ইংরেজি মাধ্যম স্কুলেও সব জাতীয় দিবস পালন করতেই হবে
৪ জানুয়ারি ২০২১ ১৮:৪৫
ঢাকা: দেশের সব ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে শিক্ষার্থীদের সেশন ফি বাতিলসহ কয়েকটি নির্দেশনা দিয়ে নীতিমালা তৈরির জন্য হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। তবে আপিল বিভাগ ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলোতে স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসসহ সব জাতীয় দিবসসমূহ যথাযথ মর্যাদায় পালনের নির্দেশনা বিষয়টি স্থগিত করেনি। এর ফলে ইংরেজি মাধ্যমের সব স্কুলে জাতীয় দিবস পালন করতেই হবে।
রোববার (৩ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলোর লিভ-টু-আপিল (আপিল গ্রহণের অনুমতি) গ্রহণ করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলোর পক্ষে ছিলেন মো. আসাদুজ্জামান। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী আনিসুল হাসান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস।
আদেশের বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করে সমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, ২০১৭ সালের ২৫ মে হাইকোর্ট ১৭ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দিয়েছিলেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরই লিভ-টু-আপিল করে গ্রিন ডেল ইন্টারনেশনাল স্কুল কর্তৃপক্ষ। আজ শুধু একটি নির্দেশনা ছাড়া বাকি ১৬টি নির্দেশনা স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ।
তিনি আরও বলেন, যে নির্দেশনাটি বহাল রাখা হয়েছে সেটি হলো— যথাযোগ্য মর্যাদায় এবং দেশীয় কৃষ্টি-সংস্কৃতির আবহে জাতীয় দিবস পালন করা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামসহ প্রখ্যাত বাঙালি কবি-সাহিত্যিকদের রচনাবলির সঙ্গে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের পরিচয় ঘটানোর নির্দেশনাও বহাল রাখা হয়েছে।
এর আগে, ২০১৭ সালের ২৫ মে দেশের সব ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষার্থীদের সেশন ফি বাতিল করে তিন মাসের মধ্যে ম্যানেজিং কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া বাংলা ভাষা ও দেশীয় সংস্কৃতি চর্চার ওপর জোর দিতেও নির্দেশ দেন আদালত। রায়ে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোতে স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসসহ সব জাতীয় দিবসসমূহ যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালনের নির্দেশও দেওয়া হয়।
বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সার্কুলার দিয়ে সব ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পাঠাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া আদালত রায়ে বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দেন।
রায়ের নির্দেশনাগুলো অন্যতম কয়েকটি হলো— বেসরকারি স্কুল নিবন্ধন অধ্যাদেশ ১৯৬২ অনুযায়ী স্কুলগুলোতে অভিভাবকসহ শিক্ষক প্রতিনিধি নিয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করতে হবে। শিক্ষক ও স্টাফ নিয়োগের ক্ষেত্রে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে যাচাই-বাছাই করে নিয়োগ দিতে হবে। ‘পেছনের দরজা দিয়ে’ কাউকে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। এতে মালিকপক্ষের কোনো প্রাধান্য থাকবে না। এক শ্রেণিতে থেকে অন্য শ্রেণিতে ওঠার সময় কোনো ধরনের পুনঃভর্তি ও সেশন চার্জ নেওয়া যাবে না। কোনো ধরনের ফি বাড়াতে হলে অভিভাবকদের মতামত নিয়ে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। ম্যানেজিং কমিটি ভর্তি ফি, টিউশন ফি নির্ধারণ করবে। এতে অভিভাবক প্রতিনিধির মতামত প্রাধান্য পাবে। সব প্রতিষ্ঠানের অডিট রিপোর্ট ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।
জাতীয় দিবসগুলোর যথাযথ মর্যাদায় পালনের পাশাপাশি দেশের সংস্কৃতি অনুযায়ী রবীন্দ্র-নজরুল, বঙ্গবন্ধুসহ স্বাধীনতায় আত্মদানকারীদের জীবনী নিয়ে অনুষ্ঠান করতে হবে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা বিষয়ে পড়া, লেখা ও বলায় বিশেষ গুরুত্ব দিতেও নির্দেশ দেন আদালত। পরে হাইকোর্টের এই রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে গ্রিন ডেল ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৪ সালে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জাভেদ ফারুক শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি, পুনঃভর্তি ফি ও সেশন ফি বিষয়ে শিক্ষা বিধিমালা গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। রিটে শিক্ষা সচিব, আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদফতরের মহাপরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ও দেশের সব ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল কর্তৃপক্ষকে বিবাদী করা হয়।
এই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত একই বছরের ২৩ এপ্রিল ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের প্লে গ্রুপ থেকে ‘এ’ লেভেল পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি, পুনঃভর্তি ফি ও সেশন চার্জ বিষয়ে কেন শিক্ষা বিধিমালা গঠন করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি, পুনঃভর্তি ফি ও সেশন চার্জ গ্রহণের ক্ষেত্রে বিবাদীদের মনিটরিং সেল গঠনের কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়।
ইংরেজি মাধ্যম স্কুল জাতীয় দিবস পালন সেশন ফি বাতিল হাইকোর্ট হাইকোর্টের নির্দেশনা