মাঠ গরম নয়, বিএনপির ২০২১ কাটবে সুবর্ণজয়ন্তী ঘিরে
৩১ ডিসেম্বর ২০২০ ২৩:৩৩
ঢাকা: টানা ১৪ বছর ক্ষমতায় বাইরে থাকা বিএনপির ২০২১ সালের পরিকল্পনায় ‘মাঠ গরম’ নেই। বরং পুরো বছরের পরিকল্পনাটা ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’-কে ঘিরে। বছরজুড়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর কর্মসূচি পালন করবে দলটি। পাশাপাশি সংগঠন গোছানোর কাজে মনোনিবেশ করবে তারা।
দলটির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। ২০২১ সাল নিয়ে বিশেষ কিছু পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন তারা।
দলীয় সূত্রমতে, সরকারের নির্বাহী আদেশে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ‘সাময়িক’ কারামুক্ত থাকায় মাঠ গরমের আন্দোলন বা ‘হঠকারী’ কোনো সিদ্ধান্তে যেতে চায় না বিএনপি। শারীরিকভাবে অত্যন্ত অসুস্থ খালেদা জিয়াকে ‘নিরাপদ’ অবস্থানে রেখেই সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনার পক্ষে দলটির হাইকমান্ড। সেক্ষেত্রে সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা ও রুটিন কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়েই ২০২১ সালটা পার করতে চায় বিএনপি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, দলের অতি উৎসাহী নেতা ও ‘তথাকথিত’ শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্ররোচনায় কঠোর কর্মসূচি দিয়ে পরিবেশকে ঘোলাটে করার পক্ষপাতী নন বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। বরং খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় দফায় ছয় মাসের ‘সাময়িক’ মুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তার স্থায়ী মুক্তির বিষয়টি নিয়ে সরকারের সাথে প্রয়োজনীয় ‘ডিলিংস’ সেরে ফেলতে চায় বিএনপি। আগামী ২৪ মার্চের মধ্যেই খালেদা জিয়ার মুক্তির শর্তগুলো শিথিল করে চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানো অথবা ঢাকার ভালো কোনো হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা চূড়ান্ত করতে চায় তার দল।
জানা গেছে, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে গত ১২ নভেম্বর রাজধানীতে বিক্ষোভ ও ১৪ ডিসেম্বর পল্টন মোড় অবরোধ করে হঠাৎ মাঠ গরমের উদ্যোগের পেছনে যারা ছিলেন, তাদেরকে শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ‘হঠকারী’ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে কেউ সম্পৃক্ত না হয়, সে ব্যাপারে কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে।
সূত্রমতে, কঠোর কর্মসূচি না দিলেও একেবারে হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না বিএনপি। ২০২১ সালব্যাপী দল পুনর্গঠন ও রুটিন সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড যথারীতি চালিয়ে যাবে দলটি। করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিষয়টি মাথায় রেখে সীমিত পরিসরে সাংগঠনিক জেলাগুলোর সম্মেলন, মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো পুনর্গঠন এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি চূড়ান্ত করবে দলটি। পাশাপাশি পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা ডেকে দলের জাতীয় কাউন্সিলের প্রস্তুতিও নিয়ে রাখতে চায় বিএনপি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় সারাবাংলাকে বলেন, ‘দল হিসেবে তো আগামী বছরের একটা পরিকল্পনা আমাদের আছেই। সেটা তো এখনই পরিষ্কার করে বলা যাবে না। তবে রুটিন কর্মসূচির পাশাপাশি জাতীয় কাউন্সিলের প্রস্তুতিটাও আমাদের সেরে ফেলতে হবে। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে আশা করি ২০২১ সালে দলের জাতীয় কাউন্সিল করে ফেলতে পারব।
‘সুন্দরভাবে’ সুবর্ণজয়ন্তী পালন ২০২১ সালের মূল লক্ষ্য
বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, মাঠ গরমের কর্মসূচিতে না গেলেও বেশ কয়েকটি মৌলিক বিষয় নিয়ে ২০২১ সালে কাজ করবে বিএনপি। সেগুলোর মধ্যে প্রাধান্য পাবে ‘সুন্দরভাবে’ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করা। আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণার দিনটিকে উৎসবের শুরুর দিন হিসেবে বেছে নিয়েছে বিএনপি।
এরই মধ্যে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে বছরব্যাপী কর্মসূচি পালন করতে জাতীয় কমিটি ও স্টিয়ারিং কমিটির বাইরে আরও ২৫টি কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। এর মধ্যে ১৫টি রয়েছে বিষয়ভিত্তিক কমিটি এবং ১০টি বিভাগীয় কমিটি।
বিষয়ভিত্তিক কমিটিগুলোর মধ্যে রয়েছে— ১. আইনের শাসন ও মানবাধিকার কমিটি: আহ্বায়ক ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এবং সদস্য সচিব ব্যারিস্টার এ এম মাহবুবউদ্দিন খোকন ও অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদ; ২. মুক্তিযোদ্ধাদের সন্মাননা কমিটি: আহ্বায়ক মেজর (অব.) শাহজাহান ওমর বীর উত্তম, সদস্য সচিব অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল জয়নুল আবেদীন; ৩. প্রচার কমিটি: আহ্বায়ক গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সদস্য সচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী; ৪. সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম কমিটি: আহ্বায়ক ড. আব্দুল মঈন খান, সদস্য সচিব ইসমাইল জবিউল্লাহ; ৫. প্রকাশনা কমিটি: আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল নোমান, সদস্য সচিব হাবিবুল ইসলাম হাবিব; ৬. স্মরণিকা কমিটি: আহ্বায়ক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সদস্য সচিব আব্দুস সালাম; ৭. স্বরচিত কবিতা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা কমিটি: আহ্বায়ক সেলিমা রহমান, সদস্য সচিব আবদুল হাই শিকদার; ৮. মিডিয়া কমিটি: আহ্বায়ক ইকবাল হাসান মাহুমদ টুকু, সদস্য সচিব শামা ওবায়েদ; ৯. সাংস্কৃতিক কমিটি: আহ্বায়ক গাজী মাজহারুল আনোয়ার, সদস্য সচিব আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল; ১০. রচনা প্রতিযোগিতা কমিটি: আহ্বায়ক অধ্যাপক মুস্তাহিদুর রহমান, সদস্য সচিব অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম; ১১. র্যালি কমিটি: আহ্বায়ক মো. বরকত উল্লাহ বুলু, সদস্য সচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল; ১২. সাজসজ্জা, মুক্তিযুদ্ধের বইমেলা ও চিত্র প্রদর্শনী কমিটি: আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, সদস্য সচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স; ১৩. ক্রীড়া উপকমিটি: আহ্বায়ক অবসপ্রাপ্ত লে. কর্নেল এম এ লতিফ খান, সদস্য সচিব আমিনুল হক; ১৪. স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির সচিবালয়: আহ্বায়ক বিজন কান্তি সরকার, সদস্য সচিব জেড খান মো. রিয়াজ উদ্দীন নসু; ১৫ চিকিৎসা ও সেবা কমিটি: আহ্বায়ক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, সদস্য সচিব ডা. হারুন-অর-রশিদ।
বিভাগীয় কমিটিগুলো হলো— ঢাকা: আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস, সদস্য সচিব ফজলুল হক মিলন; চট্টগ্রাম: আহ্বায়ক আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সদস্য সচিব মাহবুবে রহমান শামীম; রাজশাহী: আহ্বায়ক মিজানুর রহমান মিনু, সদস্য সচিব রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু; খুলনা: আহ্বায়ক নিতাই রায় চৌধুরী, সদস্য সচিব নজরুল ইসলাম মঞ্জু; বরিশাল: আহ্বায়ক সেলিমা রহমান, সদস্য সচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার; ময়মনসিংহ: আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম খান, সদস্য সচিব মো. শরীফুল আলম; ফরিদপুর: আহ্বায়ক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল রুহুল আলম চৌধুরী, সদস্য সচিব সেলিমুজ্জামান সেলিম; সিলেট: আহ্বায়ক আরিফুল হক চৌধুরী, সদস্য সচিব ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন; কুমিল্লা: আহ্বায়ক মনিরুল হক চৌধুরী, সদস্য সচিব মো. মোস্তাক মিয়া; এবং রংপুর: আহ্বায়ক ব্যারিস্টার মুহাম্মদ জমির উদ্দিন সরকার, সদস্য সচিব আসাদুল হাবিব দুলু।
২০২১ সালে বিএনপির পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশের সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল হিসেবে যেসব কর্মসূচি পালন করা উচিত, তা সবই করবে বিএনপি। তবে ২০২১ সালটা যেহেতু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির বছর, সেহেতু সুন্দরভাবে সুবর্ণজয়ন্তী পালন করতে চাই আমরা। এরই মধ্যে সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটি, স্টিয়ারিং কমিটি, বিষয়ভিত্তিক কমিটি এবং বিভাগীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
আন্দোলন কর্মসূচি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা আন্দোলনের মধ্যেই আছি, সেটা অব্যাহত থাকবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত এটা চলমান থাকবে।’
২০২১ সাল কর্মসূচি বিএনপি মাঠ গরম রাজনৈতিক কর্মসূচি সুবর্ণজয়ন্তী সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন