Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রথম মাসিকের আগে ঋতুস্রাবের বিষয়ে জানত না ৬৪% কিশোরী


১ জানুয়ারি ২০২১ ১০:৪১

ঢাকা: দেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কিশোরীর প্রথমবার মাসিক হওয়ার আগে ঋতুস্রাব সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না। এখনো দেশের ৫৭ শতাংশ কিশোরী ও ৭১ শতাংশ প্রাপ্তবয়ষ্ক নারী মাসিকের সময় ডিসপোজেবল প্যাড ব্যবহার করে না। দেশের ৬১ শতাংশ ছেলে-মেয়ে পানি ও সাবানের সুবিধা রয়েছে— এমন বিদ্যালয়ের উন্নত ও ব্যবহারযোগ্য টয়লেট ব্যবহারের সুযোগ পায় না।

বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশ করা এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। বিবিএস, ইউনিসেফ ও ওয়াটারএইডের যৌথ উদ্যোগে জরিপটি পরিচালিত হয়েছিল।

অনুষ্ঠানে জরিপের মূল ফলাফল তুলে ধরেন বিবিএসের ডেমোগ্রাফি অ্যান্ড হেলথ উইংয়ের পরিচালক মো. মাসুদ আলম। এর আগে ২০১৮ সালে এই জরিপের প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছিল বলেও জানান তিনি।

জরিপের ফলাফল জানিয়ে অনুষ্ঠানে জানানো হয়, কিশোরীদের মাঝে ৩০ শতাংশ বলেছে, তারা শেষ ছয় মাসে তাদের মাসিকের সময় বিদ্যালয়ে যায়নি। এই সময়ে তারা প্রতিবার মাসিকের সময় গড়ে আড়াই দিন করে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিল। ৩৬ শতাংশ কিশোরী বলেছে, তারা ঋতুস্রাব সংক্রান্ত স্বাস্থ্যশিক্ষা বিদ্যালয় থেকে পেয়েছে।

জরিপের ফলাফলে জানানো হয়, দেশের মাত্র ৩৬ শতাংশ কিশোরী তাদের প্রথম মাসিকের আগে ঋতুস্রাব সম্পর্কে জানত। বাকি ৬৪ শতাংশ কিশোরীর আগে থেকে এ সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না। ৪৩ শতাংশ কিশোরী ও মাত্র ২৯ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক নারী জানিয়েছেন, তাদের মাসিকের সময় ডিসপোজেবল প্যাড ব্যবহার করে। অর্থাৎ অর্ধেকেরও বেশি কিশোরী এবং দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি প্রাপ্তবয়স্ক নারী ডিসপোজেবল প্যাড ব্যবহার করছেন না।

এদিকে, জরিপে উঠে এসেছে— দেশের মাত্র ২২ শতাংশ বিদ্যালয়ে স্যানিটারি প্যাড অপসারণের ব্যবস্থা রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে ঋতুস্রাব ব্যবস্থাপনার জন্য আলাদা মানসম্পন্ন টয়লেটও রয়েছে। এছাড়াও, বিদ্যালয়ে পানি ও সাবানের সুবিধা রয়েছে— এমন উন্নত ও ব্যবহারযোগ্য টয়লেট ব্যবহার করতে পারে মাত্র ৩৯ শতাংশ ছেলে-মেয়ে।

বিবিএসের ডেমোগ্রাফি অ্যান্ড হেলথ উইংয়ের পরিচালক মো. মাসুদ আলম জানান, ইউনিসেফ ও ওয়াটারএইডের সহযোগিতায় বিবিএস দেশব্যাপী এ জরিপ পরিচালনা করে। যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে জরিপটি করা হয়েছে। সরাসরি সাক্ষাৎকার, স্যানিটেশন সুবিধাগুলো দেখতে তাৎক্ষণিক যাচাই এবং বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানা, হাত ধোয়া পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

তিনি জানান, ন্যাশনাল হাইজিন সার্ভে ২০১৮ প্রতিবেদনে পাঁচটি পৃথক ক্ষেত্র থেকে সংগৃহীত তথ্য উপস্থাপিত হয়েছে। এই ক্ষেত্রগুলো হলো— গৃহস্থালি, বিদ্যালয়, স্বাস্থ্য সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান, রেস্তোরাঁ এবং ফুটপাতের খাদ্য বিক্রেতা। এই ক্ষেত্রগুলোয় এসডিজির স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সূচক, পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, ভিশন ২০২১ এবং ভিশন ২০৪১ ইত্যাদির অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করা হয়।

অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী বলেন, উন্নয়ন খাতে প্রমাণভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ ও কার্যকর নীতিমালা প্রণয়নে এ জরিপের ফলাফল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি এ জরিপ হতে এসডিজি সূচক ৬.২.১ ‘সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়ার সুবিধাসহ নিরাপদ ব্যবস্থাপনার স্যানিটেশন সেবা ব্যবহারকারী জনসংখ্যার অনুপাত’-এর তথ্য পাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।

ওয়াটারএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন, এ প্রতিবেদনে বাংলাদেশ যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে, তা তুলে ধরা হয়েছে। এ অনুযায়ী, বিশেষত কোভিড-১৯-এর উদ্ভূত পরিস্থিতির আলোকে আমাদের স্বাস্থ্যবিধি (হাইজিন) মেনে চলার প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করতে হবে।

তিনি বলেন, ন্যাশনাল হাইজিন সার্ভে-২০১৮ একটি গুরুত্বপূর্ণ জরিপ, যা আমাদের ঘাটতিগুলোকে চিহ্নিত করে অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জগুলো সামনে নিয়ে আসে এবং দেশব্যাপী স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত প্রচারণা চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। সর্বোপরি, প্রতিবেদনটি কেবল ‘ওয়াশ’ খাতে যারা কাজ করেন শুধু তাদের জন্যই নয়, বরং যারা জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং খাদ্য সুরক্ষা বিষয়ে আগ্রহী তাদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ রিসোর্স।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, প্রতিবেদনটি ওয়াশ, জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা ও খাদ্য সুরক্ষা ক্ষেত্রে কর্তব্যরত ব্যক্তিদের ব্যাপকভাবে সাহায্য করবে। তারা সুস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলন গড়ে তোলার ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে বিস্তৃত পরিসরে উদ্যোগ নেওয়ার প্রতি জোর দেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের (ডিপিএইচই) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পরিকল্পনা) তুষার মোহন সাধু খাঁ। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি এবং উন্নয়ন খাতের বিশেষ অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।

ঋতুস্রাব কিশোরী টপ নিউজ ডিসপোজেবল প্যাড ন্যাশনাল হাইজিন সার্ভে বিবিএস মাসিক


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

কুষ্টিয়া থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:২৮

সম্পর্কিত খবর