৫২ সালের ২৪ ডিসেম্বর মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বাঁশবাড়ি গ্রামে। তার বাবা ওস্তাদ জাদব আলী। মায়ের নাম জোহরা খাতুন।

দেড় বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে ঢাকার মতিঝিলের এজিবি কলোনিতে চলে আসেন আলাউদ্দীন আলী। তিন ভাই ও দুই বোনের সঙ্গে সেই কলোনিতেই বড় হন এই গুণী শিল্পী। সংগীতে প্রথম হাতেখড়ি ছোট চাচা সাদেক আলীর কাছে। পরে ১৯৬৮ সালে বাদ্যযন্ত্রশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রজগতে পা রাখেন। শুরুটা শহীদ আলতাফ মাহমুদের সহযোগী হিসেবে, পরে প্রখ্যাত সুরকার আনোয়ার পারভেজের সঙ্গে কাজ করেন দীর্ঘদিন।

লোকজ ও ধ্রুপদি গানের সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা আলাউদ্দীন আলীর সুরের নিজস্ব ধরন বাংলা সংগীতে এক আলাদা ঢং হয়ে উঠেছে প্রায় চার দশক ধরে। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের বহু স্বনামধন্য শিল্পী তার সুরে গান করে নিজেদের সমৃদ্ধ করেছেন। তার সুরারোপিত গানের মধ্যে ‘একবার যদি কেউ ভালোবাসত’, ‘যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়’, ‘ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়’, ‘দুঃখ ভালোবেসে প্রেমের খেলা খেলতে হয়’, ‘এই দুনিয়া এখন তো আর সেই দুনিয়া নাই’, ‘সূর্যোদয়ে তুমি সূর্যাস্তেও তুমি ও আমার বাংলাদেশ’, ‘এমনও তো প্রেম হয়, চোখের জলে কথা কয়’, ‘হয় যদি বদনাম হোক আরও’, ‘প্রথম বাংলাদেশ, আমার শেষ বাংলাদেশ’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গান রয়েছে।

তিনি ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ (১৯৭৯), ‘সুন্দরী’ (১৯৮০), ‘কসাই’ এবং ‘যোগাযোগ’ চলচ্চিত্রের জন্য ১৯৮৮ সালে শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এ ছাড়া তিনি খ্যাতিমান পরিচালক গৌতম ঘোষ পরিচালিত ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনা করেছেন।

সঙ্গীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোর

দীর্ঘ ১০ মাস ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করে হেরে গেলেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোর। ৬ জুলাই, ২০২০ তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

শরীরে নানা ধরনের জটিলতা নিয়ে অসুস্থ অবস্থায় গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে দেশ ছেড়েছিলেন এন্ড্রু কিশোর। এরপর ১১ জুন বিকেলে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফেরেন তিনি। ফিরে যান রাজশাহীতে, যেখান থেকে শুরু। নিজের শহর রাজশাহীর মহিষবাথান এলাকায় বোনের বাড়িতে শেষ হলো তার জীবনের গল্প, পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিলেন তিনি।

বাংলা গানের এই কণ্ঠশিল্পী ‘প্লেব্যাক সম্রাট’ নামে পরিচিত। বাংলাদেশের আধুনিক ও চলচ্চিত্রজগতের কালজয়ী অনেক গান তার কণ্ঠে সমৃদ্ধ হয়েছে। সুখ-দুঃখ, হাসি-আনন্দ, প্রেম-বিরহ—সব অনুভূতির গানই তিনি গেয়েছেন। ১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর তিনি রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন। সেখানেই তিনি বেড়ে উঠেছেন। পড়াশোনা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে।

এন্ড্রু কিশোর প্রাথমিকভাবে আবদুল আজিজ বাচ্চুর অধীনে সংগীতের পাঠ শুরু করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের পর নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, আধুনিক, লোকসংগীত, দেশাত্মবোধকসহ প্রায় সব ধারার গানে কণ্ঠ দেন রাজশাহী বেতারে তালিকাভুক্ত সংগীতশিল্পী হিসেবে। চলচ্চিত্রে এন্ড্রু কিশোর গান গাওয়া শুরু করেন ১৯৭৭ সালে। ‘মেইল ট্রেন’ ছবিতে তিনি গেয়েছিলেন ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানটি। চলচ্চিত্রে এটাই ছিল তার প্রথম গান। সুরকার ও সংগীত পরিচালক ছিলেন আলম খান। কিন্তু এন্ড্রু কিশোর সবার কাছে পৌঁছে যান দুই বছর পর। তার গানটি ছিল ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’। মনিরুজ্জামান মনিরের লেখা গানটির সুরকার ও সংগীত পরিচালক ছিলেন আলম খান।

দীর্ঘদিন পুরোদস্তুর পেশাদার কণ্ঠশিল্পী হিসেবে দুই বাংলায় গান করেছেন এন্ড্রু কিশোর। একের পর এক জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন তিনি।

এন্ড্রু কিশোরের সবচেয়ে জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে ‘জীবনের গল্প/ আছে বাকি অল্প’, ‘হায় রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যিখানে’, ‘তুমি যেখানে/ আমি সেখানে’, ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’, ‘চাঁদের সাথে আমি দেব না তোমার তুলনা’, ‘বেদের মেয়ে জোসনা আমায় কথা দিয়েছে’, ‘তুমি আমার জীবন/ আমি তোমার জীবন’, ‘ভালো আছি ভালো থেকো’, ‘ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা’, ‘ভালোবেসে গেলাম শুধু ভালোবাসা পেলাম না’, ‘তুমি আমার কত চেনা’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’, ‘তোমায় দেখলে মনে হয়’,‘এইখানে দুইজনে নির্জনে’সহ অনেক গান। জীবনের বেশির ভাগ সময়ে মূলত চলচ্চিত্রে গান করেই কাটিয়েছেন। চলচ্চিত্রে এতটাই ব্যস্ত ছিলেন যে অডিও বাজারে খুব একটা অ্যালবাম করেননি। চলচ্চিত্রের বাইরে এসে প্রথম দিকে তিনি ‘ইত্যাদি’তে গান করেন ‘পদ্মপাতার পানি নয়’, যা বেশ জনপ্রিয়তা পায়। পরবর্তীকালে বেশ কয়েকবার ‘ইত্যাদি’তে এসেছেন।

সাংবাদিক কামাল লোহানী

করোনায় আক্রান্ত ২০ জুন মারা যান ৮৬ বছর বয়সী সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক কামাল লোহানী। এ দেশের ঐতিহাসিক নানা ঘটনার সঙ্গে রয়েছে তার যুক্ততা। ১৯৬১ সালে অন্য অনেকের সঙ্গে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী পালনে তারও ছিল দৃঢ় ভূমিকা। তার পুরো নাম কিন্তু আবু নঈম মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল খান লোহানী। তার জন্ম সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানার খান সনতলা গ্রামে। ১৯৩৪ সালের ২৬ জুন। মা হারান ৬-৭ বছর বয়সে। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকার মধ্য দিয়ে স্কুলজীবন শুরু করেন। ১৯৪৮ সালে চলে আসেন পাবনায়। ভাষা আন্দোলনের বছর পাস করেন মাধ্যমিক পরীক্ষা। সে সময় থেকেই রাজনীতিকে পেলেন বন্ধু হিসেবে। পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে তিনি প্রচলিত শিক্ষার ইতি টানেন। রাজনীতি, সাংবাদিকতা ও সংস্কৃতিচর্চায় নিয়োজিত হন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় কামাল লোহানী স্বাধীন বাংলা বেতারের সংবাদ বিভাগের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৫ ডিসেম্বর তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন ঢাকা বেতারের। ১৯৭৩ সালে ‘দৈনিক জনপদ’ নামে একটি নতুন পত্রিকায় যোগ দিয়ে আবার ফিরে আসেন সাংবাদিকতায়। ১৯৭৪ সালে ‘বঙ্গবার্তা’, এরপর ‘দৈনিক বাংলার বাণী’ পত্রিকায় কাজ করেন। ১৯৭৭ সালে রাজশাহী থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক বার্তা’র নির্বাহী সম্পাদক হন। ১৯৭৮ সালে তাকে সম্পাদক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৮১ সালে তৎকালীন তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মতবিরোধ হলে ‘দৈনিক বার্তা’ছেড়ে ‘বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট’ এ যোগ দেন। ১৯৯১ সালে তিনি শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ষোলো মাসের মাথায় সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে মতবিরোধ হওয়ায় তিনি পিআইবিতে ফিরে আসেন। ২০০৮ সালে দুই বছরের জন্য আবার শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।

কর্মজীবনে কামাল লোহানী দৈনিক মিল্লাত পত্রিকায় সাংবাদিকতা শুরু করেন। এরপর আজাদ, সংবাদ, পূর্বদেশ, দৈনিক বার্তায় গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটেরও উপদেষ্টা কামাল লোহানী বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে দুবার মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সভাপতি হিসেবে এবং ছায়ানটের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন এই গুণী ব্যক্তিত্ব। ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি।

অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান

১৪ মে চলে গেলেন জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। ৮৩ বছর বয়সে ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

আনিসুজ্জামানের জন্ম ১৯৩৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি, অবিভক্ত ভারতের চব্বিশ পরগনা জেলার বসিরহাটে। তিনি চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী শিক্ষক। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে গিয়ে বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে কাজ করেন। বর্তমানে বাংলা একাডেমির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

আনিসুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইমেরিটাস অধ্যাপক। তিনি ভাষা আন্দোলন (১৯৫২), ঊনসত্তরের গণ–অভ্যুত্থান (১৯৬৯) ও ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ড. কুদরাত-এ-খুদাকে প্রধান করে গঠিত জাতীয় শিক্ষা কমিশনের সদস্য ছিলেন। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস নিয়ে তার গবেষণা সবিশেষ উল্লেখযোগ্য।

শিক্ষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য একাধিক পুরস্কার লাভ করেছেন আনিসুজ্জামান। প্রবন্ধ গবেষণায় অবদানের জন্য ১৯৭০ সালে তিনি বাংলা একাডেমি থেকে প্রদত্ত বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। শিক্ষায় অবদানের জন্য তাকে ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। শিক্ষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য তাঁকে ভারত সরকার কর্তৃক প্রদত্ত তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মভূষণ পদক প্রদান করা হয়। সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৫ সালে তাঁকে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়।

এ ছাড়া তিনি ১৯৯৩ ও ২০১৭ সালে দুবার আনন্দবাজার পত্রিকা কর্তৃক প্রদত্ত আনন্দ পুরস্কার, ২০০৫ সালে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি লিট ডিগ্রি এবং ২০১৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জগত্তারিণী পদক লাভ করেন। ২০১৮ সালের ১৯ জুন বাংলাদেশ সরকার তাঁকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়।

অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী

২৮ এপ্রিল মারা যান জাতীয় অধ্যাপক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা জামিলুর রেজা চৌধুরী। জামিলুর রেজা চৌধুরী সবশেষ ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের (ইউএপি) উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

জামিলুর রেজা চৌধুরী বাংলাদেশের প্রকৌশল জগতে সবার পরিচিত নাম। একাধারে তিনি গবেষক, শিক্ষাবিদ, প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানী ছিলেন। তার জন্ম ১৯৪৩ সালে, সিলেটে। তার বাবা আর ভাইসহ পরিবারের অনেক সদস্যই প্রকৌশলী ছিলেন। বড় হয়ে তার বাবা ও ভাইদের মতো তিনিও বেছে নেন এই পেশা।

স্বাধীনতার পর এ দেশে যত বড় বড় ভৌত অবকাঠামো তৈরি হয়েছে, তার প্রায় প্রতিটির সঙ্গেই জামিলুর রেজা চৌধুরী কোনো না কোনোভাবে জড়িত ছিলেন। যুক্ত ছিলেন বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে। হাত দেন পদ্মা সেতু নির্মাণের বিশাল কর্মযজ্ঞে। জামিলুর রেজা চৌধুরী একসময় যুক্তরাষ্ট্রে কাজের ডাক পেয়েছিলেন বিখ্যাত আরেক বাংলাদেশি প্রকৌশলী এফ আর খানের কাছ থেকে।

দেশে-বিদেশে বিভিন্ন অবদানের জন্য সমাদৃত জামিলুর রেজা চৌধুরীর প্রায় ৭০টি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন অনেক পুরস্কার আর সম্মাননা। এর মধ্যে আছে বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট স্বর্ণপদক, ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে পাওয়া সম্মানসূচক ডক্টর অব ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি।

একসময় বুয়েটে অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন জামিলুর রেজা চৌধুরী। দায়িত্ব পেয়েছিলেন ১৯৯৬ সালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবেও। উপাচার্য ছিলেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির। এ ছাড়া বাংলাদেশে আর্থকোয়েক সোসাইটি, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এবং বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন অনেক দিন ধরে।

এছাড়া বছরজুড়ে মৃত্যুরে মিছিলে যোগ দিয়েছেন ‘রঙিন রূপবান’ চলচ্চিত্রের নায়ক সাত্তার, এরশাদের শাসনামলে ‘গেদু চাচার খোলা চিঠি’ কলাম লিখে জনপ্রিয় হওয়া সাংবাদিক খোন্দকার মোজাম্মেল হক, স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের শিল্পী মৃণাল ভট্টাচার্য, প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক দেবেশ রায়, টিভি ব্যাক্তিত্ব শেখ রিয়াজউদ্দিন বাদশা, ‘মুভি মোগল’ খ্যাত জাহাঙ্গীর খান, কবি মনজুরে মাওলা, চলচ্চিত্র প্রযোজক নাসিরউদ্দিন দিলু, উপমহাদেশের প্রখ্যাত আবৃত্তিকার প্রদীপ ঘোষ, অভিনেতা কে এস ফিরোজ; দেশের প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ, সুরকার ও সংগীত পরিচালক আজাদ রহমান, অভিনেতা সাদেক বাচ্চু, সুরকার সেলিম আশরাফ, অভিনয়শিল্পী ফেরদৌসী আহমেদ লীনা, মঞ্চাভিনেত্রী-নির্দেশক ইশরাত নিশাত, অভিনেতা সেলিম আহমেদ, সংগীতশিল্পী জবা চৌধুরী ও চলচ্চিত্র পরিচালক মহিউদ্দিন ফারুক প্রমুখ।

‘মুভি মোগল’ খ্যাত জাহাঙ্গীর খান ‘রঙিন রূপবান’ চলচ্চিত্রের নায়ক সাত্তার ২০২০ অভিনয়শিল্পী ফেরদৌসী আহমেদ লীনা অভিনেতা আবদুল কাদের অভিনেতা কে এস ফিরোজ; দেশের প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ অভিনেতা সাদেক বাচ্চু অভিনেতা সেলিম আহমেদ উপমহাদেশের প্রখ্যাত আবৃত্তিকার প্রদীপ ঘোষ কবি মনজুরে মাওলা করোনা করোনাভাইরাস কালি ও কলমের সম্পাদক চলচ্চিত্র পরিচালক মহিউদ্দিন ফারুক চলচ্চিত্র প্রযোজক নাসিরউদ্দিন দিলু চলে গেলেন যারা টিভি ব্যাক্তিত্ব শেখ রিয়াজউদ্দিন বাদশা প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক দেবেশ রায় মঞ্চাভিনেত্রী-নির্দেশক ইশরাত নিশাত সংগীতশিল্পী জবা চৌধুরী সুরকার ও সংগীত পরিচালক আজাদ রহমান সুরকার সেলিম আশরাফ স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের শিল্পী মৃণাল ভট্টাচার্য

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর