৬ মাস পর পদ্মাসেতুর রেল প্রকল্পের ত্রুটি সমাধান, বাড়ছে পাইল
৩১ ডিসেম্বর ২০২০ ১৬:৩৭
ঢাকা: প্রায় ৬ মাস পর পদ্মাসেতুর রেললাইন প্রকল্পের ত্রুটির সমাধান বেরিয়েছে। সেতুর দুই পাড়ে রেললাইনের সঙ্গে সড়কের উচ্চতা ও প্রশস্ততার ত্রুটি ধরা পড়েছিল গত জুন মাসের দিকে। এখন যে সমাধান বের করা হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, কোনো খুঁটি না ভেঙে শুধু পাইল বাড়িয়ে দিয়ে ‘রি-ডিজাইন’ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) সেতু কর্তৃপক্ষ রেল প্রকল্পের এমন সমাধানে সম্মত হয়েছে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের হেডরুম উচ্চতার ত্রুটি নিয়ে সারাবাংলা প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বিষয়টি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে দ্রুত সমাধানের তাগিদ আসে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ত্রুটি সমাধানে ‘রি-ডিজাইন’ করার কাজ শুরু হয়।
সেতুর দুই পাড়ে আনুভূমিক (হরাইজন্টাল) ও উলম্ব (ভার্টিক্যাল)— দুই দিকেই রেলওয়ের কাজে ত্রুটি দেখা দিয়েছিল। আগের ওই নকশায় দেখা যায়— দেশের সড়কপথের হেডরুমের ক্ষেত্রে আনুভূমিকে ১৫ মিটার ও উলম্বে ৫ দশমিক ৭ মিটার পরিমাপকে স্ট্যান্ডার্ড মানা হলেও পদ্মাসেতুর রেল প্রকল্পে তা মানা হয়নি। এ অবস্থায় সেতুতে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও দ্বিতল বাস প্রবেশ করতে পারবে না- এমন আশঙ্কা থেকে সেতু কর্তৃপক্ষ রেল প্রকল্পের কাজে আপত্তি দিয়েছিল।
আরও পড়ুন-
- পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প ‘রি ডিজাইন’ করার সিদ্ধান্ত
- রেলপথে ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দূরত্ব কমে অর্ধেক হবে
- পদ্মাসেতুর রেললাইন ডিজাইনে ‘ত্রুটি’, হেডরুমে ঠেকে যাবে যানবাহন!
- পদ্মাসেতুর রেললাইন ডিজাইনে ‘ত্রুটি’ সমাধানে কাজ করছেন বিশেষজ্ঞরা
ত্রুটি সমাধানের বিষয়টি বৃহস্পতিবার দুপুরে সারাবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক গোলাম ফখরুদ্দিন চৌধুরী ও পদ্মাসেতু প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম।
গোলাম ফখরুদ্দিন বলেন, ‘রেল প্রকল্পের নকশা নতুন করে করতে হয়েছে। তবে কোথাও কোনো খুঁটি বা পাইল ভাঙা পড়েনি। জাজিরা পাড়ে শুধু পাইল সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়ে প্রয়োজনীয় উচ্চতা ও প্রস্থ বাড়ানোহয়েছে।’
‘পদ্মাসেতু কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার এ নতুন ডিজাইনে সম্মত হয়ে চিঠিও দিয়েছে। এখন সেখানে পাইল বাড়িয়ে দিয়ে কাজ শুরু করতে আর বাধা নেই,’— বলেন তিনি।
পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের এই প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, তবে সেতুর মাওয়া প্রান্তে একই সমস্যার সমাধান চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আরও সপ্তাহখানেকের মধ্যে মাওয়া অংশের সমাধান আসবে।
পদ্মাসেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানান, রেল প্রকল্প থেকে পাঠানো নকশাটি যাচাই করে আনুভূমিক ক্লিয়ারেন্স ১৫ দশমিক ৫ মিটার পাওয়া গেছে। এ ছাড়া উচ্চতাও ৫ দশমিক ৭ মিটার করা হয়েছে এ ডিজাইনে।
পদ্মাসেতুর দুই প্রান্তে ওঠা ও নামার পথে রেললাইনের সঙ্গে মূল সেতুর সড়কের উচ্চতা ও প্রশস্ততার এই ত্রুটি দেখা দিয়েছিল। সড়কের যে পরিমাণ প্রশস্ততা ও উচ্চতা প্রয়োজন, তা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল রেললাইনের কারণে।
অবশেষে সেই সমাধান ফেরায় স্বস্তি ফিরেছে প্রকল্পে। ছয় মাস পর পদ্মাসেতুর দুই পাড়ে রেললাইনের কাজ আবার শুরু হবে।
রেল সংযোগ প্রকল্প পরিচালক গোলাম ফখরুদ্দিন জানান, এখন জাজিরা প্রান্তে কাজ শুরু করবেন তারা। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে রেল প্রকল্পের খুঁটিতে পাইল বাড়িয়ে দিয়ে এ সমাধান বের করা হয়েছে।
প্রকল্প সূত্র জানায়, সমাধান নিয়ে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত যাওয়া হয়েছে। বিষয়টি সমাধানে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ হয়েছে।
মূল পদ্মাসেতুর ভেতরে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেতু ও রেললাইন নির্মাণ কাজ করছে সেতু কর্তৃপক্ষ।
সেতুর পরে দুই পাড়ে সংযোগ সড়কে ওঠানামার ক্ষেত্রে এই ত্রুটি দেখা দিয়েছিল। এখন জাজিরা পাড়ের সমাধান সেতু কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমোদন হলো। আর মাওয়া পাড়ের সমাধানে আরও সপ্তাহ খানেক সময় লাগবে।
এদিকে পদ্মা মূল সেতুর সবশেষ অগ্রগতি ৯১ দশমিক ৫০ ভাগ। মূল সেতুর ৪১টি স্প্যান বসানো শেষে এখন চলছে ওপরে সড়ক ও ভেতরে রেলপথের কাজ। সেতুর ২ হাজার ৯১৭টি রোড স্ল্যাবের মধ্যে ১৪৫৫টি বসে গেছে। অর্থাৎ সড়কপথ নির্মাণের ৫০ শতাংশ কাজ শেষ। আর রেলওয়ের ২ হাজার ৯৫৯টি স্ল্যাবের মধ্যে বসেছে ২ হাজার ৭৪টি। অর্থাৎ এই কাজের প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ শেষ। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮৩ শতাংশ।