গোপীবাগে ৬ খুন: ৭ বছরে তদন্তের সময় পিছিয়েছে ১০৯ বার
৩ জানুয়ারি ২০২১ ০৮:৪৭
ঢাকা: ২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর রাজধানীর ওয়ারীর গোপীবাগের বাসায় লুৎফর রহমান ফারুকসহ ৬ জন খুন হন। ওই হত্যাকাণ্ডে দায়ের করা মামলার তদন্ত শেষ হয়নি ৭ বছরেও। কবে নাগাদ শেষ হবে তাও বলতে পারছেন না তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। মামলটিতে এ পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ১০৯ বার সময় নিয়েছে বিভিন্ন তদন্ত সংস্থা। মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট।
ওয়ারীর গোপীবাগে পীর লুৎফর রহমান ফারুকসহ ৬ জন নির্মমভাবে খুনের অভিযোগে দায়ের করা মামলার তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। লুৎফর রহমানের ছেলে আব্দুল্লাহ আল ফারুক আক্ষেপ করে বলেন, ‘সাত বছর চলে গেল। বাবা, ভাইসহ প্রিয়জনদের হত্যার বিচার পেলাম না।’
২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর গোপীবাগের বাসায় লুৎফর রহমান ফারুকসহ ৬ জন খুন হন।
রোববার (২০ ডিসেম্বর) তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু এদিন কাউন্টার টেররিজম ইউনিট প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কনক বড়ুয়া আগামী ১৯ জানুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন।
মামলা সম্পর্কে বাদী ও নিহত লুৎফর রহমান ফারুকের ছেলে আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, ‘৭ বছর হয়ে গেল, এখনও মামলার তদন্তই শেষ হলো না। বিচার তো দূরের কথা। মামলার কোনো অগ্রগতি নেই। নতুন তদন্ত কর্মকর্তা আসে আবার বদলি হয়। এভাবে চলছে মামলার কার্যক্রম। কবে তদন্ত শেষ হবে আবার কবে বিচার পাবো?’
ফারুক বলেন, ‘বাবা, বড় ভাইকে হারিয়েছি। ছয় স্বজন হারানোর শোক সামাল দিতে অনেক কষ্ট হয়েছে। জীবন কারও জন্য থেমে না থাকলেও প্রিয় মানুষদের অভাব অনুভব হয় ক্ষণে ক্ষণে।’
আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, ‘সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি, উপস্থাপক মাওলানা ফারুকী হত্যাসহ অনেক আলোচিত মামলার তদন্তই শেষ হচ্ছে না। এমন অমানবিক ঘটনার বিচার হলে খুশি হবো।’
মা সালমা বেগমের প্রসঙ্গে আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, ‘স্বামী-সন্তান হারানোর কষ্ট কেউ ভুলতে পারে না। মায়ের ক্ষেত্রেও সেটি হয়েছে। মা এখনও কাঁদেন তাদের জন্য। আশায় আছেন, হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হবে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিটিটিসির পুলিশ পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সপ্তাহখানেক হলো মামলার তদন্তভার আমাকে দেওয়া হয়েছে। মামলার কাগজপত্র দেখলাম। এ বিষয়ে আমি এখন কিছু বলতে পারছি না। তবে তদন্ত শেষ করার জন্য যা যা করার দরকার, করব।’
আসামি গোলাম সারওয়ার রাহাত ও আজমির অমিতের আইনজীবী মামুন মিয়া বলেন, ‘আসামিরা ভিকটিমাইজড। তাদের নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। মামলার তদন্ত শেষ হচ্ছে না। আমরাও চাই, মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ হোক। সুষ্ঠু তদন্ত শেষে যারা মিথ্যাভাবে ভিকটিমাইজড তারা অব্যাহতি পাবেন। আর যদি কেউ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকেন তাহলে তাদেরও বিচার হবে।’
পীর লুৎফর রহমান ফারুকসহ ছয়জন নির্মমভাবে খুনের ঘটনায় তার ছেলে আব্দুল্লাহ আল ফারুক ২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর ওয়ারী থানায় মামলা করেন।
জানা গেছে, মামলায় এখন পর্যন্ত ৯ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন হাদিসুর রহমান সাগর, জুলফিকার বিন সাদ ওরফে আবু ওয়াক্কাস, মামুনুর রশীদ রিপন, সৈয়দ জিয়াউল ইসলাম ওরফে জিতু ওরফে নিরব ওরফে নিয়ন ওরফে হিমু, সৈয়দ আল আমিন, তরিকুল ইসলাম, আবু রায়হান ওরফে মাহমুদ ওরফে আ. হাদী, মো. আজমির অমিত ও মো. গোলাম সরোয়ার। আজমির অমিত ও গোলাম সরোয়ার জামিনে আছেন। বাকি ৭ আসামি কারাগারে আছেন।