প্রবাসীদের হাত ধরে এসেছে রেকর্ড রেমিট্যান্স
৪ জানুয়ারি ২০২১ ১১:৩৫
ঢাকা: বিদায়ী বছরে রেকর্ড পরিমাণ ২ হাজার ১৭৪ কোটি ১৮ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ৮৪ হাজার ৮০৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা। দেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে এতো রেমিট্যান্স আর আসেনি। ২০১৯ সালে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স এসেছিলো ১ হাজার ৮৩৩ কোটি মার্কিন ডলার। করোনা মহামারির বছরে রেমিট্যান্স বেড়েছে ২০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ১ হাজার ৮৩৩ কোটি মাকির্ন ডলার রেমিট্যান্সই ছিল, একবছরে প্রবাসীদের পাঠানো সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, করোনার ধাক্কায় বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থা টালমাটাল। ইতোমধ্যেই করোনার দ্বিতীয় টেউও শুরু হয়ে গেছে। এ অবস্থায় প্রবাসীরা তাদের হাতে থাকা সঞ্চয় ধরে রাখা নিরাপদ মনে করছেন না। ফলে অনেকেই সব সঞ্চয় দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এতে গত মে মাস থেকে রেমিট্যান্স বাড়ছে। আশার কথা হলো, তা এখনও অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, করোনাকালীন সময়ে রেমিট্যান্স বেড়ে যাওয়ায় দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।
বিদায়ী বছরে মাস ভিত্তিক রেমিট্যান্স:
বিদায়ী ২০২০ বছরে (জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর) প্রবাসীরা ২ হাজার ১৭৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এরমধ্যে বছরের প্রথম ছয় মাস (জানুয়ারি থেকে জুন) রেমিট্যান্স এসেছে ৮৯৯ কোটি ৩ লাখ ডলার। জুলাই থেকে ডিসেম্বর- এই ছয় মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ২৭৪ কোটি ৯৭ লাখ ডলার।
এদিকে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ ১৬৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠায়। কিন্তু প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের উর্ধ্বগতি ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে কমতে শুরু করে। গত ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স আসে ১৪৫ কোটি ২০ কোটি ডলার, মার্চে ১২৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার এবং এপ্রিলে আসে ১০৪ কোটি ১০ লাখ ডলার। এরপর মে মাস থেকে রেমিট্যান্স বাড়তে শুরু করে। গত মে মাসে রেমিট্যান্স আসে ১৭৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার এবং জুন মাসে তা আরও বেড়ে ১৮৩ কোটি ১০ লাখ ডলারে উন্নীত হয়।
অন্যদিকে চলতি বছরের জুলাই মাসে প্রথমবারের মতো রেমিট্যান্স ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। গত জুলাই মাসে প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ ২৬০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠায়, যা এখন পর্যন্ত এক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। এরপর আগস্টে রেমিট্যান্স কিছুটা কমে হয়, ১৯৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার। সেপ্টেম্বরে আবার বেড়ে ২১৫ কোটি ১০ লাখ ডলারে উন্নীত হয়। অক্টোবরে ২১১ কোটি ২০ লাখ ডলার, নভেম্বরে ২০৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার এবং সদ্য বিদায়ী ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স ২০৫ কোটি ৬ লাখ ডলার।
অর্থবছর ভিত্তিক রেমিট্যান্স: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ ১ হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের রেমিট্যান্স আসে ১ হাজার ৬৩১ কোটি মার্কিন ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আসে ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার।
অন্যদিকে পঞ্জিকা বছর হিসাবে, ২০১৯ সালে ১ হাজার ৮৩৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসে। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। এর আগে ২০১৮ সালে ১ হাজার ৫৫৩ কোটি ৭৮ লাখ ডলার, ২০১৭ সালে ১ হাজার ৩৫৩ কোটি ডলার, ২০১৬ সালে ১ হাজার ৩৬১ কোটি ডলার এবং ২০১৫ সালে ১ হাজার ৫৩১ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স আসে।
উল্লেখ্য, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১ কোটির বেশি প্রবাসী রয়েছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স জিডিপিতে অবদান রেখেছে ১২ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর শীর্ষ ১০টি দেশ হলো, সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, ওমান, যুক্তরাজ্য, কুয়েত, কাতার, সিঙ্গাপুর ও ইতালি।