Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বুড়িগঙ্গা দূষণে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ


৩ জানুয়ারি ২০২১ ২১:৪১

ঢাকা: বুড়িগঙ্গা নদী দূষণের জন্য দায়ী কেরানীগঞ্জের ৩০টি ওয়াশিং প্ল্যান্টসহ দূষণের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের জন্য পরিবেশ অধিদফতরকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। রোববার (৩ ডিসেম্বর) বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও মোহাম্মদ উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।

বুড়িগঙ্গা দূষণ রোধে জনস্বার্থে করা হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপি) পক্ষে এক রিট মামলার রুল শুনানির ধারাবাহিকতায় আদালত আজ এ আদেশ দেন। আদেশের বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন রিটের পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

বিজ্ঞাপন

আদালতে পরিবেশ অধিদফতরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আমাতুল করিম। রিট আবেদনকারী পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হোসেন।

আদালত আদেশে ঢাকা বিভাগীয় পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালককে কেরানীগঞ্জের ৩০টি ওয়াশিং প্ল্যান্টের বিরুদ্ধে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে মামলা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। ওয়াশিং প্ল্যান্টগুলো হচ্ছে- আহামদ হোসেন ওয়াশিং, আমেনা ওয়াশিং, সানমুন ওয়াশিং, ইডেন ওয়াশিং, বিসমিল্লাহ ওয়াশিং, লোটাস ওয়াশিং, গ্লোবাল ওয়াশিং, রুবেল ওয়াশিং, আনুশকা ওয়াশ, সততা ওয়াশিং, চঞ্চল ওয়াশিং, আব্দুর রব ওয়াশিং, ঢাকা ওয়াশিং, আজান ওয়াশিং, নিউ সাহারা ওয়াশিং, দোহার ওয়াশিং, রিলেটিভ ওয়াশিং, নিউ নাশা ওয়াশিং, ইউনিক ওয়াশিং, মৌ ওয়াশিং, সেতু ওয়াশিং, কোয়ালিটি ওয়াশিং, জুয়েনা ওয়াশিং, কামাল ওয়াশিং, ওয়াটার কালার ওয়াশিং, পারজোয়ার ওয়াশিং, জিএম ওয়াশিং, কুমিল্লা ওয়াশিং, আছিয়া ওয়াশিং ও লিলি ওয়াশিং।

বিজ্ঞাপন

সেই সঙ্গে কেরানীগঞ্জে বুড়িগঙ্গার পানিতে বা তীরে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যেন ময়লা-আবর্জনা ফেলতে না পারে, সে বিষয়ে তদারকির ব্যবস্থা করতে ঢাকার জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি), কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

মনজিল মোরসেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘বুড়িগঙ্গায় দূষণ ঠেকাতে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরিবেশ অধিদফতর অবৈধ বা বুড়িগঙ্গা দূষণকারী কারখানা বন্ধ করে দেয়। দুই-দুইবার কারখানাগুলো বন্ধ করা হলেও কারখানাগুলো আবার চালু করা হয়েছে। ফলে আগের মতোই দূষণের শিকার হচ্ছে বুড়িগঙ্গার পানি। আদালত একই সঙ্গে এ মামলায় পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক, ঢাকা বিভাগীয় পরিচালক, ঢাকা জেলার ডিসি, এসপি, কেরানীগঞ্জের ইউএনও এবং ওসিকে প্রতি মাসের প্রথম রোববার আদালতে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন। বুড়িগঙ্গা নদী দূষণ পুরোপুরি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত এই প্রতিবেদন দাখিল করে যেতে হবে।’

মনজিল মোরসেদ আরও বলেন, ‘আজ পরিবেশ অধিদফতরের দাখিল করা প্রতিবেদন থেকে দেখা যায় যে, ৩০টি ওয়াশিং প্ল্যান্ট রয়েছে সেখানে। সেগুলো মারাত্মক পানি দূষণ করছে। ফলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের নির্দেশনা দেওয়া প্রয়োজন, না হলে দূষণ বন্ধ হবে না। এমন আবেদন জানালে আদালত এই ৩০টি ওয়াশিং প্ল্যান্টসহ যেসব ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, কারখানা বুড়িগঙ্গা দূষণের জন্য দায়ী তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন।’

এর আগে, ২০১০ সালে বুড়িগঙ্গা নদীর পানি দূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে এইচআরপিবির পক্ষে একটি রিট আবেদন করা হয়। রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১১ সালের ১ জুন তিন দফা নির্দেশনাসহ রায় দেয় হাইকোর্ট।

এর মধ্যে বুড়িগঙ্গায় বর্জ্য ফেলা বন্ধে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে এবং বুড়িগঙ্গা নদীতে সংযুক্ত সব পয়ঃপ্রণালীর লাইন (সুয়ারেজ) ও শিল্পকারখানার বর্জ্য নিঃসরণের লাইন ছয় মাসের মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশনা ছিল। এসব নির্দেশনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়ায় ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল সম্পূরক আবেদন করে এইচআরপিবি।

ওই আবেদনের ওপর শুনানির ধারাবাহিকতায় একপর্যায়ে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এম খানকে তলব করে হাইকোর্ট। পরে গত বছর ৪ মার্চ তাকসিম এম খান আদালতে হাজির হয়ে রায় বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন। পরবর্তীতে ১৮ অগাস্ট ও ৭ সেপ্টেম্বর ওয়াসার পক্ষ থেকে আরও দুটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হলেও রায় ও আদেশ বাস্তবায়নের কোনো অগ্রগতি না থাকায় তা গ্রহণ করেনি আদালত।

গত বছর ১৪ সেপ্টেম্বর ওয়াসার এমডি পক্ষে প্রতিবেদন দাখিল করলে আদালত সেটিও গ্রহণ করেনি। একই সঙ্গে পরিবেশ অধিদফতরের ঢাকা বিভাগের পরিচালক, ঢাকার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসিকে দুই সপ্তাহের মধ্যে বুড়িগঙ্গার দক্ষিণ পাশে নদী ও নদী তীরে ময়লা-আবর্জনা, বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। এবং ১৫ দিনের মধ্যে আদেশ প্রতিপালনের প্রতিবেদনও দিতে বলা হয়।

সেই আদেশের ধারাবাহিকতায় আজ আবার আদেশ দিলো হাইকোর্ট।

টপ নিউজ পরিবেশ অধিদফতর বুড়িগঙ্গা নদী মামলা দায়ের হাইকোর্ট

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর