Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘ছাত্রলীগের ৭৩, আমিও পঁচাত্তরে পা দিয়েছি, সামনে তোমাদের নেতৃত্ব’


৪ জানুয়ারি ২০২১ ১৯:০০

ফাইল ছবি

ঢাকা: ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিজেকে আদর্শবান একজন নেতা হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন নিজেকে গড়ে তুলবে, কারণ আমাদের আর কত? পচাত্তর বছর বয়স, আর কতদিন! ছাত্রলীগের ৭৩, আমার ৭৫। আমিও পঁচাত্তরে পা দিয়েছি। কিন্তু তোমাদেরকে তো সামনে নেতৃত্ব দিতে হবে। সেইভাবে তোমরা নিজেকে গড়ে তুলবে।

তিনি বলেন, ‘যে আদর্শ নিয়ে গড়ে তুলতে পারবে নিজেকে সেই কিন্তু সফল হবে। আর যদি অর্থ সম্পদের দিকে নজর চলে যায় কখনো সফল হতে পারবে না, ভোগবিলাস করতে পারবে।’

বিজ্ঞাপন

সোমবার (৪ জানুয়ারি) বিকেলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনিস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ সব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি কেআইবি মিলনায়তনে যুক্ত ছিলেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিভিন্ন ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সময় আক্রান্ত রোগী এবং যারা মৃত্যুবরণ করেছে তাদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের সাহায্য করা। ঘরে ঘরে খাদ্য পৌঁছে দেওয়া, যখন ঝড় (আম্পান) আসল সেই ঝড়ের সময় মানুষের পাশে দাঁড়ানো, এই যে মানুষের সেবার জন্য যে কাজগুলো করে যাচ্ছো সেটাই হচ্ছে বড় কাজ। কাজেই সেইভাবে নিজেকে গড়ে তুলবে, আদর্শবান একজন নেতা হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। যেন আগামী দিনে দেশটাকে তোমরা এগিয়ে নিতে যেতে পার।’

‘কারণ আমাদের আর কত? পঁচাত্তর বছর বয়স, আর কতদিন! ছাত্রলীগের ৭৩, আমার ৭৫। আমিও পঁচাত্তরে পা দিয়েছি। কাজেই আমরা আর কতদিন আর চলবো! কিন্তু তোমাদেরকে তো সামনে নেতৃত্ব দিতে হবে। সেইভাবে তোমরা নিজেকে গড়ে তুলবে’ বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘মনে রাখবে, যে আদর্শ নিয়ে গড়ে তুলতে পারবে নিজেকে সেই কিন্তু সফল হবে। আর যদি অর্থ সম্পদের দিকে নজর চলে যায় কখনো সফল হতে পারবে না, ভোগবিলাস করতে পারবে। এটা হল বাস্তবতা। কাজেই জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে নিজেদেরকে গড়ে তোলো দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে।’

‘ছাত্রলীগ বাংলাদেশের প্রতিটি অর্জনে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে, এই ঐতিহ্যের কথা মনে রাখতে হবে জানিয়ে সাংগঠনিক অভিভাবক শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই সংগঠন উপমহাদেশের একটি সবথেকে প্রাচীন সংগঠন। এই সংগঠনটাকে শক্তিশালী করে তোমরা গড়ে তুলবে। সেটিই আমরা চাই। সেইভাবে তোমরা নিজেদের গড়ে তুলবে।’

‘অনেক ইতিহাস অনেক স্মৃতি মনে পড়ে। আমি ছাত্রলীগের কোনো বড় নেতা ছিলাম না। ছোট্ট খাট্ট নেতা, মাও (মূল নেতা তথা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক) না। আমি একজন কর্মী ছিলাম। সর্বক্ষণিক কর্মী। স্কুল জীবনে বিভিন্ন স্কুলে যেয়ে যেয়ে সংগঠন করে এসেছি, কলেজ জীবনে কলেজে যেয়ে যেয়ে সংগঠন করেছি।’

‘সেই ৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন থেকেই শুরু করেছি মিছিলে যাওয়া। তখন থেকেই মিছিলে গেছি। তারপরে কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রাম মিছিলে সবসময় ছিলাম। কখনো আমরা কিছু হওয়ার কথা চিন্তা করিনি। আমার ভাই কামাল সেও সবসময় এর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিল। সবসময় একজন কর্মী হিসেবেই আমরা কাজ করেছি। এতো বড় দায়িত্ব নিতে হবে এটা আমাদের স্বপ্নেও ছিল না। দুর্ভাগ্য যে ১৯৭৫ সালে সব হারালাম। যা হোক, এখন বাংলাদেশের মানুষের সেবা করতে পারছি। দেশের মানুষের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’

‘আমি ছাত্রলীগকে বলবো, নিজের এই ঐতিহ্য, এটা মাথায় রেখে জাতির পিতার আদর্শ বুকে ধারণ করে তোমরা নিজেদেরকে গড়ে তুলবে দেশেপ্রেমে। বাংলাদেশ ২০২০ পার হয়ে ২০২১’এ এসেছি। এটা হচ্ছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছর। কাজেই মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করব। যাদের গৃহ নাই, তারেদকে ঘর করে দিচ্ছি। তোমাদের কাছে অনুরোধ থাকবে, তোমরা নিজ নিজ এলাকায় খোঁজ করো, কোন মানুষটা গৃহহীন আছে। সেই মানুষটা পেলে অবশ্যই আমাকে খবর দেবে এবং স্থানীয়ভাবে খবর দেবে। তাকে আমরা বিনা পয়সায় ঘর করে দেব। প্রত্যেকটা মানুষকে ঘর করে দেব। প্রত্যেকে ঘরে আমরা বিদ্যুৎ দিয়ে আলো প্রজ্বলিত করব।
ইতোমধ্যে ৯৯ ভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি। কাজেই এ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে সকলেই পাবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘এই সময় প্রতিটি ঘর আমরা আলোকিত করব, আর সেই সাথে এদেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা, চিকিৎসা সেবা স্বাস্থ্যসেবা, এগুলোও যেন মানুষ পায় এবং সুন্দরভাবে মানুষ বাঁচতে পারে, মানুষ যেন মাথা উঁচু করে চলতে পারে। বিম্ব দরবারে বাঙালি জাতি মাথা উঁচু করে চলবে, সেটিই হবে আমাদের আজকের দিনের প্রতিজ্ঞা। যে সংগঠন জাতির পিতা গড়ে তুলেছিলেন মাতৃভাষা আদায়ের জন্য যে সংগঠন এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখে গেছে, যে সংগঠন এদেশের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথে অগ্রণী ভূমিকা নিচ্ছে সেই সংগঠনের নামেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। এই ছাত্রলীগ এগিয়ে যাবে, এটাই আমাদের কামনা।’

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের সারাদেশের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীদের প্রতি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান সাংগঠনিক অভিভাবক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

শিক্ষা শান্তি প্রগতির ঐতিহ্যবাহী ছাত্রসংগঠনটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গণভবন প্রান্ত এবং কেআইবি মিলনায়তনে প্রান্তে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটা হয়। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। এ ছাড়া মঞ্চে ১৯৮১ সাল থেকে বিগত সময়ে সাবেক হওয়া কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনা সভায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের সভাপতিত্ব করেন এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য সঞ্চালনা করেন। মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা।

আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর