পুলিশের আলাদা মেডিকেল ইউনিট গঠন একান্ত দরকার: প্রধানমন্ত্রী
৩ জানুয়ারি ২০২১ ১৭:০২
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের পুলিশের জন্য আলাদা একটা মেডিকেল ইউনিট গঠন করা একান্ত দরকার। তাদের নিজস্ব একটা ইউনিট থাকুক। তারা অন্তত চিকিৎসা সেবাটা দেখবে।
রোববার (৩ জানুয়ারি) শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি রাজশাহীর বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে যুক্ত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে করোনাভাইরাসের কারণে এক ধরনের বন্দি জীবন যাপনই করতে হচ্ছে। শুধু ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছিলাম বলে ভিডিও করফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে প্রত্যেকটা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারছি। প্রযুক্তির মাধ্যমে এটা করতে পারছি।’
একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের অবদানের কথাও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। পুলিশবাহিনী তাদের সেই গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা স্মরণ রেখে দেশ ও জাতির প্রতি কর্তব্য পালন করে যাবে বলে আশাবাদ করেন তিনি।
১৫ আগস্ট জাতির পিতার নির্মম হত্যাকাণ্ডের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২১ বছর আমরা সরকার গঠন করতে পারিনি। আমাদের পরিবারের সকল সদস্যকেই নির্মমভাবে হত্যা করে। আমি আর আমার ছোট বোন বাইরে ছিলাম বেঁচে গিয়েছি। ২১বছর বাংলাদেশের মানুষের জীবন থেকে হারিয়ে যায়। আর আমাদের থাকতে হয় বিদেশে রিফিউজি হিসেবে। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করলে আমি জনগণের শক্তি নিয়েই দেশে ফিরে আসি। কারণ তখনকার সামরিক শাসকরা প্রচণ্ড বাধা দিয়েছিল।’
১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে দেশকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ ও কর্মূচি গ্রহণের পাশাপাশি পুলিশবাহিনীর উন্নয়নে তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। এছাড়া টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকারের ধারাবাহিকতায় পুলিশ বাহিনীর উন্নয়নে তার সরকারের গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচির কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পুলিশবাহিনী অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। দেশে নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়। সেগুলো দমন, পুলিশকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। নতুন নতুন ইউনিট গড়ে তুলেছি। দেশে যখন জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের উৎপাত ঘটে তখন পুলিশ দক্ষতার সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করে।’
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও পুলিশ প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের পুলিশ বাহিনী দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে এবং বিশেষ করে মহিলা পুলিশের ভূয়সী প্রশংসা শুনতে পাই বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস নির্মূলে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পুলিশ এন্টিটেরোরিজম ইউনিট, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট গঠনের কথাও তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অপরাধীকে শনাক্ত করা এবং মামলা তদন্তে প্রকৃত তথ্য উদঘাটনের লক্ষ্যে সাইবার পুলিশ সেন্টার, ডিএনএ ল্যাব, অটোমেটেড ফিঙ্গার প্রিন্ট আইডেন্টেফিকেশন সিস্টেম এবং আধুনিক রাসায়নিক পরীক্ষাগার স্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশে সংযোজিত হতে যাচ্ছে সর্বাধুনিক অপারেশনাল গিয়ার ট্যাকটিক্যাল বেল্ড। যাতে অপারেশনের সময় যারা ডিউটিতে থাকবে তারা যেন অধিক দক্ষতার সঙ্গে অপরাধ দমন করতে পারে।’
শেখ হাসিনা বলেন, এই করোনাভাইরাস আমাদেরকে স্থবির করে দিয়েছে। শুধু আমাদের দেশ নয়, পুরো বিশ্বেই একই অবস্থা। কিন্তু আমাদের পুলিশ সাহসী ভূমিকা পালন করেছে। যারা অসুস্থ তাদের চিকিৎসার জন্য মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া বা মৃতদের দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। এছাড়া অনেক সময় আত্মীয়-স্বজন লাশ ফেলে চলে গেছে; পুলিশ বাহিনী সেখানে সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছে।’
করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের চিকিৎসার জন্য রাজারবাগ হাসপাতাল চিকিৎসার ব্যবস্থা করা ছাড়াও আরও একটি বেসরকারি হাসপাতাল ভাড়া করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছেও বলে জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পুলিশের জন্য আলাদা একটি মেডিকেল ইউনিট গঠন করা একান্তভাবে দরকার। কারণ নিজস্ব একটা ইউনিট থাকুক। তারা অত্যন্ত চিকিৎসা সেবাটা দেখবে। তাছাড়া ঢাকার বাইরের পুলিশ হাসপাতালগুলোকে আরও উন্নত ও আধুনিক করার ব্যাপারেও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা চেয়েছিলেন ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত মানুষ পুলিশের সেবা পাক। আর সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আজ বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানুষের দোঁরগোড়ায় পুলিশ পৌঁছে যাচ্ছে। এমনকি করোনাভাইরাসের সময় যারা নিজেরা খাবার নিতে পারত না, সেখানে পুলিশের বিশেষ নম্বরে ফোন করলে রাতের অন্ধকারে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে খাবার পৌঁছে দিয়েছে। কারণ অনেক মধ্যবিত্ত বা অন্যান্য পরিবার ছিল যারা মানুষের কাছে হাত পাততে পারত না। কিন্তু তাদের খাদ্য দিয়ে পুলিশ সহায়তা করেছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়। সেগুলোও দমন করতে হবে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে ফেসবুকসহ বিভিন্ন ধরনের অ্যাপস আছে, সেগুলোর মাধ্যমে অনেক ধরনের অপরাধ বিশেষ করে কিশোর বা উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা এইসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত হচ্ছে। সেখান থেকে তাদের বের করে নিয়ে এসে তাদের সুস্থ জীবনের ব্যবস্থা করতে হবে। সাধারণভাবে যেকোনো গুজব রটানো বা এই ধরনের কাজ যাতে করতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলব। শান্তিপূর্ণভাবে মানুষ বসবাস করবে। তাদের জীবনমান উন্নত হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের সরকারের এটিই দায়িত্ব। সে দায়িত্বে পুলিশ বাহিনী সবসময় আমাদের পাশে আছে এবং তারা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।’
এ সময় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদসহ অন্যান্যরা।