বেনাপোল সীমান্তে একবছরে ১২০ কোটি টাকার চোরাচালানির পণ্য জব্দ
১ জানুয়ারি ২০২১ ১৮:০১
বেনাপোল: যশোরের বেনাপোলের বিভিন্ন সীমান্তে অভিযান চালিয়ে একবছরে ১২০ কোটি টাকার মাদক, অস্ত্র, ডলার ও সোনাসহ বিভিন্ন চোরাচালানি পণ্য জব্দ করেছে বিজিবি, পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা। এসময়ের মধ্যে চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ৩৭৮ জন পাচারকারীকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মাদক ও সোনা চোরাচালানে অল্প সময়ে বেশি অর্থ আয়ের আশায় চোরাচালান পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন সীমান্তের সাধারণ মানুষও।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শার্শা ও বেনাপোলের বিভিন্ন সীমান্তে পাচারকারীদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় পাচারকারীরা আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বের হয়ে এসে আবার প্রলোভনে জড়িয়ে পড়ে চোরাচালান ব্যবসায়। শার্শা-বেনাপোল সীমান্তের কায়বা, রুদ্রপুর, গোগা, অগ্রভুলাট, পাঁচভুলাট, শালকোনা, পাকশিয়া, ডিহি, শিকারপুর, রামচন্দ্রপুর এবং বেনাপোলের পুটখালী, দৌলতপুর, গাতিপাড়া, সাদিপুর, রঘুনাথপুর, ঘিবা ও ধান্যখোলা সীমান্তের পাচারকারীরা অনেক বেশি সক্রিয়।
যশোর ৪৯ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সেলিম রেজা ও বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন খান জানান, শার্শা ও বেনাপোল সীমান্ত থেকে বিজিবি, পুলিশ ও র্যাবের অভিযানে উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও মাদকের মধ্যে রয়েছে ২৩টি বিদেশি পিস্তল, ৪১টি ম্যাগজিন, ১০৫টি গুলি, প্রায় ৫৫ হাজার ৪৯৮ বোতল ফেনসিডিল, ৯৫৩ কেজি গাঁজা, ৫৫০ বোতল দেশি-বিদেশি মদ ও ১৮৫০ পিস ইয়াবা।
এছাড়া এ সময়ের মধ্যে প্রায় ৪১ কেজি ৭৭২ কেজি সোনা ও ৭ লাখ ৩৮ হাজার ডলার উদ্ধার করা হয়েছে। এসময়ে চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ৩৭৮ জনকে আটক করে বিজিবি, পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা।
বিজিবি জানায়, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় যশোরের শার্শা ও বেনাপোল সীমান্তের চোরাচালানরা অনেকটা নিরাপদ রুট হিসাবে ব্যবহার করে থাকে। দুই দেশের সীমান্ত ঘেঁষে এমনভাবে মানুষের বসবাস, শনাক্ত করা কঠিন কোনটা বাংলাদেশ আর কোনটা ভারত। এ সুযোগটা কাজে লাগিয়ে পাচারকারীরা সহজে এপার-ওপার যাতায়াত করে থাকে। তবে মাদকপাচার রোধে বিজিবি কঠোর থাকলেও অনেকটা উদাসীন ভারতের সীমান্ত রক্ষী বিএসএফ সদস্যরা। এতে অনায়াসে মাদক দ্রব্যসহ বিভিন্ন চোরাচালান পণ্য অনায়াসে ঢুকে পড়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে।
তবে বিজিবির কঠোর নজরদারিতে এক বছরে যশোরের শার্শা ও বেনাপোল সীমান্ত এলাকা থেকে প্রায় ১২০ কোটি টাকা মূল্যের মাদক, আগ্নেয়াস্ত্র ,ডলার ও স্বর্ণসহ বিভিন্ন ধরনের চোরাচালান পণ্য জব্দ করা হয়েছে। অন্যান্য পণ্যের মধ্যে রয়েছে শাড়ি-থ্রিপিস, বিভিন্ন পোশাক, কম্বল, স্যান্ডেল, চকলেট, সিগারেট, গরু, চাপাতা, আতশবাজি ও ইমিটেশনসামগ্রী। এসময় পাচারের সাথে জড়িত ৩৭৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন খান বলেন, ‘আমরা মাদকবিরোধী অভিযান ও মাদক উদ্ধার কার্যক্রম অভিযান অব্যাহত রেখেছি। মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গডফাদার যেই জড়িত থাক, তাদের সঙ্গে কোনো আপস নয়। মাদক ব্যবসায়ীদের পক্ষে যে সুপারিশ করবে তাকেও ছাড় দেওয়া হবে না।’
যশোরের নাভারন সার্কেল এএসপি জুয়েল ইমরান জানান, ইতিমধ্যে মাদক পাচারকারীদের তালিকা করে আটক অভিযান অব্যাহত রাখা হয়েছে।
যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সেলিম রেজা জানান, চোরাচালানের মূলহোতারা নিজেরা স্বর্ণ, অস্ত্র ও মাদকসহ চোরাই পণ্য বহন করেন না। এ কারণে তাদের হাতেনাতে আটক করা সম্ভব হয় না। তবে কোনো কোনো সময় বহনকারীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী অভিযান চালিয়ে মূলহোতাদের আটক করে জেলে পাঠানো হয়। কিন্তু উপযুক্ত প্রমাণ না থাকায় তারা জামিনে মুক্তি পেয়ে যান।
উল্লেখ্য, যশোর এলাকায় ভারতের সঙ্গে ৭০ কিলোমিটার সীমান্ত পথ রয়েছে। সেখানে সীমান্ত রক্ষায় ও চোরাচালান প্রতিরোধে কাজ করছে ৫ শতাধিক বিজিবি সদস্য। বিজিবি সীমান্তে নাইটভিশন ক্যামেরা, ভাসমান বিওপি, নৌরুটে স্পিডবোডসহ বেশ কিছু আধুনিক প্রযুক্তি সংযুক্ত করেছে।