দেশের পোশাক শিল্পকে এগিয়ে নিতে ভরসা ডিজিটালাইজেশনে
৩ জানুয়ারি ২০২১ ২০:০৬ | আপডেট: ৫ জানুয়ারি ২০২১ ২১:২৫
ঢাকা: করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সারাবিশ্ব যখন ক্রমেই স্থবির হতে থাকে, সরব হতে শুরু করে অনলাইনগুলো। চাল, ডাল, সবজি থেকে শুরু করে পোশাক— সব ধরনের পণ্যের অনলাইন বেচাকেনা বেড়ে যায়। দেশি পোশাক কোম্পানিগুলো খুব সহজেই অনলাইন বেচাকেনায় অভ্যস্ত হতে পারলেও গার্মেন্টস শিল্পের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারে সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা অনেকটা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এর অন্যতম কারণ হিসেবে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলাতে না পারাকে গুরুত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস বায়িং হাউজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী ইফতেখার হোসাইন।
সারাবাংলা ডটনেটের নিয়মিত আয়োজন ‘সারাবাংলা ফোকাস’ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন। সোমবারের (২৮ ডিসেম্বর) এ পর্বে আলোচনার বিষয় ছিল ‘বদলে যাওয়া ফ্যাশন বিশ্ব: কতটা প্রস্তুত আমরা?’। সারাবাংলার সিনিয়র নিউজরুম এডিটর রাজনীন ফারজানার সঞ্চালনায় এ পর্বে অতিথি হিসেবে আরও যুক্ত ছিলেন দেশি ফ্যাশন হাউজ বিবিয়ানার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান ডিজাইনার লিপি খন্দকার এবং লা রিভ-এর প্রধান নির্বাহী মুন্নুজান নার্গিস।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, করোনা পুরো বিশ্বকে পাল্টে দিয়েছে। পোশাক শিল্পেও এমন অনেক পরিবর্তন এসেছে যা নিয়ে আগে কখনোই ভেবে দেখেননি সংশ্লিষ্টরা। কাজী ইফতেখার হোসাইন বলেন, লকডাউনের আগে গ্রীষ্মকালীন পোশাকের শিপমেন্ট প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মহামারি শুরুর পর বাসায় পরা এবং অ্যাথলেটদের পোশাকের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। বাংলাদেশ কিন্তু সে ধরনের পোশাক রফতানি করে না। বাংলাদেশ টি-শার্ট, শার্ট, প্যান্ট— এরকম চার থেকে পাঁচ ধরনের পোশাক নিয়ে কাজ করে।
মহামারিতে কাঁচামাল আমদানি বন্ধ থাকায় পোশাক শিল্পে অনেক বড় ধরনের প্রভাব পড়ে উল্লেখ করে তিনি জানান, এ শিল্পের কাঁচামালের জন্য বাংলাদেশকে বিদেশের ওপর নির্ভর করতে হয়।
এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য পোশাকশিল্পে প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর জোর দেন কাজী ইফতেখার। তিনি বলেন, আমাদের ব্যবসায় থ্রিডি প্রযুক্তি ব্যবহার করলে অনেক কাজ সহজ হয়ে যাবে। এছাড়া সরকারকেও কিছু বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। যেমন বর্তমান মুদ্রানীতিতে ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা দেশের বাইরে টাকা পাঠাতে পারেন না। এমন অনেক প্রযুক্তি আছে যেগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে এবং নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলতে হবে।
পোশাক শিল্পের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রযুক্তিতে অনেক পিছিয়ে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যোগাযোগ, শিক্ষা এবং প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করতে পারেলে বাংলাদেশের আগামী দিনের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে।
করোনায় ব্যবসার ধরন পাল্টে গেছে বলে একমত প্রকাশ করেন লিপি খন্দকার ও মুন্নুজান নার্গিস। লিপি খন্দকার বলেন, করোনার কারণে অনলাইনে আগের চেয়ে অনেক বেশি পোশাক বেচাকেনা বেড়েছে। ব্যবসা এখন অফলাইন থেকে অনলাইন মার্কেটের দিকে যাচ্ছে। তাই এই পরিবর্তনের সময়টাতে আমরা কীভাবে এগিয়ে যাব, সেটা নিয়ে সচেতনভাবে কাজ করতে হবে।
মুন্নুজান নার্গিস বলেন, করোনার সময়ে অনলাইন বাজার ধরতে পারায় ভালো অবস্থানে আছে দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলো। তারা এখন আগের চেয়ে অনেক দক্ষ জনবল পাচ্ছে। এছাড়া লকডাউনে দেশি পোশাকের ক্রেতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। বলা যায়, মহামারি দেশীয় পোশাক শিল্পের জন্য সম্ভাবনা তৈরি করেছে। সবাই মিলে কাজ করলে এ শিল্পকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন মুন্নুজান নার্গিস।
কাজী ইফতেখার হোসাইন আরও বলেন, বদলে যাওয়া বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে আগামী দিনে কী ধরনের পোশাক আসতে পারে, সেটি গবেষণা করে বের করতে হবে। তারপর কাজ করতে হবে।
কাঁচামাল নিয়ে কাজ করার জন্য বাংলাদেশের সুযোগ তৈরি হয়েছে উল্লেখ করেন তিনি আরও বলেন, এ ক্ষেত্রে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। উদাহরণ হিসেবে ইফতেখার হোসাইন বলেন, উপযুক্ত গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশের ময়লার ভাগাড়ে জমে থাকা প্লাস্টিক ও পেট বোতল দিয়ে সুতা তৈরি করা সম্ভব হতে পারে। ।
তরুণ প্রজন্ম এসব কাজে এগিয়ে এলে বাংলাদেশ আত্মনির্ভরশীল হতে পারবে বলে মনে করেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। তারা জানান, এভাবে কাজ করলে দেশীয় পোশাক ও গার্মেন্টস শিল্প দু’টোই একসঙ্গে এগিয়ে যাবে।
‘সারাবাংলা ফোকাস’ সপ্তাহের প্রতি শনি, সোম ও বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে সারাবাংলা ডটনেটের ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।
করোনায় ফ্যাশন বিশ্ব কাজী ইফতেখার হোসাইন গার্মেন্টস শিল্প পোশাক শিল্প বদলে যাওয়া ফ্যাশন বিশ্ব বদলে যাওয়া ফ্যাশন বিশ্ব; কতটা প্রস্তুত আমরা? বাংলাদেশ গার্মেন্টস বায়িং হাউজ অ্যাসোসিয়েশন বিবিয়ানা মুন্নুজান নার্গিস রফতানি পণ্য লা রিভ লিপি খন্দকার সারাবাংলা ফোকাস