‘বিদ্রোহী’ সামলাতে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ চান আ.লীগ সমর্থিতরা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে ‘বিদ্রোহী’দের নিয়ে নগর আওয়ামী লীগের নেতাদের ‘রহস্যজনক’ ভূমিকায় হতাশ দলীয় প্রার্থীরা। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের সমর্থন পাওয়া প্রার্থীরা একজোট হয়ে বৈঠক করে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

তারা ঐক্যবদ্ধভাবে ঢাকায় গিয়ে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সাক্ষাতের পাশাপাশি দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে এর আগে তারা নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে বিদ্রোহীদের বিষয়ে সুষ্পষ্ট বক্তব্য জানতে চাইবেন।

রোববার (৩ জানুয়ারি) রাতে নগরীর অলঙ্কার মোড়ে উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী নুরুল আবছারের বাসায় এই বৈঠক হয়েছে। এতে কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া ৩৪ জন উপস্থিত ছিলেন। তবে মনোনয়ন পাওয়াদের মধ্যে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীদের মধ্যে কেউ বৈঠকে ছিলেন না।

এর আগে মনোনয়নপ্রাপ্তরা ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবং চসিক নির্বাচনে মেয়র পদে দলের মনোনয়ন পাওয়া এম রেজাউল করিম চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ অবস্থায় সোমবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কাযনির্বাহী কমিটির সভা।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববারের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে— কার্যনির্বাহী কমিটির সভাস্থলে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া কাউন্সিলর প্রার্থীরা সবাই অবস্থান নেবেন। প্রার্থীদের মধ্যে যারা আওয়ামী লীগের মহানগর কমিটির সদস্য, তারা সভায় বিদ্রোহীদের সক্রিয় থাকার প্রসঙ্গ তুলবেন। এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের কাছ থেকে বিদ্রোহীদের বিষয়ে সুষ্পষ্ট বক্তব্য জানতে চাইবেন।

ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছ থেকে সুস্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া না গেলে মনোনয়নপ্রাপ্তরা এ সপ্তাহের মধ্যেই ঢাকায় গিয়ে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।

গত ১৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে দলের এক সভায় যোগ দিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ চসিক নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বহিষ্কারের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। হানিফের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মনোনয়নপ্রাপ্তরা।

একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে নির্বাচনের সামগ্রিক অবস্থা তুলে ধরে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া কাউন্সিলর প্রার্থীরা।

বৈঠকের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে নগরীর ৩৪ নম্বর ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ড থেকে মনোনয়ন পাওয়া মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কেন্দ্র থেকে যাদের কাউন্সিলর প্রার্থী করেছে, তাদের বিরুদ্ধে মাঠে যারা প্রার্থী হিসেবে আছেন, দুঃখজনকভাবে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা তাদের সঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকছেন। তাদের পাশে নিয়ে ঘুরছেন। এতে তারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করেও একধরনের বৈধতা পাচ্ছেন। এ অবস্থায় আমরা যারা মনোনয়ন পেয়েছি, আমরা মহানগর আওয়ামী লীগের কাছ থেকে সুষ্পষ্ট বক্তব্য চাই। আর বক্তব্য না পেলে আমরা কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করছি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চতুর্থ দফায় মনোনয়ন পাওয়া একজন কাউন্সিলর প্রার্থী সারাবাংলাকে বলেন, ‘মাঠে মনোনয়নপ্রাপ্তরাও থাকবেন, আবার বিদ্রোহীরাও থাকবেন, এতে তো ভোটাররা বিভ্রান্ত হবেন। নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘাত তৈরি হবে। আমাদের মেয়র প্রার্থীর ভোটের ওপর প্রভাব পড়বে। আমরা এভাবে বিশৃঙ্খল অবস্থায় নির্বাচন চাই না। কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে এর একটা সুরাহা করা হোক।’

চসিক নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে দলীয় মনোনয়নের বাইরে প্রায় অর্ধশত প্রার্থী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, যাদের বিদ্রোহী বলা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে ১২ জন বর্তমান কাউন্সিলরও নির্বাচন করছেন।  বিদ্রোহীদের অধিকাংশই আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

পুনঃতফসিল অনুযায়ী আগামী ২৭ জানুয়ারি চসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী কাউন্সিলর প্রার্থী কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন চসিক নির্বাচন টপ নিউজ বিদ্রোহী প্রার্থী