আমন মৌসুমেও ‘ব্যর্থ হচ্ছে’ ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা
২ জানুয়ারি ২০২১ ২১:৩৪
ঢাকা: আমন মৌসুমের অর্ধেক সময় পার হলেও ধান, চাল সংগ্রহেও যেমন সাড়া মেলেনি, তেমনি বাজারেও দাম নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ধান-চাল সংগ্রহে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় এমন পরিস্থিতিতে খাদ্যের মজুত বাড়াতে ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির কথা চিন্তা করছে সরকার। যে কার্যক্রম এরইমধ্যে শুরু হয়েছে। এবার আমন, বোরো মিলিয়ে দুই মৌসুমেই আশানুরূপ ধান চাল সংগ্রহ না হওয়ায় আমদানিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
খাদ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশে বছরে সাড়ে তিন কোটি টনের বেশি চাল উৎপাদিত হয়। এরমধ্যে প্রায় দেড় কোটি টন চাল আসে আমন মৌসুম থেকে। গত বোরো মৌসুমে সরকার নির্ধারিত পরিমাণে ধান চাল সংগ্রহ করতে না পারায় আমন মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে মোট সাড়ে আট লাখ টন খাদ্যশস্য সংগ্রহ করতে চেয়েছিল। এরমধ্যে ২ লাখ টন ধান এবং সাড়ে ৬ লাখ চাল কেনার লক্ষ্য ঠিক করেছিল। গত ৭ নভেম্বর থেকে সংগ্রহ অভিযানে শুরু করে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত খাদ্য অধিদফতর চাল কিনতে পেরেছে ১৮ হাজার ৭০১ মেট্রিক টন আর ধান ৫২১ মেট্রিক টন ধান এবং আতপ চাল ৬৫৯ মেট্রিক টন। সব মিলিয়ে ১৯ হাজার ৭০৬ মেট্রিক টন। গত বোরো মৌসুমেও সরকার অর্ধেক লক্ষ্যেও পূরণ করতে পারেনি।
চালকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কে এম লায়েক আলী বলেন, ‘এবার বোরো আমন দুই মৌসুম জুড়েই বাজারে চালের দাম বাড়তি ছিল। কেজি প্রতি বাড়তি তিন চার টাকা লোকসান দিয়ে কেউ চাল কিনবে না। বাজারে চালের দাম বাড়তি থাকায় এবার মিল মালিকরা সরকারের ধান চাল সংগ্রহে আগ্রহ দেখায়নি।’
এদিকে সরকারি গুদামে চালের মজুত তলানিতে নেমে গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এবার একদিকে করোনাভাইরাস অন্যদিকে দফায় দফায় ঝড় বন্যায় মজুতের ওপরে চাপ পড়েছে। আবার বোরো সংগ্রহও হয়নি। সব মিলিয়ে মজুত কমেছে। বর্তমানে চাল ও গম মিলিয়ে ৭ দশমিক ৩৭ লাখ মেট্রিক টন মজুত রয়েছে। যা গত বছরে এর দ্বিগুণ মজুত ছিল।
এমন পরিস্থিতিতে সরকার মজুত বাড়াতে বিভিন্ন দেশ থেকে ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। এরমধ্যে কেজি প্রতি ৩৩ থেকে ৩৫ টাকা দরে দেড় লাখ টনের বেশি ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র জানিয়েছে। খাদ্যসচিব ড. নাজমানারা খানুম জানিয়েছেন, দেশে চাহিদার বিপরীতে চালের ঘাটতি নেই। করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় দফা সংক্রমণের কথা চিন্তা করে চালের মজুত বাড়াতে আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কারণ এবার সরকারকে বিভিন্ন মানবিক সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও হতে পারে। চাল আমদানি করা হলেও কৃষকরা বিক্রি করতে চাইলে সেখান থেকেও ক্রয় করা হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে বেসরকারিভাবেও চাল আমদানিতে শুল্ক কমিয়েছে সরকার। বর্তমানে চাল আমদানিকারকদের ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। এখন থেকে দিতে হবে ২৫ শতাংশ। জানা গেছে, এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এ বিষয়ে পরিপত্র দেবে এবং সরকারের অনুমতি ছাড়া কোনো ব্যবসায়ী কম শুল্কে চাল আমদানি করতে পারবে না। তবে বেসরকারি খাত কী পরিমাণ চাল আমদানি করতে পারবে, সে সীমা যদিও নির্ধারণ করা হয়নি। তবে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছিলেন, বেসরকারিভাবে ৬ লাখ টনের বেশি আমদানিতে অনুমতি দেওয়া হবে না।
উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে আমন মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সাড়ে আট লাখ ধান চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সরকার। কেজি প্রতি ২৬ টাকা দরে ২ লাখ মেট্রিক টন ধান আর ৩৭ টাকা মূল্যে ৬ লাখ মেট্রিকটন চাল এবং ৩৬ টাকা দরে ৫০ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল কেনার কথা ছিল। গেল ৭ নভেম্বর থেকে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সংগ্রহের সময় সীমা নির্ধারণ করা হলেও এখন পর্যন্ত মাত্র সাড়ে ১৯ হাজার টন খাদ্যশস্য সংগ্রহ করতে পেরেছে।
এর আগে, বোরো মৌসুমে সাড়ে ১৯ লাখ মেট্রিক টন ধান চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো সরকারের। কিন্তু সময় বাড়িয়ে টার্গেটের অর্ধেকও সংগ্রহ করতে পারেনি। মাত্র ৯ লাখ ৪৩ হাজার ৯০২ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য কিনতে পেরেছিলো খাদ্য অধিদফতর।